লোভের কুফল

লোভের কুফল

মুফতি আবুল কাসেম

নফসের মারাত্মক একটি ব্যাধির নাম লোভ। লোভ মানুষকে অধঃপতনের অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করে। নিমজ্জিত করে তাকে পাপসাগরে। একজন লোভী কখনো সুখী হতে পারে না। সুখের সব দ্বার রুদ্ধ করে দেয় এ মারাত্মক রোগটি। কেড়ে নেয় তার জীবন থেকে সুখ-শান্তি। শুধু তাই নয়, লোভী কখনো আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে না; বরং উল্টো তাঁর দেয়া নেয়ামতের চেয়ে বেশি কিছু আকাক্সক্ষা করে। এমনকি একটা আশা পূরণ হতে না হতেই সে আরেকটা চেয়ে বসে। এভাবেই চলতে থাকে লোভের চক্র। লোভ যখন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায়, তখন এ লোভের চক্র থেকে বের হয়ে আসা তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে মৃত্যুশয্যায় শুয়ে ও সে আকাক্সক্ষা করে, আমার মৃত্যুটা যেন জাঁকজমকপূর্ণ হয়, মৃত্যুসংবাদে যেন নেমে আসে মানুষের ঢল। আমার জানাজাকে যেন বলে, ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ জানাজা।

লোভী ব্যক্তি সম্পদ অর্জন করে ক্রয় করে : মানসিক অশান্তি, ব্যস্ত হৃদয়, পরকালের কঠিন হিসাব। আর একজন কৃতজ্ঞ দরিদ্র ব্যক্তি ক্রয় করে : আত্মিক প্রশান্তি, হতাশামুক্ত অন্তর, পরকালের সহজ হিসাব। লোভের নিন্দায় অসংখ্য হাদিস বিবৃত হয়েছে। যার কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হলো। হজরত আনাস ইবনে মালেক রা: থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী সা: ইরশাদ করেন, যদি আদম সন্তানের জন্য স্বর্ণ ভরা একটা ‘উপত্যকা’ থাকে, তবুও সে তার জন্য দু’টি উপত্যকা কামনা করবে। তার মুখ মাটি ব্যতীত অন্য কিছুতেই ভরবে না। তবে যে ব্যক্তি তওবা করবে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন (সহিহ বুখারি : ৬৪৩৯)।মানুষ বৃদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে তার পাপরাশিগুলো কমে যায়; কিন্তু লোভ এমন একটি ব্যাধি, যা দিন দিন বাড়তে থাকে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, আদম সন্তান বৃদ্ধ হয়ে যায়; কিন্তু দু’টি ব্যাপারে যুবকই থাকে : বেঁচে থাকার লোভ এবং সম্পদের ভালোবাসা (জামে তিরমিজি :২৩৩৯)।

লোভ বহুপাপের জনক। এ লোভের কারণেই মানুষ এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করে। বোনদের প্রাপ্য অংশ মেরে খায়। প্রতিপক্ষকে খুন করে ক্ষমতা দখল করে। এ লোভ কতটা ভয়ঙ্কর, সে বিষয়টি প্রিয় নবী সা: একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে বুঝিয়েছেনÑ কা’ব ইবনে মালিক আল-আনসারি রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, দু’টি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগলের পালে ছেড়ে দিলে তা যতটুকু ক্ষতি করতে পারে না, কারো সম্পদ ও প্রতিপত্তির লোভ এর চেয়ে বেশি ক্ষতিসাধন করে তার ধর্মের (জামে তিরমিজি : ২৩৭৬)।

এ লোভের কারণে পূর্ববর্তী উম্মত ধ্বংস হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, আমি তোমাদের ব্যাপারে দারিদ্র্যের ভয় করি না। কিন্তু তোমাদের ব্যাপারে এ আশঙ্কা করি যে, তোমাদের উপর দুনিয়া এরূপ প্রসারিত হয়ে পড়বে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর প্রসারিত হয়েছিল। আর তোমরা ও দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে, যেমন তারা আকৃষ্ট হয়েছিল। আর তা তোমাদের বিনাশ করবে, যেমন তাদের বিনাশ করেছে’ (সহিহ বুখারি : ৩১৫৮)।লোভ-লালসা মানুষের হীনতম একটি বৈশিষ্ট্য। ভাই-বোনের মাঝে ধন-সম্পদ নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ, আত্মীয়স্বজনের সাথে সম্পর্ক ছেদ, পাড়া-পড়শিদের সাথে মামলা-মোকদ্দমা ইত্যাদি। এ সব কিছু লোভেরই ফসল।

ধারণক্ষমতার বাইরে মানুষ কিছু খেতে পারে না, করতে পারে না। এসব জানা সত্ত্বেও মানুষ অতিরিক্ত পাওয়ার নেশায় কত রকম অহেতুক কাজের পেছনে যে জীবন নষ্ট করে দেয়, তা আমাদের চার পাশের মানুষকে দেখলেই বোঝা যায়।যার কপালে যতটুকু লেখা আছে, ততটুকু তার কাছে আসবেই। এর জন্য অযথা লোভ করতে হবে না। জড়াতে হবে না তাকে নানারকম অপকর্মে। সঠিক ও শরিয়তসম্মত পন্থায় যতটুকো (এই পরিমাণ অনেক বেশিও হতে পারে) উপার্জন করা যায় বা পাওয়া যায় তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

মুফতি আবুল কাসেম : মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া হামিদিয়া বটগ্রাম, সুয়াগাজী, সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা ।