শান্তি চুক্তির পথে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান

০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সম্ভাব্য একটি শান্তি চুক্তির কাছাকাছি থাকার কথা জানিয়েছে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান। দুই পক্ষই বলেছে, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দীর্ঘতম চলমান আঞ্চলিক দ্বন্দ্বগুলোর একটি শিগগিরই শেষ হতে যাচ্ছে। এই নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে গভীর আলোচনা চলছে। অনেকে বিষয়েই দেশ দুটি একমত হয়েছে। শনিবার (৩১ আগস্ট) মার্কিন রাজনেতিক পত্রিকা পলিটিকো এই খবর জানিয়েছে।

চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হলে দক্ষিণ ককেশাসে কয়েক দশকের সংঘাতের পরে শান্তি ফিরে আসবে। আর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই চুক্তিটি সম্পন্ন হওয়ার কাছাকাছি রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান।

শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে, আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান ঘোষণা করেন, শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আজারবাইজানকে একটি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে তার সরকার। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মূল বিষয়গুলোতে যথেষ্ট অগ্রগতি মূল্যায়নের পরই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

পাশিনিয়ান বলেছিলেন, ‘শান্তি চুক্তির সর্বশেষ খসড়ায় আমাদের ১৭টি নিবন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে প্রস্তাবনাসহ তেরোটির সঙ্গেই সম্পূর্ণরূপে আমরা একমত। সব সম্মত নিবন্ধ ও আলোচ্য বিষয়গুলো গ্রহণ করতে এবং এটিকে একটি শান্তি চুক্তি হিসেবে স্বাক্ষর করতে আমরা প্রস্তাব রেখেছি।’

এর আগে, দুই দেশের ভাগ করা সীমান্ত সীমানা নির্ধারণ ও সীমাবদ্ধ করার জন্য যৌথ সীমান্ত কমিশনে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দুই পক্ষের এমন ঘোষণার একদিন পরই শান্তি চুক্তি বিষয়ক এই বিবৃতিটি সামনে এলো।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আজারবাইজানের বিচ্ছিন্ন অঞ্চল নাগোর্নো-কারাবাখ ও আর্মেনিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্তের অভ্যন্তরে একাধিক সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে দুই প্রতিবেশী।

২০২২ সালের যুদ্ধের পর সীমান্তে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য আর্মেনিয়ায় একটি ইইউ পর্যবেক্ষণ মিশন মোতায়েন করা হয়। একইসঙ্গে দেশটি সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে সেখানে অবস্থানরত রুশ সীমান্তরক্ষীদের প্রত্যাহারের চাপও অব্যাহত রেখেছে।

পলিটিকোর সঙ্গে কথা বলার সময় আজারবাইজানের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান হিকমেত হাজিয়েভ নিশ্চিত করেন, দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। এসময় তিনি আরও বলেন, সীমান্ত কমিশনের চুক্তিকে ‘ইইউ কন্টিনজেন্ট প্রত্যাহারের জন্য যথেষ্ট হিসেবে দেখা উচিত।’

দেশটি ক্রমাগত ব্রাসেলসের মিশনের বিরোধিতা করেছে। তাদের যুক্তি, এটি সংঘাতের ঝুঁকি বাড়ায়।গত সেপ্টেম্বরে নাগোর্নো-কারাবাখ পুনরুদ্ধারের জন্য একটি হামলা শুরু করেছিল আজারবাইজান। এই অঞ্চলটি ইউএসএসআর-এর পতনের পর সংঘটিত একটি যুদ্ধের পর থেকে জাতিগত আর্মেনিয়ান জনগোষ্ঠীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। রুশ শান্তিরক্ষীদের সাহায্যে পার্বত্য অঞ্চলের এক লাখ বাসিন্দাদের সবাইকে আর্মেনিয়ায় পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।

মস্কোর প্রভাবের ক্ষেত্র থেকে দূরে সরে যাওয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আর্মেনিয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ব্রাসেলসও আজারবাইজানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। রুশ জ্বালানির ওপর নির্ভশীলতা কমানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে জীবাশ্ম জ্বালানী সমৃদ্ধ দেশগুলো থেকে গ্যাস রফতানি বাড়ানোর একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে ২০২২ সালে বাকুতে উড়ে এসেছিলেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন।