মমতা এবার দিল্লি দখলের লড়াইয়ে!

মমতা এবার দিল্লি দখলের লড়াইয়ে!

মমতা এবার দিল্লি দখলের লড়াইয়ে!

এই প্রথম সাড়ম্বরে ২১ জুলাইয়ের অনুষ্ঠানকে পশ্চিমবঙ্গের চৌহদ্দির বাইরে সারা দেশে ছড়িয়ে দিল তৃণমূল কংগ্রেস। করোনাকালে তৃণমূলের সবচেয়ে বড় এই ইভেন্টে মমতা ব্যানার্জি ভার্চুয়াল ভাষণ দিলেন। আর সেই ভাষণ দেখানোর ব্যবস্থা করা হলো দিল্লি, ওড়িষ্যা, আসাম, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, ত্রিপুরা, গুজরাটের মতো রাজ্যগুলোতে। উত্তরপ্রদেশে বারাণসী ছাড়াও বরেলি, আজমগড়, মির্জাপুরে মমতার ভাষণ বড় স্ক্রিনে দেখানো হয়েছে।

এই প্রথম দিল্লিতে সংসদের বাইরে মমতার ভার্চুয়াল ভাষণ বড় স্ক্রিনে তৃণমূলের সাংসদদের সাথে বসে শুনেছেন ও দেখেছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম, মধ্যপ্রদেশের সাবেক কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিং, এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার, তার মেয়ে সুপ্রিয়া সুলে, সমাজবাদী পার্টির নেতা ও মুলায়ম সিং যাদবের ভাই রামগোপাল যাদব, আরজেডি’র মনোজ ঝা, ডিএমকে’র তিরুচি শিবা, টিআরএসের কে কেশব রাও, আপ সাংসদ সঞ্জয় সিং এবং অকালি দলের নেতা বলবিন্দর সিং।এই প্রথম মমতার ভাষণ ভিন রাজ্যের মানুষ যাতে বুঝতে পারেন, তার জন্য সেখানে অনুবাদের ব্যবস্থা করা হলো। মমতা নিজেও বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ও হিন্দিতে বলেছেন।

এই প্রথম ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে টার্গেট করে বিরোধী দলগুলোকে সাথে নিয়ে নিজেকে ও তৃণমূলকে জাতীয় স্তরে তুলে এনে নরেন্দ্র মোদিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর কাজটা করলেন মমতা। তিনি যে মোদিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চাইছেন, এদিনের অনুষ্ঠান থেকে তা স্পষ্ট। মোদির লোকসভা কেন্দ্র বারাণসী ও প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য গুজরাটকে বেছে নিয়ে সেখানে মমতার ভাষণ শোনাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর ২১-এর ভাষণেও মমতা আক্রমণ করেছেন মোদিকে। এই সবের মধ্যেই ভোটকৌশলী প্রশান্ত কিশোর বা পিকের পরিকল্পনার ছাপ স্পষ্ট।

মমতা বলেছেন, ‘২০২৪-এর নির্বাচনের প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করতে হবে। এখনই ফ্রন্ট করতে হবে। রোগী মরে গেলে ডাক্তার ডেকে কোনো লাভ নেই।’শারদ পাওয়ার, চিদম্বরমদের প্রতি মমতার আবেদন, ‘আপনারা একটা বৈঠক ডাকুন। আমি আগামী সপ্তাহে দিল্লি যাচ্ছি। তখন বৈঠক হলে আমিও যোগ দিতে পারব।’

মমতার দাবি, ‘সকলের ফোন ট্যাপ করা হচ্ছে। পেগাসাস দিয়ে। তাই আমি কারোর সাথে কথা বলতে পারছি না। ওরা নিজের মন্ত্রীদের ফোনও ট্যাপ করছে। কাউকে বিশ্বাস করে না।’সুপ্রিম কোর্টের কাছে তার আবেদন, ‘আপনারা নিজের থেকে পেগাসাস নিয়ে শুনানি শুরু করুন।’

এমন নয় যে, এই প্রথমবার দিল্লির রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে চাইছেন মমতা। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়ও তিনি একই চেষ্টা করেছিলেন। তবে বিশেষ সাফল্য পাননি। তবে সেবার বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দিয়েছিল কংগ্রেস। এবার মমতা সেই জায়গাটা নেয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি নিজেকে মোদির বিরুদ্ধে বিরোধী মুখ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন। এটা সেই লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ।

তিনি ঘোষণা করেছেন, বিরোধীরা ক্ষমতায় এলে গরিবদের বিনা পয়সায় খাদ্যশস্য দেয়া হবে। পশ্চিমবঙ্গে কী কী জনকল্যাণমূলক কাজ করেছেন, তার বিস্তারিত বিবরণও দেন তিনি। তার দাবি, গুজরাট নয়, পশ্চিমবঙ্গই হলো উন্নয়নের মডেল।মমতা পুরো ভাষণেই মোদি, বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করেছেন। কখনো পেগাসাস নিয়ে, কখনো করোনা নিয়ে।মমতা বলেছেন, ‘রাজ্যে রাজ্যে খেলা হবে। বিজেপি যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন খেলা হবে।’

তবে দল হিসেবে তৃণমূল এখনো শুধু পশ্চিমবঙ্গের চৌহদ্দিতে সীমাবদ্ধ। এর আগে জাতীয় দল হওয়ার চেষ্টা তারা করেছিল। পারেনি। ত্রিপুরায় তৃণমূল ভেঙে গেছে। উত্তরপ্রদেশে আগে তাদের বিধায়ক ছিল। এখন নেই। ঝাড়খণ্ডসহ কয়েকটি রাজ্যেও তারা সংগঠন তৈরি করতে চেয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। তবে তৃণমূলের এখন ফর্মুলা হলো, যে রাজ্যে যার জোর সে লড়বে, অন্যরা যতটা সম্ভব তাদের সমর্থন করবে।

জাতীয় দল বলতে এখন প্রকৃত অর্থে বিজেপি ও কংগ্রেস ছাড়া আর কেউ নেই। সিপিএমের প্রভাব কমতে কমতে শুধু কেরালায় সীমাবদ্ধ। অন্য কয়েকটি রাজ্যে তারা জোট করে বা নিজেদের চেষ্টায় কোনোমতে একটা আসন পায়। এনসিপি, বিএসপি’র প্রভাবও সীমাবদ্ধ জায়গায়। কংগ্রেসও অস্তিত্ব বাঁচানোর লড়াইয়ে নেমেছে। এই সুযোগে জাতীয় দল না হয়েও মোদির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে চাইছেন মমতা।

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় তিনি মোদিকে হারাতে পেরেছেন। লোকসভার ক্ষেত্রে পারবেন কি? দুটো লড়াই সম্পূর্ণ আলাদা। ক্ষেত্র অনেক বড়। সমীকরণ আলাদা। প্রথমে মমতাকে বিরোধীদের সবগ্রাহ্য নেতা হিসেবে উঠে আসতে হবে। সেই কাজটাও কঠিন। সেসব জেনেই চেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি কতটা সফল হবেন তা ভবিষ্যৎ বলবে।তৃণমূল যখন দেশজুড়ে শহিদ দিবস পালন করছে, তখন বিজেপিও কলকাতা ও দিল্লিতে শহিদ দিবস পালন করেছে। ভোট পরবর্তী হিংসায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের স্মরণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিজেপি।

সূত্র : ডয়চে ভেলে