হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে করণীয়

হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে করণীয়

হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে করণীয়

দেশজুড়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। এ চলমান তাপপ্রবাহে প্রচণ্ড গরমে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা। এ পরিস্থিতিতে কোথাও অতিরিক্ত জনসমাগম হলে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে।গরমের দিনে মারাত্মক সমস্যার একটির নাম হিটস্ট্রোক। এর প্রধান কারণ পানিশূন্যতা। মানবদেহে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। প্রচণ্ড গরমে মানুষের শরীরের তাপনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে প্রবল। এ অবস্থায় শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে হিটস্ট্রোক হয়।

গরমে অতিরিক্ত ঘামলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়ে। প্রচণ্ড তাপদাহে অতিরিক্ত জনসমাগমেও হিটস্ট্রোক হতে পারে। তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না পেলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।হিটস্ট্রোকের লক্ষণগুলো হলো মাথা ঝিম ঝিম করা, বমি বমি ভাব বা বমি করা, অবসাদ ও দুর্বলতা, মাথাব্যথা, মাংসপেশির খিঁচুনি, চোখে ঝাপসা দেখা, হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি, শ্বাসকষ্ট, দৃষ্টিবিভ্রম, খিঁচুনি ইত্যাদি।

এ সমস্যা থেকে কিভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যায়, যে ব্যাপারে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা: এ বি এম আব্দুল্লাহ।তিনি বলেন, দেশে এখন করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ রয়েছে। প্রচণ্ড গরমে মানুষের বিভিন্ন ধরনের অসুখ, সর্দি-কাশি, জ্বরও হচ্ছে। এর সাথে প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকিও যুক্ত হয়েছে।

তাই অপ্রয়োজনে জনগণকে বাইরে রোদে না ঘোরার পরার্মশ দেন এ ইমিরেটাস অধ্যাপক। তিনি বলেন, আমাদের যারা শ্রমিক শ্রেণী রয়েছে তাদের তো বাইরে কাজ করতেই হয়। তারা যাতে মাঝে মধ্যে ছায়ায় অবস্থান করেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। বেশি বেশি পানির পাশাপাশি হালকা লবণযুক্ত পানি, ওরস্যালাইন, ডাবের পানি পান করতে হবে। ডিহাইড্রেশন যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

শিশুদের ব্যাপারে বিশিষ্ট এ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলেন, তারা যেন রোদের মধ্যে অনেক বেশি দৌড়ঝাঁপ না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বয়স্কদের হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তারা যেন খুব বেশি প্রয়োজন না হলে রোদের মধ্যে বাইরে না বের হয়। গেলেও যেন ছাতা ব্যবহার করেন। সাথে পানির বোতল রাখা ও অল্প অল্প করে বার বার পানি পান করতে হবে। যারা রাস্তায় বসে কাজ করেন, তারা যেন উপরে ছাতা বেঁধে তার নিচে বসে কাজ করেন। যারা রিকশা শ্রমিক বা অন্যান্য কাজের সাথে জড়িত; তারা যেন মাঝে মাঝে কাজের ফাঁকে ছায়ার কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন।

বিএসএমএমইউয়ের এ চিকিৎসক আরো বলেন, যারা বিভিন্ন শিল্প কারখানায় গরমের মধ্যে কাজ করেন, তাদেরও হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে। তাদের বাইরে খোলা বাতাসযুক্ত স্থানে বসার পরামর্শ দেন তিনি। আরো বলেন, খুব টাইট পোশাক পরলে শরীর থেকে ঘাম বের হয় না। তাই বেশি টাইট পোশাক পরা যাবে না। ঢিলেঢালা সুতি কাপড়ের পোশাক পরতে হবে।

হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে করণীয় কী, এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা: এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, কেউ যদি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েই যায় তাহলে তাকে যত দ্রুত সম্ভব ছায়াযুক্ত স্থানে নিতে হবে। ঘরে থাকলে ফ্যান ও এসি চালু করে তাকে ঠাণ্ডা স্থানে রাখতে হবে। ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে।

বেশি বেশি পানি, ফলমূলের শরবত পান করাতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির প্রেশার কমে যাওয়া, প্রস্রাব বন্ধ, পালস কমে যাওয়া বা অজ্ঞান হয়ে গেলে দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিতেও পরামর্শ দেন তিনি।