রংপুরে সরকারি গুদাম থেকে কোটি টাকার চাল-গম উধাও

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

রংপুর সদর সরকারি খাদ্য গুদামে থাকা কোটি টাকা মূল্যের চাল ও গম আত্মসাৎ করার অভিযোগে ওসি এলএসডি (খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা) কানিজ ফাতেমার বিরুদ্ধে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সদর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র সরকার বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অন্তরা মল্লিক। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরপরই গা ঢাকা দিয়েছেন খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও সদর এলএসডির একাধিক কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, কানিজ ফাতেমা রংপুর সদর এলএসডি গুদামের প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে দেড় বছরেও বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি কোটি টাকা মূল্যের চাল ও গম কালোবাজারে বিক্রি করে পুরো টাকা আত্মসাৎ করেন। বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে তিনি ও খাদ্য গুদামের অন্য কর্মকর্তারা ধামাচাপা দিয়ে আসছিলেন। সরকারি খাদ্য গুদামের চাল ও গম লোপাট করার ঘটনা বেশ কিছুদিন ধরে কানাঘুষা চলে আসলেও ওসি এলএসডি হিসেবে কানিজ ফাতেমা বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে ধামাচাপা দিয়ে আসছিলেন।

এদিকে সদর উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা হিসেবে কানিজ ফাতেমাকে কুড়িগ্রামে বদলি করা হয় তার স্থলে দায়িত্ব পান নুরন্নবী বাবু। কিন্তু বদলির আদেশ পাওয়ার পরও কানিজ ফাতেমা তার দায়িত্ব হস্তান্তরে গড়িমসি শুরু করলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অন্তরা মল্লিকের সন্দেহ হয়। তিনি গত ২ সেপ্টেম্বর রংপুর সদর এলএসডির খাদ্য গুদামের খাদ্য মজুতের পরিমাণসহ সার্বিক বিষয় তদন্ত করার জন্য তারাগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রইছ উদ্দিনকে আহ্বায়ক পীরগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অমুল্য সরকারকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন।

তদন্ত কমিটি গুদামের মজুত-সহ সার্বিক বিষয় তদন্ত করতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ চাল ও গমের মজুত কম পান। তারা পুরো বিষয়টি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে জানিয়ে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সদর খাদ্য গুদামের খাদ্য মজুতের পরিমাণসহ সার্বিক বিষয় তদারকের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের জন্য দাবি জানিয়ে লিখিতভাবে জানান। কিন্তু জেলা প্রশাসনে ম্যাজিস্ট্রেট সংকট থাকায় আবারও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তদন্ত কমিটিকেই মজুতসহ সার্বিক বিষয় তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়। তদন্ত কমিটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করে সদর খাদ্য গুদামে ১৪৪ মেট্রিক টন এবং ৭৪৪ কেজি চাল এবং ৩১৭ কেজি গম কম পান। যার আনুমানিক মূল্য কোটি টাকারও বেশি।

বিপুল পরিমাণ চাল ও গম খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা অন্যান্য কর্মকর্তাদের সহায়তায় কালোবাজারে বিক্রি করে আত্মসাৎ করেছেন মর্মে নিশ্চিত করে গত ১২ সেপ্টেম্বর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।

এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী মাসে অন্তত দুবার উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সরেজমিনে খাদ্য গুদামে এসে খাদ্যের মজুত ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা। বর্তমান সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিখিল চন্দ্র সরকার ৬ মাস ধরে রংপুর সদর খাদ্য গুদামের তদারককারী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ৬ মাসে ১২ বার তার খাদ্য মজুতের পরিমাণ নিশ্চিত হওয়ার কথা। কিন্তু তিনিও খাদ্য কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমার দ্বারা ‘ম্যানেজ’ হয়েছেন। তা না হলে আরও আগেই এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার কথা। এ ছাড়াও গত এক বছরে যারা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন তারাও একইভাবে ‘ম্যানেজ’ হয়েছেন অথবা চাল ও গম আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক রইছ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি নিবিড়ভাবে খাদ্য মজুত পরিস্থিতি ও পরিমাণ পরীক্ষা করে কোটি টাকা মূল্যের চাল ও গম কম পেয়েছেন। যা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। পুরো বিষয় তাদের প্রতিবেদন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে লিখিতভাবে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে সদর খাদ্য গুদামের কোটি টাকা মূল্যের চাল ও গম আত্মসাতের খবর জানাজানি হওয়ার পর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা গা ঢাকা দিয়েছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর মেট্রোপলিটান কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি (তদন্ত) শাহ আলম সরদারের সঙ্গে রবিবার বিকালে তার সরকারি মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক দফতর থেকে আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তবে এটি দুদক শিডিউলভুক্ত হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমার দুদক রংপুর কার্যালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।’