দেশত্যাগের হুমকি ইসরায়েলি চিকিৎসকদের

দেশত্যাগের হুমকি ইসরায়েলি চিকিৎসকদের

ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইহুদিবাদী ইসরায়েল। দীর্ঘ প্রায় আট মাসের এই যুদ্ধে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে গাজা। বাড়িঘর, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল সবকিছুই গুড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজায় হামাসের হাতে ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি এবং যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে খোদ দেশটির নাগরিকরাও।

এরই মধ্যে অভিনব এক দাবিতে ইসরায়েল ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির চিকিৎসকরা। বলা হচ্ছে- এ ঘোষণা শুধু অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতাই তৈরি করবে না বরং ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্বকেও হুমকির মুখে ফেলবে।

ইসরায়েলি চিকিৎসকদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার ‍হুমকি মূলত ইহুদি ধর্মের কট্টরপন্থি অংশের সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে থাকা একটি আইনকে কেন্দ্র করে। ইসরায়েলের আইন অনুসারে প্রত্যেক নাগরিকের বাধ্যতামূলক সামরিক পরিষেবা দিতে হলেও এ আইনের আওতায় আসেন না হারেদি ইহুদিরা। তারা মূলত ধর্মপালনেই বেশি আগ্রহী হয়ে থাকে। এমনকি এসব ইহুদিরা ইসরায়েল রাষ্ট্রেরও বিরোধী। হারেদি গোষ্ঠীর অনুসারীরা মনে করেন, যত দিন না মসিহ আসছেন তত দিন ইহুদিদের জন্য আলাদা কোনো রাষ্ট্রের প্রয়োজন নেই।

এ ইহুদিরা ক্ষতি বা রক্তপাতের সমর্থন করে না এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কথা বলে। তাই তারা গাজা যুদ্ধের বিরোধিতাও করে থাকেন। হারেদি মতাদর্শকে ইসরায়েলে বসবাসকারি বেশিরভাগ ইহুদিই ভালো নজরে দেখেন না।

সম্প্রতি হারেদি ইহুদিদের ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী- আইডিএফে নিয়োগ দেওয়া হবে হবে কি না তা নিয়ে ইসরায়েলি আদালতে একটি শুনানি চলছে। এ সময় হারেদি ইহুদিদের সেনাবাহিনীতে নেয়া না হলে দেশ ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের চিকিৎসকরা।

বিশ্লেষকদের ধারণা, হারেদিদের নিয়ে ইসরায়েলি আদালতের রায়ে রাষ্ট্রের মধ্যে বিভেদ চরম আকার ধারণ করতে পারে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্টের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি চিকিৎসকরা মনে করেন, হারেদি ইহুদিরা সেনাবাহিনীতে যোগ না দেওয়ায় সমাজে অসমতা তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে হারেদির জন্য সংরক্ষিত পরিষেবার মেয়াদ বাড়ানোরও বিরোধী চিকিৎসকরা।

দেশটির চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যদি হারেদিদের সেনাবাহিনীতে না নেয়া হয়, তাহলে তারা ইসরায়েল ছেড়ে চিরতরে চলে যাবেন।

বিবৃতিতে ইসরায়েলের চিকিৎসকরা অভিযোগ করেছেন হারেদি ইহুদিরা দিনের পর দিন সেনা প্রশিক্ষণ থেকে ছাড় পেয়ে আসার পাশাপাশি সরকারি চাকরি ও চিকিৎসাসহ অনেক পরিষেবাতে বাড়তি সুবিধা ভোগ করে আসছে। অথচ দেশের সংরক্ষিত সেনাবাহিনীর অর্ধেকই হচ্ছে মেডিকেল শিক্ষার্থী, চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান ও সেবক।

দেশের প্রয়োজনে তারা যুদ্ধের ময়দানে ছুটে যাচ্ছে। ফলে প্রয়োজনের সময় চিকিৎসা সেবায় জনবলের ঘাটতি দেখা দেয়। কিন্তু হারেদি ইহুদিরা ঘরে বসে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। এসব বিভাজন ইসরায়েলের মধ্যে জাতিগত অন্তর্দ্বন্দ্ব আরও বাড়িয়ে তুলবে। যার প্রভাব বাড়তে থাকলে ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বড় ধরনের হুমকিতে পড়বে।