পাবনা : ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থীকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতা-কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত

পাবনা : ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থীকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতা-কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত

পাবনা : ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থীকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতা-কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত

পাবনার সুজানগর উপজেলার ১০ ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের ১০ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। তার কয়েকদিন পর ঘোষিত নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। এখানেই সমস্যা দেখা দিয়েছে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে। এ দু’জনের পারিবারিক ও রাজনৈতিক জীবন বৃত্তান্ত নিয়ে দলের মধ্যে চলছে এখন আলোচনা-সমালোচনা, বিক্ষোভ।

নাজিরগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তার প্রামাণিকের পরিবর্তে ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মোঃ মশিউর রহমান খানকে দলীয় চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের নৌকার নতুন প্রার্থী হিসেবে মশিউর রহমান খানকে দলীয় মনোনয়নের চিঠি দেয়া হয়েছে।

সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওহাব ও সাধারণ সম্পাদক শাহীনুজ্জামান বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১১ নভেম্বর সুজানগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ৭ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নে আব্দুস সাত্তারসহ অন্যান্য ইউনিয়নে নৌকা মনোনীত প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়।

নৌকার নতুন প্রার্থী মশিউর রহমান খান দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, নৌকার নতুন প্রার্থী মশিউর রহমান খান ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে একটি কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন কয়েক বছর। পরে জনগণের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করতে চাকরি ছেড়ে  দেন।

মশিউর রহমান খানের আপন ছোট ভগিনীপতি এসএম গোর্কি  দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার প্রধান ফটো সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন গত বছরের ২২ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর জ্যেষ্ঠ ফটোগ্রাফার হিসেবে নিয়োগ পেয়ে বর্তমানে সেখানেই কর্মরত রয়েছেন। তার আপন দু’বোনের মধ্যে জেসমিন আরা মৌসুমী ছিলেন ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য।

অপর বোন জিন্নাত আরা রোজী বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্টার ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুব মহিলা লীগের সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বড় ভাই আমিনুল ইসলাম খান ছিলেন অগ্রণী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বর্তমানে পাবনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সিনসা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আর ছোট ভাই আশিকুর রহমান সবুজ বর্তমানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এছাড়া বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নে ২৩ বছরেরর বিএনপি সমর্থিত এক চেয়ারম্যানকে নির্বাচনে পরাজিত করে মশিউর রহমান চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার পাশাপাশি বর্তমানে ইউনিয়নে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।

এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের প্রার্থী পরিবর্তন করে রাজাকার পুত্রকে মনোনয়ন দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

গত ১৪ অক্টোবর এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে পূর্বের মনোনীত প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তারকে পরিবর্তন করে বর্তমান চেয়ারম্যান মশিউর রহমানকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) রাতে মনোয়নয়ন পরিবর্তনের খবর এলাকায় পৌঁছুলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মনোনয়ন পরিবর্তনের খবরে মশিউর সমর্থকরা খুশি হলেও, আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী ও স্থানীয় মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

বর্তমান চেয়ারম্যান মশিউর রহমানকে দুর্নীতিবাজ ও রাজাকার পরিবারের সন্তান দাবি করে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে শনিবার(১৬ অক্টোবর) বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী।

সুজানগর উপজেলা আওয়ামীলীগ সূত্র জানায়, গত ৭ অক্টোবর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের আসন্ন নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তারকে মনোনয়ন প্রদান করে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচনী মনোনয়ন বোর্ড। সে নির্দেশনা মোতাবেক ১১ নভেম্বর আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে রিটার্নিং অফিসারের নিকট মনোনয়নপত্র দাখিল করেন আব্দুস সাত্তার। কিন্তু ১৪ অক্টোবর রাতে হঠাৎ করেই দলের মনোনয়ন পরিবর্তন করে চেয়ারম্যান পদে মশিউর রহমানকে মনোনয়ন দিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। এতে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

এদিকে, মনোনয়ন পরিবর্তনের খবরে আব্দুস সাত্তারের সমর্থক আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে হতাশা। শনিবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করে আব্দুস সাত্তারকেই আওয়ামীলীগ প্রার্থী করার দাবি জানিয়েছেন। বিক্ষুব্ধ স্থানীয়দের দাবি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান। তিনি জনবিচ্ছিন্ন, বিতর্কিত ব্যক্তি। চেয়ারম্যান থাকাকালে তিনি পরিষদে বসতেন না, জনগণের ভাল মন্দের  খোঁজও রাখতেন না। ইউপি সদস্যদের মতামতের তোয়াক্কা না করে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীকে দিয়ে পরিষদ চালিয়েছেন। দুর্নীতি, অনিয়ম, সালিশ বাণিজ্য, অবৈধ বালি ব্যবসাসহ এমন কোন অপকর্ম নেই যা তিনি করেননি বলে অভিযোগ করছেন।

এছাড়াও, সরকারি বিধি ভঙ্গ করে গোপনে দেশের বাইরে চলে যেতেন। এসব কারণে তিনি চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্তও হয়েছিলেন। এমন বিতর্কিত ব্যক্তিকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন দেয়ায় এলাকাবাসীর মাঝে হতাশা নেমে এসেছে।

সুজানগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল ওহাব বলেন, মশিউর রহমানের পিতা সৈয়দ আলী খান মুক্তিযুদ্ধের সময় শান্তিকমিটির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। সর্বশেষ প্রকাশিত রাজাকারের তালিকাতেও তার নাম

রয়েছে। এখন তার পরিবারের অনেকেই আওয়ামীলীগ করলেও তারা চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধী পরিবার এতে কোন সন্দেহ  নেই। তিনি আরো বলেন, পূর্বে মনোনয়ন পাওয়া আব্দুস সাত্তার ছাত্রলীগ, যুবলীগ হয়ে আওয়ামীলীগের পরীক্ষিত নেতৃত্ব। তিনি দলের ত্যাগী নেতা। হঠাৎ মনোনয়ন পরিবর্তনে তৃণমূল নেতাকর্মীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। আমি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে বিষয়টি বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।

তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামীলীগের সদ্য মনোনয়ন পাওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী মশিউর রহমান খান বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ প্রার্থী সিলেকশনে ভুল বুঝতে পেরে প্রার্থী পরিবর্তন করেছে। তৃণমূল নেতাকর্মীকে সাথে নিয়েই আমি নৌকার বিজয় নিশ্চিত করব।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফাতেমা খাতুন জানান, নির্বাচনে মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখ ১৭ অক্টোবর, ২০ অক্টোবর রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক মনোনয়নপত্র বাছাই, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ২৬ অক্টোবর এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১১ নভেম্বর।