বেকারত্বের অবসান হোক

বেকারত্বের অবসান হোক

জাহিদ হাসান (নয়ন)

বেকারত্ব সত্যিই একটা মহাসমস্যা। বিশেষ করে বেকারদের নিকট। এলেন উইলকিনস বলেছেন,“বেকারত্ব রাজনৈতিক দলের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর এটা একটা জাতীয় সমস্যা।” এই জাতীয় সমস্যাকে দূর করতে হলে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বেকার সমাজের সুবিধার কথা ভাবতে হবে। এ জন্যই জিল চার্চিল বলেছিলেন,“বেকারত্ব দূরীকরনের সবচেয়ে বড় উপায় হলো বেকারদের সুবিধাগুলোকে হ্রাস করা।”

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে লক্ষ করলে দেখা যায় শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ক্রমেই বর্ধিত হচ্ছে। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে ,বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিতদের  প্রায় অর্ধেকই বেকার। কাজের বাজারের চাহিদার সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থা সংগতিপূর্ণ না হওয়ায় দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।প্রতিবছরই উচ্চশিক্ষা নিয়ে শ্রমবাজারে আসা শিক্ষার্থীদের প্রায় অর্ধেক বেকার থাকছেন অথবা যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছেন না। বিশ্ব খ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট-এর ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,বর্তমান বাংলাদেশের ৪৭% স্নাতকই বেকার। দক্ষিণ এশিয়ায় এর চেয়ে বেশি উচ্চশিক্ষিত বেকার আছেন কেবল আফগানিস্তানে,৬৫%। এর বাইরে ভারতে এর হার ৩৩%,নেপালে ২০%-র বেশি,পাকিস্থানে ২৮%  এবং শ্রীলঙ্কায় ৭.৮%।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠনের (আইএলও) তথ্য মতে,বর্তমানে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। এ সংস্থাটির মতে বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০ টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান ১২ তম। বেকারত্ব দূরীকরণের লক্ষ্যে সরকার নানারকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তন্মধ্যে কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থার দিকে দৃষ্টি দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা,বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)উপাত্ত অনুযায়ী ১৬ কোটি ৫৭ লাখ। এটি বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ। আর এ জনসংখ্যা কোন সমস্যা নয়,যদি জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করা যায়। এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করার ব্যাপারে সরকার বদ্ধপরিকর।তবে শিক্ষা ব্যবস্থায় যদি কিছুটা পরিবর্তন করা যায় তাহলে দেশের বেকারত্ব হ্রাস পাবে। যে সকল ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের পছন্দের সাবজেক্ট নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সমাপ্ত করছে ,তাদের সেই শাখায় চাকরির ক্ষেত্র প্রস্তুত করলে ভালো হয়। তাহলে আমরা আমাদের দেশে দক্ষ শিক্ষক,দক্ষ ডাক্তার,দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার,দক্ষ ব্যাংকার ইত্যাদি পাব। আর এর জন্য প্রতিটা বিশ^বিদ্যালয়  (সেটা হোক জাতীয় বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠান)আলাদা একটা কোর্স রাখলে ভালো হয়। যেখানে একজন দক্ষ শিক্ষক দিয়ে শুধু জবের বিষয়ে পাঠ দান করানো হবে। তাহলে একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীরা অন্য বিষয়েও দক্ষ হয়ে উঠবে। এটা করলে তারা উপকৃত হবে। কারণ আমাদের দেশে একাডেমিক পড়া-লেখা শেষ করে নতুন করে,নতুনভাবে জবের জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। একজন হত দরিদ্র মায়েরও স্বপ্ন থাকে,তার সন্তান পড়ালেখা সমাপ্ত করে ভালো একটা সরকারি চাকরি লাভ করুক। কিন্তু দারিদ্র্যের কষাঘাতে পিষ্ট হয়ে সে আশা অনেক সময় হতাশায় পরিণত হয়।

চাকরির পরীক্ষার সকল পরীক্ষা রাজধানী শহর ঢাকা কেন্দ্রীক হয়ে থাকে। এতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা অনেকের জন্য ব্যয়বহুল এবং কষ্টসাধ্য। যদি পরীক্ষাগুলো প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে নেওয়া সম্ভব হয় তাহলে বেকার সমাজের জন্য সুবিধা হয়। শিক্ষিত কর্মহীন মানুষদের সম্পর্কে অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন-

“বেকারত্বের চাঁদরে মোড়ানো মুখগুলো বাকশক্তিহীন।

কোথাও মেলেনা মনোবল,চাহনিতে পরিহাস।

সবশেষে এ অন্ধকারে মা একমাত্র আশ্বাস।”