আমরা কবে সচেতন হব ?

আমরা কবে সচেতন হব ?

ফাইল ছবি

শুক্রবার রাত ৮ টা। বাসাবো মাঠের কাছে দেখা হয় পূর্ব পরিচিত এক সাংবাদিকের সাথে। খুবই ব্যস্ততার সাথে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। অনেকদিন পর দেখা। তাই কেমন আছেন? জিজ্ঞেস করতেই বললেন, 'ভাই ভালো আছি। একটু ব্যস্ত আছি। ঘূর্ণিঝড় মোখার নিউজ কাভার করতে রাতের গাড়িতে কক্সবাজার যেতে হবে। বাসায় গিয়ে দ্রুত রেডি হতে হবে।' কথা না বাড়িয়ে তাই দ্রুত তাকে বিদায় জানালাম।

মনটা খুব খারাপ লাগছিল। ভাবছিলাম ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যেখানে সারা দেশের মানুষ চিন্তিত, এমনকি বিদেশের মানুষও। কক্সবাজার ও আশপাশের এলাকার সমুদ্র উপকূলের মানুষদেরকে নিরাপদ স্থানে বিশেষ করে সাইক্লোন সেন্টারে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে মানুষকে নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে। মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকা উপকূলে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসএসসি সহ গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। শুধু উপকূলীয় এলাকা নয়, সারাদেশের মানুষের মধ্যে প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখাকে ঘিরে এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে শত বিপদ মাথায় নিয়ে নিউজ কাভার করার জন্য অনেক সাংবাদিককে কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করতে হচ্ছে। স্থানীয় সাংবাদিকদের পাশাপাশি ঢাকা থেকেও দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের এসব নিউজ কাভার করার জন্য যেতে হচ্ছে। সাংবাদিকদের এসব কাজ করতে হচ্ছে নিরেট পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য।

আজ রাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনলাইনে প্রকাশিত খবর পড়ে বেশ আশ্চার্যান্বিত হলাম। ভিন্ন গণমাধ্যমের অনলাইন নিউজে দেখলাম, ঘূর্ণিঝড় মোখা দেখতে আসা উৎসুক পর্যটকদের ভীড় কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে। শুধু ঝড় দেখা নয়, এমন আতঙ্কের মধ্যেও অনেককে সাগরের পানিতে নেমে গোসল করতে দেখা যায়। অনেকেই আবার এমন মুহূর্ত ফ্রেমবন্দি করার জন্য ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকে। প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ শত চেষ্টা করেও উৎসুক জনতাকে সাগর তীরে যাওয়া থেকে ফেরাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে রাতেই আঘাত ভাঙতে পারে ঘূর্ণিঝড় মোখা। এর মধ্যেই শনিবার সকাল থেকেই কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যটকদের আনন্দ উল্লাস ও হইচই করতে দেখা গেছে। অনেকেই সাগরে গোসল করেছেন। যদিও মোখার প্রভাবে সৈকতে বিপৎসংকেত ‘লাল’ পতাকা টানানো হয়েছে। এমন অবস্থায় পর্যটকদের নিরাপদে থাকতে ও দ্রুত সমুদ্র থেকে উঠে যেতে মাইকিং করছেন বিচ কর্মীরা। কক্সবাজার পর্যটন সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহও এমনটাই বলেন, সাগরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিলেও অনেকে তা অমান্য করে ঢুকে পড়ছেন। আসলে মানুষ নিজেরা সচেতন না হলে আমরা বাধা দিয়ে কতটা কী করতে পারব? বিকেলের দিকে অনেককেই সতর্ক করেছি। তবে আমাদের তৎপরতা চলবে।

এর আগেও আমরা সিডর, আইলা, আম্ফানসহ বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় দেখেছি। যা মানুষের জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। শত শত মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। আমরা কি পারিনা বিপদের মুহূর্তে আনন্দ না করে, খুশিতে না নেচে একটু সাবধানে থাকতে? নিরাপদ স্থানে থাকতে? কেননা, যে কোন মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের বিপদ। তাই আসুন আমরা সচেতন হই। অন্যকে সচেতন করি।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সুরে বলতে চাই, কেউ যদি নিজে সচেতন না হন, আপনি-আমি কীভাবে অন্যকে সচেতন করব? আসলে আমরা কবে সচেতন হব?

লেখক: আব্দুল্লাহিল ওয়ারিশ, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট।