আসন্ন বাজেটে শিক্ষাখাতে যেমন বরাদ্দ প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের

আসন্ন বাজেটে শিক্ষাখাতে যেমন বরাদ্দ প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের

আসন্ন বাজেটে শিক্ষাখাতে যেমন বরাদ্দ প্রত্যাশা করছে ইবি শিক্ষার্থীরা-

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩ জুন) জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হতে যাচ্ছে ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট। এবারের বাজেটে ব্যয় ধরা হচ্ছে ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। পূর্বের বাজেট থেকে ৩৫ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা বেশি। সংসদে আলোচনা পর্যালোচনার পর আগামী ৩০ জুন নির্দিষ্টকরণ আইন পাশের মাধ্যমে এই বাজেট চূড়ান্তভাবে পাশ হবে।

বাজেট প্রস্তুতির শুরু থেকেই চলছে ব্যাপক আলোচনা পর্যালোচনা। বাজেটে কোন খাতে কম আর কোন খাতে বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন তা নিয়ে নিজেদের প্রত্যাশা ও বিশ্লেষণ জানাচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বরাবরই মতো এবারও বাজেট আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে শিক্ষাখাতের বরাদ্ধ। করোনায় বিপর্যস্ত শিক্ষাখাতকে স্বাভাবিক ধারায় ফেরাতে বড় বরাদ্দের প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

আসন্ন বাজেটে শিক্ষা ও গবেষণা খাতের বরাদ্দ নিয়ে কেমন প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের? বাজেট নিয়ে কী ভাবছেন তারা? ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের  মতামত ও প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুনজুরুল ইসলাম নাহিদ

রাকিবুল ইসলাম, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, 'প্রতিবছরের মতো এবছরও সরকার নতুন বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে। বরাবরের মতোই বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের দাবি গবেষণা খাতে বরাদ্ধ বৃদ্ধি। এখনো গবেষণার জন্য  সরকারি যে ফেলোশিপগুলো দেওয়া হয় সেই ২০ বছরের আগের কাঠামো অনুযায়ী এবং আগের পরিমণেই, যা এই আধুনিক যুগের সাথে কোনভাবেই মানানসই নয়। প্রকৃতপক্ষে গবেষণার জন্য যা বরাদ্দ রাখা হয় তা একেবারেই অপ্রতুল। নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা না করে এসকল যায়গায় গবেষণার জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করলে এই বাজেট দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর হবে। এ ছাড়া এবছরের বাজেটে আমার প্রত্যাশা ছিন্নমুল মানুষের জন্য একটা বড় বরাদ্দ রাখা হোক। যেমন- টোকাই, হিজড়া এবং সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী যারা মুলধারা থেকে অনেক দূরে, তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর উদ্যোগ গ্রহণ।'

আখতার হোসেন আজাদ, লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, 'দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতের বাজেট একত্রে করা হয়। এটি কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন উঠে। ক্রমান্বয়ে এই যৌথ খাতের বাজেট বৃদ্ধি পেলেও শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষকদের বেতনভাতা বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়া শিক্ষাক্ষেত্রের কোনো উন্নয়ন হয়নি। গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি দিয়ে গবেষণাগারকে সমৃদ্ধ করা হয়নি।
শিক্ষাব্যবস্থার প্রকৃত উন্নয়নের জন্য শিক্ষাখাতে আলাদা বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। যুগপৎ গবেষণার জন্য গবেষণায় যুগসম্মত বরাদ্দ দিতে হবে।'

শ্যামলী তানজিম অনু, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে শিক্ষাখাতে যে অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে আসন্ন বাজেটে তার প্রতিফলন চাই। করোনায় শিক্ষাকে বেশ গুরুত্বহীনতার মধ্যে রাখা হয়েছে তাই আসন্ন বাজেটে শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার দাবি জানাই। ইউনেস্কোর পরামর্শ অনুযায়ী একটি দেশের শিক্ষা বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের ন্যূনতম ২০ শতাংশ হওয়া জরুরি। যা জিডিপি আকারে ৬ শতাংশ হবে। কিন্তু বাজেটে তা মানা হয়না। শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়বে কিন্তু কতো শতাংশ বাড়বে তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আমরা মনে করি, একটি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করা আবশ্যক। যে সমস্ত শিক্ষার্থী পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে তাদের পুনরায় শিক্ষাক্ষেত্রে ফিরিয়ে আনতে একটি আর্থিক প্রণোদনা ব্যবস্থা করা অতিব জরুরি। তবে শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই হবে না, সেটার উপযুক্ত ব্যয় হওয়ার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার জোর দাবি জানাই।'

এস এ এইচ ওয়ালী উল্লাহ, আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, 'শিক্ষা ও গবেষণাকে মানবসম্পদ উন্নয়নের হাতিয়ার বিবেচনা করা হয়। যা আমাদের নীতিনির্ধারকদের অজানা নয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের জাতীয় বাজেটে তার প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায় না। জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ মাত্র ০.৯২%। ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য মোট জিডিপির ৭% শিক্ষায় বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। কিন্তু তথ্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ইত্যাদি খাতের সাথে শিক্ষাকে সংযুক্ত করে শিক্ষা খাতের বাজেট জনসম্মুখে সর্বোচ্চ দেখালেও মূলত তা মোট জিডিপির দুই থেকে আড়াই শতাংশের মধ্যেই থাকছে প্রতিবার। যা নিঃসন্দেহে ৪ কোটি শিক্ষার্থীর মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণার জন্য অপ্রতুল।
দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি বিনির্মাণ করতে গুণগত শিক্ষা ও গবেষণা বান্ধব বাজেট প্রণয়ন একান্ত কাম্য।'

হুমাইরা আনজুম অন্তু, ল' এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, 'দীর্ঘ ১৪ মাসশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ দেশের প্রায় ৪০% শিক্ষাকার্যক্রম একেবারেই স্থগিত; এমনকি সমস্ত শিক্ষাব্যবস্থা হুমকির মুখে পতিত হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আসন্ন বাজেটে কমপক্ষে ১৫%-২০% বাজেট বরাদ্দ করা অত্যাবশ্যক। শিক্ষাখাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ প্রয়োজনের অপ্রতুল এবং এত বিশাল ক্ষতি পোষাতে যথেষ্ট নয়। বহু বছর ধরেই শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের দাবি জানিয়ে আসছিলেন অনেক শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ। তবে কোনো সরকারই বাজেটে তাদের দাবি আমলে নেয়নি। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও বাজেটে শিক্ষা খাতে কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ না থাকা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। জনশক্তিকে জনসম্পদে পরিণত করতে হলে শিক্ষায় বরাদ্দ যেমন বাড়াতে হবে তেমনি সেই বরাদ্দ কীভাবে খরচ হচ্ছে সেটিও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সর্বোপরি বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবছর আসন্ন বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দকৃত অংকের পরিমাণ অনেকাংশে বৃদ্ধি খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ।'

ফারজানা আফরিন অনু, সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, 'এবারের বাজেটে শিক্ষা, গবেষণা ও চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ অনেকাংশে বাড়ানো প্রয়োজন। করোনায় দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখনো এই রোগের বিস্তার রোধ করা সম্ভব হয়নি। তাই সামনের দিনে শিক্ষা খাতকে দাড় করাতে চাইলে বড় বরাদ্দ প্রয়োজন। অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নসহ নতুন করে শিক্ষা ও গবেষণা পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে হবে যে জন্য বড় বাজেট আবশ্যক। অন্যান্য দেশ করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন তৈরীসহ নানা গবেষনা করলেও আমাদের দেশে তেমন কিছুই হচ্ছেনা। এর বড় কারণ গবেষণায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকা। তাই গবেষণা খাতে বাজেট বরাদ্দ পূর্বের তুলনায় বাড়াতে হবে। এ ছাড়াও আগামী দিনে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাজেট বাড়ানো দরকার।'