কক্সবাজারে বাবার সামনে ছেলেকে গুলি করে হত্যা

০৮ অক্টোবর, ২০২০

কক্সবাজার সদর উপজেলায় বাবার সামনেই তার সন্তানকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সামাজিক অনুষ্ঠানে গান গেয়ে বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) সকালে বাড়ি ফেরার পথে কক্সবাজারের ঈদগাঁও-ঈদগড়-বাইশারি সড়কের হিমছড়ি ঢালায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত জনি দে রাজ (২০) রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের চরপাড়ার (শিয়াপাড়া) এলাকার তপন দের ছেলে। জনি ঈদগাঁও কলেজ থেকে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে গান করতেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঈদগড় ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আলমগীর হোসেন জানান, ঈদগাঁও থেকে ঈদগড় আসার পথে হিমছড়ি ঢালায় সিএনজিবাহী যাত্রীরা ডাকাত দলের কবলে পড়েন। এ সময় ডাকাতের গুলিতে কণ্ঠশিল্পী জনি নিহত হয়। সড়কটি দিয়ে পার্বত্য নাইক্ষংছড়ি, রামু ও কক্সবাজার সদরের তিন উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের লোকজনকে চলাচল করতে হয় বলেও জানান তিনি।

পুলিশ ও জনির সঙ্গে থাকা তার বাবা তপন দে জানান, বুধবার রাতে জেলার চকরিয়ায় একটি অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন জনি দে। বৃহস্পতিবার সকালে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে জনি ও তার বাবা চকরিয়া থেকে বাড়ির পথে রওনা হন। সকাল আটটার দিকে অটোরিকশাটি ঈদগাহ-ঈদগড়-বাইশারি সড়কের হিমছড়ি ঢালায় পৌঁছালে মুখোশধারী কয়েকজন গাড়িটির গতিরোধ করেন। এরপর জনিকে গুলি করে তারা জঙ্গলে চলে যান।

নিহত জনির বাবা তপন দের ভাষ্য, মুখোশধারী ব্যক্তিরা কাউকে কিছু না বলে শুধু জনিকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে গুলি করেন। তার মৃত্যু নিশ্চিত হলে তারা জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যান। তার সন্দেহ, এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারণ, দুর্বৃত্তরা তাকে (বাবা) ও অটোরিকশা চালককে কিছু বলেননি বা তাদের সঙ্গে কিছু করেননি।

অন্য আরেকটি সূত্র বলছে, ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের হিমছড়ি ঢালায় পৌঁছামাত্র ১০-১৫ জনের সশস্ত্র ডাকাত দল তাদের গতিরোধ করে। তারা জনি রাজকে অপহরণ করার চেষ্টা চালায়। এ সময় তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে জনি। তখন তাকে এবং অন্যদেরকে প্রহার করে ডাকাতদল। ধস্তাধস্তি হাতাহাতিতে রূপ নিলে একপর্যায়ে জনির মাথার ডানপাশে গুলি করে পাহাড়ের ভেতর ঢুকে যায় ডাকাতদল। জনিকে উদ্ধার করে ঈদগাঁও মেডিক্যাল নামে একটি ক্লিনিকে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আবদুল হালিম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কক্সবাজার জেলার পুরো পুলিশ টিমই নতুন। ঈদগাঁও তদন্ত কেন্দ্রে আসা সকল পুলিশ সদস্য এখানকার জন্য নতুন। সবখানে চিনে উঠতে বেগ পেতে হচ্ছে। নতুন জায়গায় এসে আমি নিজেসহ অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের হিমছড়ি এলাকাটিতে সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পুলিশ পাহারা থাকত জানতে পেরে সেভাবেই পুলিশ টহল চালু রয়েছে। তবে, সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশ টহল শুরুর আগে সিএনজি পেয়ে দুর্বৃত্তরা অ্যাটাক করেছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, খবর নিয়ে জেনেছি এর আগেও নিহত জনি রাজের ওপর হামলা করেছিল দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার তাকে অপহরণ করতে চেয়েছিল বলে প্রকাশ পেয়েছে। পূর্ব কোনো ঘটনার জেরে এটা হলো কিনা তাও খতিয়ে দেখছি আমরা। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।

রামু থানার ওসি কে এম আজমিরুজ্জামান বলেন, গুলিতে ওই কণ্ঠশিল্পী জনির মৃত্যু হয়েছে। তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। দোষীদের ধরতে সেখানে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। ডাকাতের গুলিতে তার মৃত্যু হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।