জমি রক্ষায় অরাজনৈতিক আন্দোলন চান পশ্চিমবঙ্গের দেউচা পাচামির আদিবাসীরা

জমি রক্ষায় অরাজনৈতিক আন্দোলন চান পশ্চিমবঙ্গের দেউচা পাচামির আদিবাসীরা

জমি রক্ষায় অরাজনৈতিক আন্দোলন চান পশ্চিমবঙ্গের দেউচা পাচামির আদিবাসীরা

বীরভূমের দুবরাজপুরে খোলামুখ কয়লা খনি তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার৷ গোড়া থেকেই এই প্রকল্প স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিরোধের মুখে পড়েছে৷ গড়ে উঠেছে বীরভূম জমি, জীবন, জীবিকা ও প্রকৃতি বাঁচাও মহাসভা৷ কয়েকমাস আগে প্রকল্পের তোড়জোড় শুরু হলেও কাজ এগোয়নি৷ রাজ্য পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষণা করলেও বিশেষ লাভ হয়নি৷গ্রামবাসীদের একাংশ জমি দিতে রাজি হলেও অধিকাংশ অনিচ্ছুক৷ সেটাই এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের মাথাব্যথা৷ 

প্রস্তাবিত খনি এলাকার বাসিন্দারা মূলত আদিবাসী৷ তাঁরা দফায় দফায় প্রতিবাদ আন্দোলন করছেন৷ গ্রামবাসীর প্রবল আপত্তি কোনো ধরনের রাজনৈতিক যোগাযোগে৷

তাই বিজেপির প্রতিনিধিদের দ্বিতীয়বারের জন্য প্রত্যাখ্যান করেছেন স্থানীয়রা৷ বৃহস্পতিবার দেউচা পাচামিতে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার৷ তারা এলাকায় ঢুকতে না পেরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে মিছিল করে জমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদ জানান৷ জমির লড়াইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু৷ তিনি বলেন, ‘‘সিঙ্গুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ইচ্ছের বিরুদ্ধে জমি নেওয়া যাবে না৷ এখন তিনি জোর করে জমি নিতে চাইছেন৷’’

বিজেপি নেতারা রাজ্যের উপর খড়গহস্ত হলেও আদিবাসীরা তাঁদের গুরুত্ব দিতে নারাজ৷ বিজেপি নেতাদের এলাকায় আগমনের বিরুদ্ধে পাল্টা মিছিল করেন তাঁরা৷ গ্রামবাসীর বক্তব্য, তাঁদের আন্দোলনে রাজনৈতিক রং লাগানো যাবে না৷ তাঁরা নিজেরাই জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত রুখে দেবেন৷

অন্যতম আন্দোলনকারী, অর্থনীতিবিদ প্রসেনজিৎ বসু এই লড়াইয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকার সূত্রে গ্রেপ্তার হয়েছেন, জেল খেটেছেন৷ তাঁর মন্তব্য, ‘‘বিজেপি চার মাস পর এখানে এসেছে৷ আন্দোলন যখন ছোট ছিল তখন আসেনি৷ ওরা আন্দোলন হাইজ্যাক করার চেষ্টা করছে৷ আমি জেল খাটব আর শুভেন্দু অধিকারী নেতা হবেন, এটা চলবে না৷’’

এর আগে ২০ এপ্রিল শুভেন্দু অধিকারী দেউচায় ঢুকতে বাধা পান৷ একই দিনে গ্রামবাসী রুখে দেয় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকেও৷ বৃহস্পতিবার বিজেপি সভা করে দেউচা মোড়ে৷ সেখানে বিজেপি নেতৃত্ব অতি বাম সংগঠনের দিকে আঙুল তোলেন৷ অভিযোগ, বিজেপিকে আন্দোলন থেকে দূরে রাখার ছক কষেছে কট্টর বাম ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা৷ যদিও এই অভিযোগ খারিজ করে আন্দোলনের নেতা শিবল সোরেনের বক্তব্য, ‘‘কোনো বাম নয়, বিচ্ছিন্নতাবাদী নয়৷ ৩৬টি গ্রামের মানুষ নিজেদের জীবন-জীবিকা রক্ষা করার জন্য লড়াই চালাচ্ছে৷ বিজেপি নেতারা আমাদের আন্দোলনে কালি ছিটানোর চেষ্টা করছেন৷’’

পশ্চিমবঙ্গে যে কোনো ঘটনাকে রাজনীতির সঙ্গে জুড়ে দেখার রেওয়াজ আছে৷ অথচ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী দেউচার আন্দোলন৷ এই প্রবণতা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক, অধ্যাপক শুভময় মৈত্র বলেন, ‘‘বিজেপি দেশের শাসনক্ষমতায় আছে, তাদের উন্নয়ন সংক্রান্ত নীতি আছে৷ তারা কীভাবে আন্দোলনের সঙ্গে জুড়তে চাইছে, সেটা দেখতে হবে৷ একইসঙ্গে আদিবাসীরা কী প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে, সেদিকেও নজর রাখতে হবে৷''

সুকান্ত মজুমদারের প্রস্তাব, ‘‘যদি রাজনৈতিক দলের সমর্থনে আপত্তি থাকে জনতার, তা হলে আমরা দলের পতাকা ছাড়াই দেউচার পাশে দাঁড়াতে তৈরি৷ আমাদের লক্ষ্য আন্দোলনকে সমর্থন করা৷’’দেউচা নিয়ে রাজ্য সরকার আশাবাদী হলেও তা এখনো বিশ বাঁও জলে৷

তারা বিক্ষুব্ধ জনতাকে বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ নবান্নে মহাসভার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শোনা যায়, প্রতিবাদীরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আশ্বস্ত হয়েছিলেন৷ যদিও পরে মহাসভা জানিয়ে দেয়, তারা আন্দোলন থেকে সরছে না৷ সম্প্রতি প্রশাসনের উদ্যোগে দেউচায় চেক বিলির অনুষ্ঠান হাতে নেওয়া হয়৷ কিন্তু গ্রামবাসীর প্রতিরোধে এলাকায় ঢুকতে পারেননি বীরভূমের জেলাশাসক, পুলিশ সুপার৷ বাতিল হয়ে যায় সরকারি কর্মসূচি৷ 

যদিও রাজ্য দাবি করছে, দেউচায় প্রকল্পের পক্ষে রয়েছে জনতার একাংশ৷ তারা জমি দিতে চাইছে৷ এ প্রসঙ্গে প্রসেনজিৎ বসু বলেন, ‘‘প্রস্তাবিত এলাকায় জমি নিতে হবে ২১ হাজার মানুষের কাছ থেকে৷ এর মধ্যে নয় হাজার আদিবাসী, যারা এই এলাকায় থাকেন৷ যারা অন্যত্র থাকেন তাদের কেউ কেউ সরকারি প্যাকেজ নিলেও সেই সংখ্যাও নগণ্য৷

সূত্র  : ডয়চে ভেলে