মুসলিম মানসে রবিউল আউয়ালের মহিমা

০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

রবিউল আউয়াল হিজরি সনের তৃতীয় মাস। ‘রবি’ অর্থ বসন্তকাল, ‘আউয়াল’ মানে প্রথম; ‘রবিউল আউয়াল’ মানে হলো প্রথম বসন্ত বা বসন্তকালের প্রথম মাস। প্রিয়নবী (স.)-এর বহুমাত্রিক স্মৃতিধন্য এই মাস মানবসভ্যতার ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে। মুসলিম মানসে এই মাস শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও মহিমায় পরিপূর্ণ।

এ মাসেই সাইয়িদুল মুরসালিন, খাতামুন নাবিয়্যিন হজরত মুহাম্মদ (স.) পৃথিবীতে আগমন করেন। প্রসিদ্ধ বর্ণনামতে, সেই দিনটি ১২ রবিউল আউয়াল। (সিরাতে ইবনে হিশাম, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৫৮)

আবার এ মাসেই তিনি তাঁর ওপর অর্পিত রিসালাতের দায়িত্ব পালনশেষে নিজ প্রভুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে এই নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায় গ্রহণ করেন এবং মহান আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্যে গমন করেন। সেই দিনটিও ছিল ১২ রবিউল আউয়াল। (আস-সিরাহ আন-নববিয়্যাহ: ৪/৫০৯, ফাতহুল বারি: ৮/১৩০)

তবে, রবিউল আউয়াল মাসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো পরিপূর্ণ জীবন বিধান। আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম ইসলামকে পূর্ণাঙ্গরূপে সর্বস্তরে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সব আল্লাহদ্রোহী শক্তিকে সম্পূর্ণভাবে নাস্তানাবুদ করে ইসলামের সাম্য ও ন্যায় সগৌরবে প্রতিষ্ঠা করা। আর এটাই নবী বা রাসুল প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য; যা পবিত্র কোরআনে বারবার বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই তাঁর রাসুলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি এটাকে সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করতে পারেন। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা ফাতহ: ২৮)

ইসলামের গতিপথ পরিবর্তনকারী আরেকটি মহান ঘটনা হলো হিজরত। যেই হিজরতের পরতে পরতে রয়েছে উম্মতের জন্য শিক্ষা, সেই হিজরতও রবিউল আউয়ালেই সংঘটিত হয়েছিল। ‘সোমবার ১২ রবিউল আউয়ালে নবীজি কুবায় পৌঁছেছিলেন। ১৪ দিন থাকার পর মসজিদে কুবা প্রতিষ্ঠা করে তিনি মদিনায় দিনদুপুরে পৌঁছেন।’ (ইবনে কাসির, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খণ্ড ৩, পৃ-১৮৮)

রবিউল আউয়াল মাসের প্রতি সর্বস্তরের মুসলমানের আবেগ জড়িত। কেউ নবীজির শুভাগমনকে গুরুত্ব দিয়ে মিলাদুন্নবী (স.) পালন করেন। আবার কেউ নবীজীবনের ঘটনা ও কর্মগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে সীরাতুন্নবী (স.) পালন করেন। 

এখানে উল্লেখ না করলেই নয় যে, নবীজির আগমন পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে মধুরতম দিন হলেও তাঁর রেখে যাওয়া পরিপূর্ণ দ্বীন ইসলামকে অবহেলা করার সুযোগ নেই। কারণ আল্লাহকে পেতে রাসুলুল্লাহ (স.)–এর আদর্শ অনুসরণ করা জরুরি। অর্থাৎ রাসুলে আকরাম (স.) যা যা করেছেন বা করতে বলেছেন, তা করতে হবে। আর যা করেননি বা করতে বারণ করেছেন, তা বর্জন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের ঘোষণা, ‘যা দিয়েছেন তোমাদের রাসুল (স.), তা তোমরা ধারণ করো; আর যা থেকে তিনি বারণ করেছেন, তা হতে বিরত থাকো।’ (সুরা হাশর: ৭) আরও বলা হয়েছে, ‘বলুন (হে রাসুল!) যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসবে, তবে আমার অনুকরণ করো; আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।’ (সুরা আলে ইমরান: ৩১)

নবীজির জন্মদিন পালনে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রোজা রাখা সওয়াবের কাজ। আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.)-কে সোমবারের রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘সেদিন আমি জন্মেছি এবং সেদিন আমার প্রতি ওহি অবতীর্ণ হয়েছে।’ (মুসলিম: ২৮০৭) অতএব, নবীজির জন্মদিনকে কেন্দ্র করে কেউ কোনো আমল করতে চাইলে সোমবারে রোজা রাখতে পারেন। কোরআন-সুন্নাহর সঙ্গে মিলে না—এমন কোনো আমল সওয়াবের আশায় করা বিদআত ও নাজায়েজ।