শ্রমিকের প্রাপ্যটা সময়মতো পরিশোধ হোক

শ্রমিকের প্রাপ্যটা সময়মতো পরিশোধ হোক

ছবি- নিউজজোন বিডি

বছর ঘুরে আসছে মে দিবস, এ দিন আসলেই নড়েচড়ে বসে শ্রমিক সংগঠনগুলো। সারা বছর কষ্ট করলেও তেমন কোন মূল্যই পায় না শ্রমিকরা। শ্রমিকদের নিয়ে ভাবছেন এক ঝাঁক শিক্ষার্থী তুলে ধরছেন- আবু জাফর

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের বিশ্রামের সুযোগ দরকার

অণু থেকে অট্টালিকা পর্যন্ত, বিশ্ব সভ্যতার  প্রতিটি সৃষ্টির   মূলে রয়েছে শ্রম যারা এই শ্রম দেয় তারাই শ্রমিক। তবে আমরা কায়িক শ্রমের মাধ্যমে যারা কাজ সমাধা করে তাদেরকেই বুঝি। শ্রমিকরা চিরকাল মাঠে মাঠে বীজ বুনেছে, ধরিত্রীর বুক বিদীর্ণ করে ফসল ফলিয়াছে, তাতি তাত বুনে, জেলে মাছ ধরে,দালানকোঠা নির্মাণ বহুদূরে প্রসারিত শ্রমিকদের বিচিত্র কর্মভার কিন্তু তারাই পায়নি তাদের যথাযথ সম্মান ও ন্যায্য অধিকার। তারা নিয়মিত শোষনের, লাঞ্চনার শিকার হচ্ছে।
খাদ্য,বস্ত্র, চিকিৎসা,বাসস্থান ও শিক্ষা হলো মানুষের মৌলিক অধিকার। দ্রব্যের উর্ধমূল্যের বাজারে ও  শ্রমিকদের চাহিদার তুলনায় ন্যায্য মজুরি না পাওয়ায় এগুলোর ব্যায় মেটাতে অক্ষম। ১৮৮৬ সালের ১মে’তে শ্রমিক র‍্যালির স্লোগান ছিলো -আট ঘন্টার শ্রম, আট ঘন্টার ঘুম,আট ঘন্টার বিনোদন। বাংলাদেশের শুধু মাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেই এ নিয়ম বলবত অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এগুলো মানা হয় না। ফলে তারা ন্যায্য মজুরি,ছুটি, জীবন নিরাপত্তা ইত্যাদি অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

আল মাসুম হোসেন
শিক্ষার্থী, ফার্মেসী বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

 

শ্রমিক দিবসে শ্রমিকের অধিকার ফিরিয়ে দেই

সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের গুরুপূর্ণ অংশ শ্রমিক জনতা। এই যে-আপনি, আমরা অট্টালিকায় বাস করছি সেটা কে বানিয়েছে শ্রমিক নয় কি! এই-যে প্রতিনিয়ত সমাজের অগ্রগতি, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা এসব কাজ আসলে কাদের ধারা সম্পাদিত হচ্ছে  শ্রমিক জনতার মাধ্যমে ই তো তাই না ! কলকারাখানা থেকে শুরু করে রাস্তা বানানো,বিল্ডিং নির্মাণ, খাদ্য উৎপাদন, পৌশাক তৈরি করণ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ সকল কিছুতেই রয়েছে শ্রমিকের শ্রম। এই সবি আমাদের শ্রমিকদের কাজ। এই শ্রমিক জনগোষ্ঠী যদি মাত্র একটা দিন তাদের কাজ বন্ধ করে দেয় কখনো ভেবে দেখেছেন কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে! কিন্তু সবসময়ই আমাদের শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের কথা তুলতে হয়! আবার নারী এবং পুরুষ শ্রমিকদের মধ্যে পার্থক্য করা হয়। পুরুষ দের তুলনায় নারীদের বেতন কম দেওয়া হয়? তাই আসুন শ্রমিক অধিকার আদায়ের মাধ্যমে আসলে আমরা আমাদের সমাজ এবং রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যাই। এই পহেলা মে  অর্থাৎ বিশ্ব শ্রমিক দিবস উদযাপন হোক আমাদের শ্রমিক জনতার যথাযথ অধিকার আদায়ের প্রচেষ্টা।

আইরিন সুলতানা
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

 

শ্রমিকের সঠিক মূল্যায়ন হোক

শ্রমিক দিবসে চাই শ্রমিকের মূল্যায়ন। একজন শ্রমিক যখন সারাদিন পরিশ্রম করার পরও পরিবারের সকলের মুখে অন্ন তুলে দিতে হিমশিম খেতে হয় তাহলে শ্রমিকদেরকে আর কোথায় মূল্যায়ন করা হলো। বাজারে দ্রব্য মূল্য আকাশচুম্বি হওয়ায় শ্রমজীবী মানুষ পরেছে সবচেয়ে বেশি বিপাকে। তাদের তো আর শ্রমের মূল্য বৃদ্ধি পায়নি। সরকার সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ভাতার পরিমান বাড়ালেও এই শ্রমজীবীদের বাড়েনি কোনো বেতন বা পায় না কোনো আলাদা সুযোগ সুবিধা।যার ফলে পরিবারের মানুষের চাহিদা পূরন করতে তাদের কে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই আমি মনে করি সরকারের উচিত এই শ্রমজীবী মানুষদেরকে শ্রমিক দিবস উপলক্ষে একটি ভাতার ব্যবস্থা করা যেখানে সকল শ্রমজীবীরা এর আওতাভুক্ত থাকবেন। সে সাথে আমাদের সকলেরও উচিত শ্রমজীবী মানুষকে মূল্যায়ন করা এবং তাদেরকে সম্মান করা।

বাবুল
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

শ্রমিকের দুর্বিষহ জীবনের ইতি হোক

শ্রমজীবী মানুষ দেশের অর্থনীতির ভাবমূর্তি বৃদ্ধিতে বিরাট অবদান রাখে।তাঁদের শ্রম-ঘাম-রক্তে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হয়। কিন্তু, বর্তমানে শ্রমিকদের জীবনযাত্রার অবস্থা খুবই করুণ।দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী ঘটলেও, যারা  শ্রম দিয়ে সেবা দিয়ে থাকে তাঁদের মজুরির ঊর্ধ্বমুখী ঘটে না। নারী -পুরুষ শ্রমিকদের  দেশ ও দেশের বাহিরে বৈষম্য, হয়রানি, কণ্ঠরোধ,অসম মজুরি, পারিবারিক বিধিনিষেধ,নিরাপত্তাহীনতা,প্রতিবাদকারীদের চাকরিচ্যুতের শিকারের ফলে তাঁদের  জীবন ও জীবিকা দুঃসহ হয়ে ওঠে। তাই,শ্রমিকদের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হলে যৌন ও প্রজনন সু-স্বাস্থ্য  নিশ্চিত করা, শ্রমিকদের শ্রমকে সম্মান জানিয়ে সঠিক সময়ে কম পরিশ্রমে অধিক মজুরি প্রদান করা, দূর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা  করা ইত্যাদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বাস্তবায়ন হলে  তাঁদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে।

নাদিয়া আফরোজ
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

 

'সভ্যতা নির্মানের কারিগরদের যথাযথ মূল্যায়নের শপথ নিন'

শ্রমের উপর ভিত্তি করে সভ্যতার সূচনা হলেও শুরু থেকেই শ্রমিকদের কোনো মূল্যায়ন ছিল না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিশ্রম করেও ন্যায্য মুজুরি ভাগ্যে ঝুটতো না। নাম মাত্র বেতনে হালের পালের মতো খাটতে হতো শ্রমিকদেরকে। অবশেষে পহেলা মে ঐতিহাসিক আন্দোলন সফল হলেও শ্রমের সাথে মুজুরির অসামঞ্জস্যতার রেষ এখনো কাটেনি। মাসের পর মাস বেতন আটক রাখার রেওয়াজ এখনো মিশে যায়নি। শ্রমের মূল্য আদায় করতে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকদের এখনো রাজপথে নামতে দেখা যায়। ঘাম ঝড়ানোর পয়সা পেতে যেখানে রীতিমতো বুলেটের আঘাত সামলাতে হয়, সেখানে ঈদের বোনাস কিংবা বৈশাখী ভাতা কামনা করা নিতান্তই অবান্তর। গৃহস্থালিতে কাজ করা শ্রমিকদের অবস্থা আরো নাজুক! নিরবে নিবৃত্তে নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করা-ই যেন ওদের জীবন। জীবনের মায়া ত্যাগ করে ওরা জীবিকার তাগিদে নিজেকে উৎসর্গ করে। ওদের হাঁড়ভাঙা পরিশ্রম আর ঘাম ঝড়ানো কর্মের ফলেই আমাদের সমাজের তথাকথিত বড়লোক সম্প্রদায়ের কপালে এসির বাতাস জুটে। শ্রমজীবী মানুষেরা আছে বলেই আমাদের পেটে দানাপানি পড়ে। ওরা আছে বলেই দেশে অর্থনীতির আজও টিকে আছে। মাথা উঁচু করে পোশাক রপ্তানিতে বিশ্ব মানচিত্রে শীর্ষ স্থান দখল করেছে। স্যুট-টাই পড়া স্যারেরা গর্ব করলেও এর পেছনে রয়েছে বেতন না পাওয়া শ্রমিকদের অবদান। তাই শ্রমিক দিবসে শ্রমের যথাযথ মূল্যায়নের শপথ নিতে হবে। শ্রমিকেরা ভালো থাকলেই ভালো থাকবে প্রিয় বাংলাদেশ।

আবু মো. ফজলে রোহান
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়