স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দাড়িয়ে কিছু কথা

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দাড়িয়ে কিছু কথা

আবু জাফর

আবু জাফর-

বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম সম্ভাবনাময় স্বাধীন  দেশ। বাংলাদেশর দীর্ঘ পথচলাটা সুগম ছিল না। ৪৭ সালের দেশ ভাগ, ৫২ তে ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের পর আপামর বাঙালির মন মস্তিকে যে বিষয়টি দানা বেঁধেছিল তা হল একটি স্বাধীন দেশ। প্রায় ২০০ বছর ইংরেজদের গোলামি তারও আগে মোগল-তুর্কিদের হাতে বন্দী হয়ে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছিল এদেশ বাসিদের প্রাণ। নিজ জাতিসত্তাকে বিশ্ব দরবারে কিভাবে তুলে ধরা যায় এই ছিল স্বাধীন হওয়ার লক্ষ্য। আর স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আজকের এই দিনে দাড়িয়ে আমরা দেখতে পারি বাংলাদেশ আকাশে উড্ডীন হয়েছে স্যাটেলাইট, প্রমত্ত পদ্মার বুক চিরে গড়ে উঠেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। মেট্রোরেল আর রূপপুর পারমাণবিক বিদুৎ কেন্দ্র। দেশের চলমান মহামারী করোনা ভইরাস মোকাবিলা। এগুলোকেই মোটা দাগে বাংলাদেশের সাফল্য বলা যায়। বিশ্বের দরবারে আমাদের মাথা উঁচু করার কারণ বলা যায়। 

বাংলাদেশ তার সুবর্ণ জয়ন্তীর এই সময় মনে পরে যায় স্বাধীন বাংলার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। স্বাধীন বাংলাদেশের অভুদ্যয়ের প্রত্যেকটি অঙ্গনে বঙ্গবন্ধুর সফল পদচারণা। সময়ের পরিক্রমায় বিশ্বের নানা দেশের নামের সাথে যুক্ত হয়েছে স্বাধীন নামক অভিধা। যুগের পর যুগ উপনিবেশ, দখলদারিত্বে থাকার পর পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছে তারা। জর্জ ওয়াশিংটনের সাথে আমেরিকার ইতিহাস যেমন জড়িয়ে নেপোলিয়নের সাথে ফ্রান্স ও হো চি মিনের সাথে ভিয়েতনামের ঠিক তেমনি শতাব্দীর পর শতাব্দী নবাবী-মুঘল, ইংরেজ-পাকিস্তানী শাসকদের  অত্যাচারের পর একটি স্বাধীন বাংলাদেশের সাথে বঙ্গবন্ধু নাম তেমনি জড়িত। এ দেশ কে স্বাধীন করার জন্য নিজ জীবনের অধিকাংশ সময় তার কেটেছে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে।

বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় গুণ ছিল বাঙালিদের আবেগ-অনুভূতি তিনি সহজেই বুঝতে পারতেন। তাইতো তার ৬৬র ছয় দফা থেকে ৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থাণ ও একাত্তরের ৭ মার্চ ভাষনে উঠে আসে গণ মানুষের অন্তরের কথাগুলোই। তবে এর ভিতরেই তাকে বহন করতে হয় পাকিস্তানিদের "বিচ্ছিন্নতাবাদী" ও অতি বামপন্থীদের" স্বাধীনতা বিরোধী" তকমা। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান আসামী হিসেবে জেলখাটা সহ স্বাধীন বাংলা হওয়া পর্যন্ত ইতিহাসের প্রতি মোড়ে-মোড়ে ছিল তার ভূমিকা।  একাত্তরে বাংলাদেশ ছিল বিশ্ব রাজনৈতিক মঞ্চের অন্যতম প্রধান আলোচিত ও আলোড়িত বিষয়। আর বিশ্ব মোড়লদের চোখ নিবন্ধ ছিল ৫ ফুট ১১ ইঞ্চির বঙ্গবন্ধুর উপর। তাদের দূরদৃষ্টিতে ধরা পরেছিল অপরিচিত বাংলার বাইগার তীরে বেড়ে উঠা এই মুজিবই হয়ে উঠবে স্বাধীন বাংলার ত্রাণকর্তা। 

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে আামদের ব্যর্থতার ঝুড়িও কম নয়। বঙ্গবন্ধুর খুদা ও দারিদ্র্য বাংলাদেশ পেতে আরো বহু বসন্ত পেরুতে হবে। জনগনের অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন উপাত্তে থেকে জানা যায় এদেশ থেকে মাত্র ১৪ দিনের ব্যবধানে স্বাধীন হওয়া মধ্যেপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত উন্নতির তুলনায় বাংলাদেশের উন্নয়ন নগন্যই। একই সময় স্বাধীন হলেও বহু বাংলাদেশি আজ কাজের সন্ধানেই আরব আমিরাত ভ্রমণ করে। 

কত-শত ইতিহাস মিশে আছে এই স্বাধীনতার সাথে, এই স্বাধীনতার জন্যই শহীদ আজাদের মা ভাতে হাত দেননি আমৃত্যু ১৪ বছর পর্যন্ত। যে বঙ্গবন্ধু সহজেই যে কোন বড় পদ পেতে পারত, কিন্তু তার বিপরীতে গ্রহণ করেছিলেন প্রায় ১৪ বছরে জেলের নির্যাতন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুশাসন, মুক্ত পরিবেশ, অর্থবহ গণতন্ত্র, সাম্প্রদায়িকতা-সম্প্রীতির জন্য আর কতকাল লালায়িত থাকবে প্রিয় ভূমি? বীরের এ রক্তস্রোত, মায়ের এ অশ্রুধারা, তা যেন ধরার ধুলায় হারিয়ে যেতে পারে না তার শপথ আপামর বাংলার জনমানুষদেরই নিতে হবে। 

পাশ্ববর্তী ভারত আজ তার ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র ভুলে গিয়ে হিন্দুত্ববাদীর দিকে, মায়ানমার প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে একটি সামরিক রাষ্ট্র। ঠিক সে সময়েই বাংলাদেশে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহিত করছে অভ্যন্তরীন নানান ঝড়-ঝাপটা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পিতা স্বাধীন বাংলার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গত শতকে নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করেছিলেন ভারত জুড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার নিষ্ঠুরতা-হত্যাযজ্ঞ আর লুটতরাজ। তাই তিনি এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে দেশটি হবে সব ধর্মের মানুষের জন্য উম্মুক্ত। তিনি ধর্মের প্রতি বিধি নিষেধ আরোপ করেননি। বরং রাষ্ট্রীয় ও সমাজিকভাবে সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। তারই প্রেক্ষিতে বলা যায় ৯০ ভাগ মুসলমানের ক্ষেপানো কখোনই কাম্য নয়। তাদের না ক্ষেপালেই তারা শান্ত থাকবে তথা শান্ত থাকবে স্বদেশ। আর তাদের যারা ক্ষেপায় সে সব সুবিধাবাদিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। এ দেশকে বার বার পিছুটান দেয় দফায়-দফায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তন কখোন বা সামরিক শাসন সহ বিভিন্ন ইস্যু। আর তাই এ জাতির বৃহত্তর কল্যান সাধন করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পঞ্চাশ বছরের অভিজ্ঞতা বলে এ জনপদের মানুষগুলো শান্তিপ্রিয়, তারা দিন শেষে শান্তি চায়। আর এই শান্তির জন্য দরকার এমন এক সম্প্রতির অবস্থা তৈরি করা যেখনে সবাই সবার জায়গা থেকে স্বদেশের স্বার্থকে উঁচু করে সব কাজ করবে। তাহলে আমরা পাব সর্গের সুখ, স্বপ্ন পূরন হবে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়