নেটওয়ার্কের মান বাড়াতে টাওয়ার শেয়ারে গুরুত্বারোপ

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

মোবাইল নেটওয়ার্কের মানোন্নয়নে টাওয়ার স্বল্পতা নিরসনে টারওয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আন্তশেয়ারিংয়ে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে টাওয়ারে সোলার প্যানেল ও সীমান্তে নেটওয়ার্ক ঠিক রাখতে ক্রসবর্ডার পররাষ্ট্র নীতি জোরদার ও নাগরিক পর্যায়ে তরঙ্গ তেজস্ক্রিয়তা ভীতি দূর করার ওপর করেছেন গুরুত্বারোপ করেছেন তারা।

মঙ্গলাবর (১৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের ‘মোবাইল নেটওয়ার্কের মানোন্নয়নে টাওয়ার স্বল্পতা নিরসনে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।  

সভায় উপস্থাপিত তথ্যচিত্রে ই-ডটকোর সহযোগী ব্যবস্থাপক মাসুদা হোসেন বলেন, প্রতি মাসে একজন গ্রাহক ছয় জিবি ডাটা ব্যবহার করেন। আগামী চার বছর পর এটি ১৭ জিবিতে পৌঁছবে। এই চাহিদা পূরণে ৪৪ হাজার টাওয়ার রয়েছে। সম্ভাব্য চাহিদা মেটাতে আরও ১২ হাজার টাওয়ার লাগবে। এটি বাড়ানোর জন্য টাওয়ারগুলোকে বহুমুখী ব্যবাহরের স্মার্ট হাইটেক নীতিমালা এবং বহুপক্ষীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি বাধা দূর করা দরকার।

এসময় ইক্যুইপমেন্ট আমদানি সহজতর হওয়া ও ৫ বছরের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা ও এনওসি সহজিকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

আলোচনায় সোলার ইলেকট্রো কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বি এম মজিবুর রহমান টাওয়ারে সোলার প্যানেল বসানোর জন্য ভার্টিক্যাল মডেল ব্যাবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, সোলারপ্যানেল স্থাপনে লিথিয়াম ফসফেট ও লিথিয়াম আয়ন ব্যবহার করলে দীর্ঘ সময় সাপোর্ট দেবে।

টাওয়ার নির্মাণ কাজে ঠিকাদারদের পক্ষে আব্দুল বাতেন খান অভিযোগ করে বলেন, তারা ২০০ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু ১৫০ কোটি টাকা আটকে আছে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির মাধ্যমে। ২১ দিনের মধ্যে টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও ৬ মাসেও তাদের বিনিয়োগ ফেরত দিচ্ছে না টাওয়ার কোম্পানিগুলো। জিপি ও ফ্রন্টিয়ার তাদের টাকা আটকে রেখেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। 

এ নিয়ে বিটিআরসিতে নালিশ করে কোনো লাভ না পাওয়া অভিযোগ করে এ বিষয়ে হার্ড লাইনে গেলে তাদের দোষারূপ না করার আহ্বান জানান তিনি।

প্রতি উত্তরে টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোকে দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগ পরামর্শক হোসেন সাদাত বলেন, পৃষ্ঠপোষকতা করার কোনো সুযোগ নেই। ফ্রন্টিয়ারের দায় আইনগত ভাবে আমরা নিতে পারি না। তারা কাজ দিলে চুক্তির ৬০ শতাংশের বেশি পূরণ করতে পারে না। ক্ষমা চাই, কিন্তু আমরাও তো বিনিয়োগকারীদের কাছে দায়বদ্ধ। কিন্তু কোনো কাজই আমরা ঝটপট করতে পারি না। বিটিআরসি নিয়ম বেধে দেয়, একটি টাওয়ার কোম্পানির সাথে ৩০ শতাংশের বেশি রোলআউট করা যাবে না।

টাওয়ার ভেন্ডরদের জন্য আইনগত কোনো সমাধান নেই উল্লেখ করে, ঢাকা শহরের অনেক জায়গায় টাওয়ার স্থাপন করতে চায়লেও সেটা তৈরি করা যায় না বলে জানান হোসেন সাদাত।

প্যারালাল টাওয়ার ও টাওয়ার শেয়ারে অনীহার বিষয়ে অভিযোগ করে এই খাত ম্যাচিউর হওয়ার আগেই প্রতিযোগিতা জুড়ে দেওয়ায় মহৎ উদ্দেশ্যগুলো ভেস্তে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করে ব্যারিস্টার শাহেদ আলম। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

ব্যান্ডইথ পড়ে থাকার বিষয়টি বায়বীয় একটি বিষয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ব্যান্ডউইথ কেনার সময় ২৪ ঘণ্টার হিসাব ধরে পিক আওয়ার হিসেবে ব্যান্ডউইথ ধার্য করতে হয়। তাই বিদ্যুতের মতো ব্যান্ডউথও ধরে রাখা যায় না। আর অব্যবহৃত তরঙ্গ ব্যবহারে নতুন প্রযুক্তি লাগবে। এ মুহূর্তে রোল আউট করা সম্ভব নয়।

সভাপতির বক্তব্যে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, তরঙ্গ তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গণমানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে ভ্রান্ত ধারণা ও ভুল কন্টেন্ট কমাতে হবে। একইসঙ্গে টাওয়ার শেয়ার করার প্রবণতা বাড়াতে হবে। সরকারের উদাসীনতা কাটিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিটিআরসির সংস্কার করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় দেশের মোবাইল অপারেটর, টাওয়ার স্থাপন প্রতিষ্ঠান এবং টাওয়ার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন টেলিটক বাংলাদেশের ডেপুটি ম্যানেজার এস এম মাসুম, কীর্তনখোলা টাওয়ার্স লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার এহতেশাম খান, ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী তাজিরীন আলম; টাওয়ার নির্মাণ কাজে ঠিকাদারদের পক্ষে আব্দুল বাতেন খান, সামিট টাওয়ার্স লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজার অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স আদনান শাহরিয়ার, গ্রামীণফোনের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর হোসেন সাদাত, রবির করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহেদ আলম, প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক খালেদ আবু নাসের ও বিটিইআরসির সাবেক সদস্য মকবুল ই এলাহী।