ছাত্র আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি, তালিকায় যে ৯২ পুলিশ কর্মকর্তা

০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে পুলিশ। এতে অন্তত এক হাজার মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার আহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) গুলি চালানোর ঘটনায় সরাসরি অংশ নেওয়া ও নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অন্তত ২৭৬টি মামলা হয়েছে। এরই মধ্যে পুলিশের সাবেক দুই আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক এবং চৌধুরী আবদুল্লাহ-আল-মামুনকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। পুলিশের বর্তমান ও সাবেক আরও অন্তত ৯২ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হতে পারেন।

সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে যাদের নামে

সাবেক আইজিপি শহীদুল হকের নামে ৭টি ও চৌধুরী আবদুল্লাহ-আল-মামুনের নামে ৩৬টি মামলা আছে। সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি (সাবেক এসবিপ্রধান) মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১১টি এবং সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা হয়েছে। সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ৩৩টি, সাবেক র‌্যাব ডিজি হারুন-অর-রশীদের নামে ৫টি এবং ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তারের নামে ৬টি মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া ডিএমপি ডিবির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ ৩৭টি, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার ২৭টি, এস এম মেহেদী হাসান ৮টি এবং ওয়ারী বিভাগের সাবেক ডিসি ইকবাল হোসাইন ৮টি মামলার আসামি হয়েছেন।

ডিএমপির সাবেক কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক, সিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া, সাবেক অতিরিক্ত আইজি লুৎফর কবির, জামিল আহম্মেদ, র‌্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, সিটিটিসির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান, সিটিটিসির যুগ্মকমিশনার কামরুজ্জামান, সাবেক ডিআইজি রিপন সরদার, অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জেয়াদ্দার, যুগ্মকমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মারুফ হোসেন সরদার, ডিএমপি ডিবির যুগ্মকমিশনার সঞ্জিত কুমার রায়, ডিএমপি ডিবি রমনা বিভাগের সাবেক ডিসি মোহাম্মদ আশরাফ ইমাম, সাবেক ডিসি (হেডকোয়ার্টার্স) তানভির সালেহীন ইমন, অতিরিক্ত ডিআইজি (সাবেক ডিবি ডিসি) মতিউর রহমান, ডিবির সাবেক ডিসি রাজিব আল মাসুদ, মাহফুজুল আল রাসেল, জাহিদুল তালুকদার, মতিঝিলের সাবেক ডিসি হায়াতুল ইসরাম, উত্তরার সাবেক ডিসি আশরাফুল আজিম, ডিসি এইচএম আজিমুল হক, হাফিজু আল ফারুক, মাহাবুব-উজ-জামান, জাফর হোসেন প্রমুখ।

নুরুল আমিন, গোবিন্দ চন্দ্র, শাহেন শাহ, হাফিজ আল আসাদ, মুহিত কবির সেরনিয়াবাত, শহিদুল ইসলাম, জুয়েল রানা, হাসান আরাফাত, নাজমুল ইসলাম, সাব্বির রহমান, আফজাল হোসেন টুটুল, ফজলে এলাহী, রওশানুল হক সৈকত এবং শাকিল মোহাম্মদ শামীম।

রেফাতুল ইসলাম রিফাত, শাহীনুর রহমান, শহীদুল হক, মিজানুর রহমান ও তানজিল আহমেদ গোলাম রুহানী। তালিকায় সাবেক যেসব ওসির নাম আছে তাদের মধ্যে আছেন আমিনুল ইসলাম, শাহীনুর রহমান শাহীন, খন্দকার হেলাল উদ্দিন, মাহাবুব রহমান, ফরমান আলী, মাহফুজুল হক ভূঁইয়া, শিকদার মো. শামীম হোসেন, সেলিমুজ্জামান, মাজহারুল ইসলাম, পলয় কুমার সাহা এবং আতিকুর রহমান মসিউর রহমান।

তালিকায় থাকা পুলিশ পরিদর্শকরা হলেন

নাজমুল হাসান রণজিত রায়, মেহেদী হাসান, ফায়োত উদ্দিন রক্তিম, জাকির হোসেন, আতিকুল হক, রবিউল ইসলাম, মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন এবং আবুল বশার। এসআই পদমর্যাদার যেসব পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের মধ্যে বেশি মামলা অমিতাভ দর্জির বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা হয়েছে।

এ ছাড়া গুলশান থানার এসআই মামুন মাতব্বরের বিরুদ্ধে ৩টি এবং শাহবাগ থানার এসআই আশরাফুল সিকদারের বিরুদ্ধে ২টি মামলা হয়েছে। একটি করে মামলা হয়েছে এসআই শাহাদাৎ আলী, কাউসার আহম্মদ খান, নূরে আলম মিয়া, মাসুম বিল্লাহ, মো. বশির, রাজিব চন্দ্র সরকার এবং মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে। রায়েরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এএসআই শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় একটি এবং কোতোয়ালি থানায় কর্মরত তিন কনস্টেবলের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মাইনুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘একসময় মানুষ মনে করতেন, মামলা হলেই আসামি গ্রেপ্তার করতে হবে। এটা ঠিক না।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশের যেসব সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের সবাইকেই গ্রেপ্তার করা হবে, তা ঠিক না। আমরা মামলার অভিযোগগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করছি। প্রাথমিক তদন্ত চালাচ্ছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যাবে, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।’