ছাত্র-জনতার ওপর বাংলাদেশের মানুষের আস্থা রয়েছে: সারজিস আলম

০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ছাত্র-জনতার ওপর বর্তমান বাংলাদেশের মানুষের যে আস্থা রয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর সেই আস্থা নেই বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম।

রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মুন্সীগঞ্জ সরকারি হরগঙ্গা কলেজে গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণায় শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ, দুর্নীতি-চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।

সারজিস আলম বলেন, ছাত্র-জনতার ওপর বর্তমান বাংলাদেশের মানুষের যে আস্থা রয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর সেই আস্থা নেই। বাংলাদেশের এত এত মানুষ আমাদের ওপর যে আস্থা রেখেছে এখন সময় হয়েছে তার প্রতিদান দেওয়ার। বিগত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল তাদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছে ফ্যাসিবাদী সরকারকে অপসারণ করতে, তারা কি পেরেছে? বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঈদের পর, পূজার পর বিভিন্ন প্রোগ্রাম দিয়ে চেষ্টা করেছে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের জন্য কিন্তু তারা পারেনি।

সারজিস আলম বলেন, আমরা আন্দোলনের সময় যেভাবে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, আপনাদের সেভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বিগত ১৬ বছরে সরকার যে কাজগুলো করেছে, যেভাবে আমাদের বোনদের ওপর নির্যাতন করেছে, আমাদের ভাই-বোনদের ওপর গুলি ছুড়েছে, রাস্তায় যেভাবে পশুপাখির মতো মানুষ মেরেছে, ট্রাকে করে ময়লার মধ্য দিয়ে আমাদের নিয়ে গেছে ওই ডকুমেন্টসগুলো আপনাদের সংরক্ষণ করতে হবে। একটি জিনিস মনে রাখবেন, ওই ফ্যাসিস্ট সরকার আপনাদের ইথিক্সগুলো ভুলিয়ে দিতে চাইবে। আপনি যদি এগুলো ভুলে যান তাহলে তারা আবার ক্ষমতায় বসতে পারবে। একটি জিনিস আপনাদের মনে রাখতে হবে, আগামী দিনে যারা শাসন করবে যারা রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেবে আবার যারা সরকার কায়েম করতে চাইবে তারা বৈষম্য আন্দোলনের ওই স্মৃতিগুলো মুছে দিতে চাইবে। আপনাদের কাজ হবে একটি ডকুমেন্টের মাধ্যমে হলেও আপনাদের সঙ্গে, আপনাদের পরিবারের সঙ্গে যা হয়েছে তা লিপিবদ্ধ করে রাখা।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বাবা-মায়েরা সারা জীবন আমাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ডাক্তার হতে হবে, ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। এই সমাজে যে পেশাগুলোর মর্যাদা আছে সেগুলো হতে হবে। আমাদের বাবা-মা কিংবা আমাদের অভিভাবকরা এই স্বপ্ন দেখাননি যে আমাদের ভালো রাজনীতিবিদ হতে হবে। আপনি বাংলাদেশে থেকে যা কিছু করেছেন, যে দায়িত্বগুলো পালন করছেন, যে নীতি সংবিধানে আছে, যে রুলস আপনি মেনে চলেন তার প্রত্যেকটি নির্ধারণ হয় ওই জাতীয় সংসদ থেকে। ওই জাতীয় সংসদে যারা বসে থাকেন তারা একজন রাজনীতিবিদ। সেই রাজনীতির জায়গায় যদি ভালো মানুষগুলো না যায় আপনি বাংলাদেশে যাই হন না কেন আপনাদের ওই খারাপ মানুষগুলো দ্বারা পরিচালিত হতে হবে। সেই জায়গা থেকে আপনি যদি চান দেশ ভালো চলুক তাহলে আপনাকে রাজনীতি করতে হবে, নাহয় আপনাকে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হতে হবে। দিনশেষে রাজনীতির বাইরে কিছুই নেই।

ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এই সমন্বয়ক বলেন, আমরা যখন আন্দোলন করেছি তখন আমরা দেখেছি কে এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড এই শব্দটা বারবার উচ্চারিত হয়েছে। আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড যেই হোক না কেন, এই আন্দোলনে যারাই সম্পৃক্ত ছিল তারা পৃথিবীর গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়েছে, জেনেছে তারপর আগামী দিনের প্রোগ্রাম কীভাবে সেট করতে হবে সেটা সেট করেছে। জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন করেও আমাদের সরাতে পারেনি। আমার সামনে যারা আগামীর বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম বসে আছেন আপনাদের কাছে অনুরোধ, আপনারা সময়ের প্রয়োজনে রাস্তায় নামবেন, সময়ের প্রয়োজনে ইটপাটকেল ছুঁড়বেন, প্রয়োজনে রাজপথে নেতৃত্ব দেবেন কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে স্টুডেন্ট অবস্থায় আমাদের প্রত্যেকের প্রধান কাজ হচ্ছে আমাদের লেখাপড়া।

এ সময় উপস্থিত থেকে আরও বক্তব্য দেন সমন্বয়ক আব্দুল তাওসিফ রোহান, ইব্রাহিম নিরব, সামিয়া মাসুদ মম, আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়ন, মোবাশ্বিরুজ্জামান হাসান মৃধা, শ্যামলী সুলতানা জেদনী প্রমুখ।

এর আগে বিভাগীয় ও জেলা সফরের অংশ হিসেবে আজ সকালে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলমের নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৪ সদস্যের একটি দল মুন্সীগঞ্জে আসেন। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শহরের একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহিংসতায় নিহত তিনজনের পরিবারের সদস্যসহ আন্দোলন কর্মসূচিতে ঢাকায় নিহত ছয়জনের পরিবারের সদস্য ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং খোঁজখবর নিয়ে সমবেদনা জানান। পরে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় শেষে মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজে মতবিনিময় করেন।

উল্লেখ্য, গত ৪ আগস্ট মুন্সীগঞ্জের সুপার মার্কেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মুন্সীগঞ্জ শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার কাজী মতিনের ছেলে রিয়াজুল ফরাজি, আলী আকবরের ছেলে মোহাম্মদ সজল ও সিরাজ সরদারের ছেলে নূর মোহাম্মদ ডিপজল। আহত হন অর্ধশতাধিক মানুষ।