দরুদের পর যে দোয়া পড়লে নবীজির শাফায়াত অবধারিত

৩১ আগস্ট, ২০২৪

রাসুলুল্লাহ (স.)-এর ওপর দরুদ ও সালাম মহান এক ইবাদত। এতে একইসঙ্গে নেকি লাভ হয় আবার গুনাহও মাফ হয়। হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে আমার ওপর একবার দরুদ পড়বে আল্লাহ তার ওপর ১০টি রহমত নাজিল করবেন, তার ১০টি গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং ১০টি দরজা বুলন্দ হবে।’ (নাসায়ি: ১/১৪৫; মুসনাদে আহমদ: ৩/১০২; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ২/৪৩)

আবার, কেয়ামতের দিন নবীজির শাফায়াতলাভের অনন্য মাধ্যম দরুদ ও সালাম। এক হাদিসে এসেছে, দরুদের পর একটি দোয়া পাঠ করলে অবশ্যই প্রিয়নবীজির শাফায়াত লাভ হবে। দোয়াটি হলো- اَللّهُمَّ أَنْزِلْهُ الْمَقْعَدَ الْمُقَرَّبَ عِنْدَكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আনজিলহুল মাক্বআদাল মুক্বাররাবা ইনদাকা ইয়াওমাল ক্বিয়ামাহ।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (স.)-কে কেয়ামতের দিন আপনার নিকটবর্তী মাকামে অধিষ্ঠিত করুন।’ রুওয়াইফে ইবনে ছাবিত আনসারি (রা.) বর্ণিত হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি সালাত প্রেরণ করবে এবং সাথে এই দোয়াটি পড়বে, তার জন্য আমার শাফায়াত অবধারিত হয়ে যাবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৬৯৯১; মুজামে কাবির, তবারানি: ৪৪৮০; আততারগিব ওয়াততারহিব: ২৬০৪; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১৭২৫৯)

দরুদের সঙ্গে মিলিয়ে দোয়াটি এভাবে পড়া যেতে পারে— اللهُمَّ صَلِّ على محمّدٍ وأَنْزِلْهُ الْمَقْعَدَ الْمُقرَّبَ عِندكَ يومَ القِيامَةِ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়াআনজিলহুল মাক্বআদাল মুক্বাররাবা ইনদাকা ইয়াওমাল ক্বিয়ামাহ।’ অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের নবী মুহাম্মদ (স.)-এর উপর রহমত নাজিল করুন এবং কেয়ামতের দিন তাঁকে আপনার নিকটবর্তী আসনে বসান।’

এমনিভাবে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে নবীজি (স.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি এই দরুদ পড়বে- اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ، وَّ عَلٰى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى إِبْرَاهِيْمَ وَآلِ إِبْرَاهِيْمَ، وَبَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ، وَّعَلٰى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى إِبْرَاهِيْمَ وَآلِ إِبْرَاهِيْمَ، وَتَرَحَّمْ عَلٰى مُحَمَّدٍ، وَّعَلٰى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا تَرَحَّمْتَ عَلٰى إِبْرَاهِيْمَ وَآلِ إِبْرَاهِيْمَ আমি কেয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করব এবং তার জন্য শাফয়াত করব। (আলআদাবুল মুফরাদ, বুখারি: ৬৪১)

আসলে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা উম্মতে মুহাম্মদির দায়িত্ব। কেননা যেই নবী পুরো সৃষ্টিজগতের জন্যই রহমতস্বরূপ, সেই নবীরই উম্মত আমরা। আর দরুদ ও সালামের মাধ্যমে যেহেতু নবীজির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ ও কল্যাণ কামনা করা হয়, তাই মহান আল্লাহ তাঁর নবীপ্রেমিকদের জন্য বিশেষ ফজিলতেরও ব্যবস্থা করেছেন। সেই ফজিলত কী, তা আল্লাহ তাআলা নবীজিকে জানিয়েও দিয়েছেন। আর নবীজি উম্মতকে এই ফজিলতের কথা বিভিন্ন হাদিসের মাধ্যমে অবগত করেছেন। হজরত আবুদ দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে শাফায়াত প্রসঙ্গে নবীজি (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি সকালে ১০ বার ‘সালাত’ প্রেরণ করবে এবং সন্ধ্যায়ও ১০ বার, কেয়ামতের দিন তার ভাগ্যে আমার শাফাআত জুটবেই! (আসসালাতুন নববিয়্যাহ, ইবনু আবি আসিম, হাদিস: ৬১; আলকাউলুল বাদি, পৃ. ২৬১)

এছাড়া আরো একাধিক হাদিসে দরুদ শরিফ পড়ার বিনিময়ে কিয়ামতে প্রিয়নবীর (স.) শাফাআতলাভের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।