যেসব আমলে রিজিক বাড়ে

০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

মহান আল্লাহ পৃথিবীর সব প্রাণীর রিজিকের ব্যবস্থা করেন। তিনি সর্বোত্তম রিজিকদাতা। তিনি যাকে ইচ্ছা তার রিজিক বৃদ্ধি করেন। আবার যাকে ইচ্ছা তার রিজিক সংকুচিত করেন। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের এমন কিছু বর্ণনা রয়েছে, যেগুলোতে রিজিক বৃদ্ধির আমল সম্পর্কে বলা হয়েছে। সেগুলো তুলে ধরা হলো। 

তওবা-ইসতেগফার করা : তওবা-ইসতেগফার করার মাধ্যমে বান্দার রিজিক বাড়ে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে উন্নতি দান করবেন, তোমাদের বাগবাগিচা এবং নদীনালা দান করবেন।’ (সুরা নুহ ১০-১২)

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাগাতার তওবা-ইসতেগফার করবে, মহান আল্লাহ তাকে সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (আবু দাউদ)

আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা : যেসব আমলে রিজিক বাড়ে সে সবের মধ্যে তাকওয়া-পরহেজগারি অবলম্বন করা এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা অন্যতম। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আর যে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করবেন, যার কল্পনাও সে করতে পারবে না।’ (সুরা সাদ ৩৫)

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথার্থভাবে ভরসা রাখো, তিনি তোমাদের সেভাবে রিজিক দান করবেন, যেভাবে তিনি পাখিদের দান করে থাকেন। পাখিরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় (খালি পেটে) বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে বাসায় ফেরে।’ (তিরমিজি)

হজ-ওমরাহ পালন : হজ ও ওমরাহ পালন করার দ্বারা রিজিক বৃদ্ধি হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা লাগাতার হজ ও ওমরাহ পালন করতে থাকো। কারণ এর দ্বারা এমনভাবে অভাব ও গুনাহ দূরীভূত হয় যেমনভাবে কামারের হাপর লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা দূর করে দেয়।’ (তিরমিজি)

আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা : রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম আমল হচ্ছে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা। আত্মীয়ের সঙ্গে সদাচরণ করতে এবং তাদের হক যথাযথভাবে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন মহান আল্লাহ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং আয়ু দীর্ঘ করা হোক, সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’ (সহিহ বুখারি)

আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা : আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় তথা দান-সদকা করার দ্বারা রিজিক বাড়ে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় করো তিনি তার বিনিময় দেবেন। তিনিই উত্তম রিজিকদাতা।’ (সুরা সাবা ৩৯)

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা : যেসব কাজকর্ম বা আমলে রিজিক বাড়ে, তার মধ্যে অন্যতম হলো, মহান আল্লাহ যেসব নেয়ামত দান করেছেন, সে সবের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার দ্বারা নেয়ামত বৃদ্ধি পায়। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের (নেয়ামত) বাড়িয়ে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আজাব বড় কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম ৭)

অসহায়ের প্রতি সদয় হওয়া : গরিব-অসহায় মানুষের প্রতি সদয় হলে রিজিক বাড়ে। রাস্তাঘাটে গরিব-অসহায় মানুষকে হাত বাড়াতে দেখলেই সবাইকে এক পাল্লায় মেপে খারাপ আচরণ করা থেকে বিরত

থাকতে হবে। মহান আল্লাহ পবিত্র ইরশাদ করেছেন, ‘তাদের (ধনী লোকদের) সম্পদে ভিক্ষুক ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সুরা জারিয়াত ১৯) রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে থাকা দুর্বলদের কারণে তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক প্রদান করা হয়।’ (সহিহ বুখারি)

আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া : মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলে রিজিক বাড়ে। আমরা এমন এক স্রষ্টার সৃষ্টি, যিনি চাইলে খুশি; না চাইলে অখুশি। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা মুমিন ৬০)

রিজিক অর্জনের চেষ্টায় থাকা : মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (জমিনে) ছড়িয়ে পড়ো, আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো। যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমা ১০) মহান আল্লাহ আমাদের এই আমলগুলোর মাধ্যমে কল্যাণকর রিজিক দান করুন।