শ্রমিকের ঘাম শুকানোর পূর্বে গুলি না করে মজুরি দাও

শ্রমিকের ঘাম শুকানোর পূর্বে গুলি না করে মজুরি দাও

রুদ্র ইকবাল

 রমজান মাস! কুমিল্লা শহরে টিউশন ছিল তাই ক্যাম্পাস থেকে কুমিল্লা শহরে যাওয়া। টিউশন শেষ করে ক্যাম্পাসে ফিরব তাই গাড়ির জন্য অপেক্ষা করা। হটাৎ চোখ দু'টো আটকে যায়, টপটপ করে ঘাম বেয়ে পড়া, প্রায় ৮-১০ টি ইট কাধে নিয়ে যাওয়া, ঘামে কাপড়-চোপড় ভিজে যাওয়া এক ব্যক্তির দিকে, পরিচয় একজন শ্রমিক। ঘামে কাপড়-চোপড় ভিজবেই তো কাঠফাটা রোদ, বিশ্রামহীন পরিশ্রম তো ঘাম ঝড়াবেই।

হটাৎ মনে হলো, সম্ভবত সপ্তম শ্রেণিতে পড়েছিলাম, পৃথিবী একটি থালা। চারটা হাতি চার কোনায় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনে পড়তেছে না ঠিক হাতি নাকি অন্য প্রাণি। তবে সে ধারণা নিতান্তই ভুল, কারণ এই পৃথিবী মূলত দাড়িয়ে আছে শ্রমিকদের কাধের উপর ভর করে। সভ্যতার এত উত্থান, সব জায়গায় আমি শ্রমিকের ঘাম দেখতে পাই, দেখতে পাই শ্রমিকের রক্ত, দাঁড়িয়ে থাকা স্তম্ভ গুলো যেন চকচক করতেছে ভেজা ঘামে। শেষমেষ একটা সিএনজি আসল, ক্যাম্পাসে আসলাম। কিছুক্ষন পর ফেইসবুক স্ক্রল করতে গিয়ে দেখলাম, চট্টগ্রামের বাশখালিতে পুলিশের গুলিতে ৫ জন নিহত, আহত অনেকেই। নিস্তব্ধ হয়ে রইলাম বেশ কিছুক্ষণ।

পাখি শিকারের মত এখন শ্রমিক শিকার করে তারা। স্তম্ভিত! ঠিক কি চেয়েছিল শ্রমিকরা? হয়তো দুমুঠো ভাতের জন্য নিজেদের ঘামের মূল্য চেয়েছিল, কিন্তু বুলেট উপহার পেল তারা।

রাষ্ট্র এবং সমাজের চোখে নিতান্ত এক অবহেলিত পণ্যের নাম শ্রমিক। হ্যাঁ, পণ্যই। সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা গুলো উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। লকডাউন, হাহাকার। যেন এক বিস্তৃত মরুভূমি। নিজেদের এবং পরিবারের খাবারের জন্য বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামে কিছু রিক্সাওয়ালা। বাবার বয়সী রিকশাওয়ালাদের লাঠি দিয়ে আঘাত কিংবা রিকশা ভেসে ফেলা ভিডিও গুলো বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠে। ছেলের বয়সী পুলিশের কাছে আর্তনাদ করে চাইল যেন রিকশাতে কোন আঘাত না করে।

রিকশা ভাঙার সময় গুলোতে পাশ দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে সমাজের এলিট শ্রেণীর বাহন, কার সহ বিভিন্ন গাড়ি। আচ্ছা বাদ দিন, এর আগে একটু যাওয়া যাক, করোনাকালীন সময়ে গার্মেন্টস শ্রমিকদের উপর কি আচরণটা'ই না করল মালিকরা। চারদিকে বন্ধ শুধু গার্মেন্টস খোলা। গার্মেন্টস বন্ধ হলেও আবার বেতন নাই। আহ! পাটকলের শ্রমিকরা! মনে আছে? এই তো কয়েকদিন আগে মজুরি সহ ৭ দফা দাবিতে আন্দোলন করল।

শ্রমিক আহত হল, ঘর-দুয়ারে পুলিশের হুমকি গেল, গ্রেফতার হল। রানা প্লাজা! অনেক বছর হয়ে গেল। সেই ট্রাজেডি। এখনো পর্যন্ত শ্রমিকরা কি তাদের ক্ষতিপূরণ পেয়েছে? পাইনি। পুরো দেশে শ্রমিক আন্দোলন শ্রমিকরা লাঠির আঘাত, বুলেট পেয়েছে। আজ পহেলা মে। আনুষ্ঠানিক ভাবে পালিত হবে শ্রমিক দিবস।

অবহেলিত শ্রমিকরা অনেকেই কিলবিল করে হাসবে শ্রমিকদের মজুরি না দেওয়া বক্তার শ্রমিক দরদী বক্তব্য নিয়ে। রাসূল সা. এর হাদিস, শ্রমিকের ঘাম শুকানোর পূর্বে মজুরি প্রদান করো। বাস্তবে দেখা যায় তার উল্টো চিত্র, এই সমাজের ভূপতিরা শ্রমিকদের পরিশ্রম করিয়ে ঘাম ঝরায়, মজুরির জন্য আবার চোখের পানি এবং রক্ত ঝরায়। শ্রমিকপ্রেমী একটি সমাজ হোক।

 লেখক : শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।