ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ-ইন্সটাগ্রামে আসলে কী ঘটেছিল?

ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ-ইন্সটাগ্রামে আসলে কী ঘটেছিল?

ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ-ইন্সটাগ্রামে আসলে কী ঘটেছিল?

সোমবার রাতে থেকে ছয় ঘণ্টার জন্য বিশ্বের ব্যবহারকারীরা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ বা ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করতে পারেননি।ওয়েবসাইট বা স্মার্টফোন কোন ডিভাইস দিয়েই ফেসবুকের মালিকানাধীন এই মাধ্যমগুলোতে ঢোকা যাচ্ছিল না।ডাউনডিটেক্টার নামে যে প্রযুক্তি দিয়ে এই মাধ্যমগুলোর ব্যবহার ট্র্যাক করা যায়, তারা জানিয়েছে, তাদের দেখা এটাই সবচেয়ে বড় বিভ্রাট।

কী কারণে এরকম ব্যাপক সমস্যার মুখে পড়েছে ফেসবুক?

একটি বিবৃতিতে ফেসবুক এই সমস্যার জন্য কারিগরি ত্রুটিকে দায়ী করেছে।সংস্থাটি ওই বিবৃতিতে সমস্যার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছে।ফেসবুক বলছে, যে ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের সঙ্গে ফেসবুকের তথ্যভাণ্ডারের সংযোগ তৈরি হয়, সেই সিস্টেমের (ব্যাকবোন রাউটার) কনফিগারেশনে কিছু পরিবর্তন করার কারণে বিশ্বব্যাপী এই সমস্যার তৈরি হয়েছে।নেটওয়ার্ক ট্রাফিকে সমস্যা তৈরি হওয়ার কারণে ফেসবুকের তথ্যভাণ্ডারের (ডাটা সেন্টার) সঙ্গে যোগাযোগে সমস্যা তৈরি করে। যে কারণে ফেসবুক সেবা বন্ধ হয়ে যায়।কীভাবে সেটা ঘটেছে, তা পরিষ্কার করেনি ফেসবুক।

ফেসবুক জানিয়েছে, তাদের কার্যক্রম আবার শুরু হয়েছে। পুরো কার্যক্রম চালু করতে তাদের চেষ্টা চলছে।ডাউনডিটেক্টার নামে যে প্রযুক্তি দিয়ে এই মাধ্যমগুলোর ব্যবহার ট্র্যাক করা যায়, সেটি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারে প্রায় ৮০ হাজার সমস্যার রিপোর্ট পেয়েছে এবং ফেসবুকের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি।যারা এই বিভ্রাটের কারণে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন, একটি টুইট বার্তায় তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছে ফেসবুক।

কী বলছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা?

কনফিগারেশনে ভুল হওয়ার কারণে ছয় ঘণ্টা ধরে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ বা ইন্সটাগ্রাম বন্ধ থাকার যুক্ত মেনে নিতে রাজি নন প্রযুক্তিবিদ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির।

''রাউটারে মিস কনফিগারেশনের জন্য ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠান ছয় ঘণ্টা বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকবে, এটা ঠিক যুক্তিসঙ্গত নয়। হয়তো এর পেছনে অন্য কোনও কারণ আছে। সেটা জানার জন্য আমাদের আরও একটু অপেক্ষা করতে হবে।'' তিনি বলছেন।

''এটা পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম যে, তাদের কোর নেটওয়ার্ক (মূল যোগাযোগ কেন্দ্র) কোন একটা সমস্যা হয়েছে। কারণ ফেসবুকের বিশ্বব্যাপী সেটআপ ছড়িয়ে রয়েছে, কোর নেটওয়ার্কে সমস্যা না থাকলে কোথাও না কোথাও ফেসবুক দেখা যেত। ফলে যেকোনো মূল জায়গায় সমস্যা না হলে সারা পৃথিবী অচল হয়ে যাওয়ার কথা না। তাদের কোর রাউটার হোক, অথেনটিকেশন মেকানিজম হোক অথবা ডিএনএস সিস্টেম হোক- মূল সার্ভিস কম্পোনেন্টের কোন জায়গায় সমস্যা হয়েছে। যেটা ঠিক করতে তাদের লম্বা সময় চলে গেছে।''

তিনি বলছেন, এটা কারও ভুলে হতে পারে, কোন সফটওয়্যার বাগের কারণে হতে পারে অথবা বাইরের কোন প্রভাব থাকতে পারে।''ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার, আলাদা প্রতিষ্ঠান হলেও এদের মালিক প্রতিষ্ঠান ফেসবুক। খরচ কমাতে তারা একই অবকাঠামো ব্যবহার করে। ফলে মূল নেটওয়ার্কে সমস্যা হওয়ায় একই মালিকানাধীন সবগুলো প্রতিষ্ঠান সমস্যায় পড়েছে'', বলছেন মি. সাবির।

অজ্ঞাতনামা ফেসবুক সূত্রের বরাত দিয়ে রেডিট জানিয়েছে, নেটওয়ার্কে পরিবর্তনের কারণে ফেসবুকের প্রকৌশলীরা রিমোটলি সমস্যার সমাধান করতে পারছিলেন না। ফলে সমাধান হতে বেশি সময় লেগেছে।

বিবিসির উত্তর আমেরিকার প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদদাতা জেমস ক্লিটন বলছেন, অনেক ক্ষেত্রেই এরকম সমস্যার দ্রুত সমাধান সম্ভব হয়। তবে ফেসবুকের এই সমস্যা সমাধানে যে সময় লেগেছে, তা খুবই বিরল।''জানা যাচ্ছে, সমস্যা সমাধানে ফেসবুক সদর দপ্তরের প্রকৌশলীরা হিমশিম খাওয়ায় সেখানে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছিল।''

''ফেসবুক যে বিবৃতি দিয়েছে, সেটাও খুব সতর্কভাবে লেখা হয়েছে। সেখানে অসৎ উদ্দেশ্যের বিষয়টিও ফেসবুক উড়িয়ে দেয়নি,'' তিনি বলছেন।এ বছরের শুরুর দিকে ডিএনএস সমস্যার কারণে বেশ কয়েকটি বড় ওয়েবসাইট সমস্যায় পড়েছিল।

ফেসবুকের এই সমস্যা এমন সময় ঘটলো, যার একদিন আগে প্রতিষ্ঠানের সাবেক একজন কর্মী ফ্রান্সিস হোগেন সিবিএসকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ফেসবুক 'নিরাপত্তার চেয়ে ব্যবসার' প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়। তিনি ফেসবুকের অনেক গোপন নথিপত্রও ফাঁস করেছে।

দীর্ঘ সময় ধরে এ ধরণের ব্যাপক মাত্রার বিভ্রাট খুবই বিরল।সর্বশেষ ২০১৯ সালে ফেসবুক এবং তাদের অন্যান্য অ্যাপে সমস্যা হওয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী গ্রাহকরা ১৪ ঘণ্টার বেশি সময় ব্যবহার করতে পারেননি।

সূত্র : বিবিসি