জাকাতের টাকা বন্যাদুর্গতদের দেওয়া যাবে কি না

৩১ আগস্ট, ২০২৪

বন্যাকবলিত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের ইমানি দায়িত্ব। ইসলাম মানবতার ধর্ম। এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপদগ্রস্ত হলে তাদের পাশে দাঁড়ানো, বিপদ মুক্তির জন্য সাহায্য করা ইসলামের শিক্ষা। 

তাদের দুর্দিনে আর্থিক সহায়তা, খাবার-দাবার, ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং চিকিৎসাসেবায় এগিয়ে আসা ইমানের দাবি। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের মতো অসহায়-দুর্গত মানুষদের সাহায্য করাও ইবাদত।

তবে এ ব্যয়, দান ও দয়া হতে হবে নিঃস্বার্থভাবে, অভাবী ও বিপন্ন মানুষের কাছ থেকে কোনোরকম প্রতিদানের আশা ছাড়া, কেবল আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য। যেমন আল্লাহতায়ালা সেদিকে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত এতিম ও বন্দিদের খাবার দান করে। 

মানুষের বিপদে এগিয়ে এসে তার জন্য খরচ করাকে মহান আল্লাহ বিনিয়োগ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আর তা তিনি বহুগুণ ফেরত দেওয়ার ওয়াদা করেছেন। 

এছাড়া মানবতার নবী মুহাম্মদ (সা.) সব সময় অসহায় ও বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতেন, তাদের প্রতি সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। মদিনার আনসার সাহাবিরা মুহাজির সাহাবিদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।

বন্যার্তদের সহায়তায় দেশ-বিদেশ থেকে সহায়তায় এগিয়ে আসছেন বিভিন্ন মানুষ। বিভিন্ন সেবা সংস্থার মাধ্যমে অর্থ সহায়তা প্রেরণ করছেন অনেকে। এর মধ্যেই অনেকে জানতে চেয়েছেন, বানভাসি মানুষদের জাকাতের টাকা দেওয়া যাবে কি না?

জাকাত আদায় হওয়ার জন্য শর্ত হল, উপযুক্ত ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেওয়া। যাতে সে নিজের খুশি মতো তার প্রয়োজন পূরণ করতে পারে। এরূপ না করে যদি জাকাতদাতা নিজের খুশি মতো দরিদ্র লোকটির কোনো প্রয়োজনে টাকাটি খরচ করে যেমন, তার ঘর সংস্কার করে দিল, টয়লেট স্থাপন করে দিল কিংবা পানি বা বিদ্যুতের ব্যবস্থা করল তাহলে জাকাত আদায় হবে না। (রদ্দুল মুহতার ২/২৫৭)

আল্লাহ তায়ালা জাকাতের খাত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তাই জাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। কেউ শুধু বন্যাদুর্গত হলেই জাকাতের খাত গণ্য হবে না। পাশাপাশি সে আল্লাহ কর্তৃক নির্দিষ্ট খাতের অন্তর্ভুক্ত কি না যাচাই করে নিতে হবে। অন্যথায় জাকাত আদায় হবে না।
 
৩ শর্ত পূরণ হলে বন্যাদুর্গতদের জাকাত দেওয়া যাবে
 
১. বন্যাদুর্গত ব্যক্তি যদি দরিদ্র বা ঋণগ্রস্ত হয় তাহলে তার জন্য জাকাত বা জাকাতের টাকার ত্রাণ গ্রহণ করা জায়েজ হবে এবং ত্রাণদাতার জাকাতও আদায় হয়ে যাবে।

২. সম্পদ ছিল কিন্তু বন্যায় ধ্বংস হয়ে গেছে -- এমন ব্যক্তিকে দিলেও জাকাত আদায় হয়ে যাবে।

৩. বন্যাদুর্গত ব্যক্তির সম্পদ আছে কিন্তু তার সম্পদ অনেক দূরে হওয়ায় এই দুর্যোগের সময় তা কোনো কাজে আসছে না। এমন ব্যক্তি ইবনুস সাবিল তথা সম্পদহীন মুসাফিরের হুকুমে। তাকে দান করলেও জাকাত আদায় হয়ে যাবে।
 
কোনো অমুসলিমকে জাকাতের টাকায় ত্রাণ দিলে জাকাত আদায় হবে না। কারণ, ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য অমুসলিমদের জাকাতের বিধান এখন রহিত। তাই অমুসলিমদের ত্রাণ দিলে সাধারণ দান-সদকার টাকা থেকে দিতে হবে। (শামি: ৩/৩৩৮)

বন্যাকবলিত বা যে কোনো দুর্যোগে নিপতিত মানুষকে জাকাতের টাকা দেওয়া যাবে, যদি তারা জাকাতের টাকা নেওয়ার জন্য উপযুক্ত হয়। একজন মানুষ বন্যায় কবলিত ও দুর্যোগে নিপতিত হওয়ার অর্থ এই নয় যে, তিনি জাকাতের হকদার। জাকাতের টাকা দিতে হলে, জাকাতের হকদার কী না এটা দেখে, জেনে দিতে হবে। অন্যথায় জাকাত আদায় হবে না।