সাকিব আল হাসানের পূজায় যোগ দেয়া নিয়ে যা বলছেন কলকাতার আয়োজকরা

সাকিব আল হাসানের পূজায় যোগ দেয়া নিয়ে যা বলছেন কলকাতার আয়োজকরা

ছবি: সংগৃহীত

তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের কলকাতায় একটি কালীপূজার উদ্বোধনে থাকা নিয়ে যে সমালোচনা হচ্ছে, তাকে ‘উগ্র মৌলবাদীদের’ কাজ বলে মনে করেন ওই পূজা কমিটির প্রধান উদ্যোক্তা ও তৃণমূল কংগ্রেস নেতা পরেশ পাল। গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, সাকিব আল হাসান তাদের পূজোর উদ্বোধন কখনোই করেননি। তাই মুসলমান হয়েও হিন্দুদের পূজায় কেন হাজির ছিলেন, সেই প্রশ্ন তুলে তার (সাকিবের) সমালোচনা করা অন্যায্য।

ওই পূজার উদ্বোধন আসলে করেছিলেন এক হিন্দু সন্ন্যাসী, বলছেন পূর্ব কলকাতার বেলেঘাটা অঞ্চলের বিধায়ক পরেশ পাল।

পূর্ব কলকাতার কাঁকুড়গাছি এলাকায় যে কালীপূজার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বাংলাদেশে সমালোচনার মুখে পড়েছেন তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, সেই মণ্ডপটি এখন ফাঁকা। প্রতিমা বিসর্জন হয়ে গেছে। কিন্তু পূজা মণ্ডপের চারদিকে এখনো বড় বড় হোর্ডিংয়ে সাকিব আল হাসানের ছবি ছড়িয়ে রয়েছে।

উদ্বোধনী মঞ্চটিও এখনও রাখা রয়েছে - যার একদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি, অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর প্রতিকৃতি।

গত ৫৯ বছর ধরে চলা পূজাটির মূল উদ্যোক্তা ওই এলাকার বিধায়ক পরেশ পাল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওখানে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন,‘শুনেছি যে সাকিব দেশে ফেরার পরে ওকে প্রাণে মারার হুমকি দেয়া হয়েছে। একটা ‘মৌলবাদী শক্তিই’ এসব বলছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মতামত এটা হতে পারে না। আমারও জন্মভিটা ওদেশেই। আমি ওদেশের মানুষকে খুব ভাল করে জানি, তারা এসব বলতে পারে না।’

তিনি বলেন,‘পূজার উদ্বোধনের দিন তো কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও ছিল। ফিরহাদ হাকিম প্রতিবছরই আমার পূজার উদ্বোধনে থাকে। এবছর কলকাতায় বাংলাদেশ উপরাষ্ট্রদূতসহ একাধিক মুসলমান ধর্মাবলম্বী অফিসার হাজির ছিলেন। কিন্তু তারা কেউই পূজার ধর্মীয় কোনো কাজ তো করেনি। প্রতিমা উদ্বোধন করেছেন আদ্যাপীঠের কালী পূজারী হিন্দু সন্ন্যাসী মুরাল ভাই।’

কালী পূজার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ভিডিও দেখিয়ে তিনি বলছিলেন,‘ওখানে একটা বড় প্রদীপ রাখা ছিল। সকলেই সেই প্রদীপটা জ্বালিয়েছেন। আমি যেমন জ্বালিয়েছি, তেমন সাকিব আল হাসান, ফিরহাদ হাকিম - সবাই জ্বালিয়েছেন। প্রদীপ জ্বালালেই কি জাত যায় নাকি?’ প্রশ্ন পরেশ পালের।

পরেশ পাল এখনো বাংলাদেশে গেলে মুসলমান বন্ধুদের বাড়িতেই থাকেন, আবার ঈদের সময়ে কোরবানির গরু কিনতেও গরুর হাটে যান তাদের সঙ্গে। তার নির্বাচনী এলাকাতে একটা বড় সংখ্যক মুসলমান থাকেন, যারা তাকে ভোট দেয় বছরের পর বছর। তাই তার মাথাতেই আসেনি যে সাকিব আল হাসানকে কালীপূজার উদ্বোধনের মঞ্চে আমন্ত্রণ করে তিনি কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে পারেন, বলছিলেন পরেশ পাল।

তিনি আরো বলেন,‘সাকিব আল হাসানের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনে পরিচয়। যদি আমাদের মাথায় আসতো যে পূজার উদ্বোধনে আসার জন্য সে ধর্মীয় অনুশাসন বিরোধী কিছু করছে, তাকে কি আমি আসতে বলতাম? জেনে শুনে কি বন্ধুকে কেউ সমস্যায় ফেলে? ধর্ম বিরোধী কিছুই সে করেনি আমাদের পূজায় এসে।’

বিতর্কের শুরু যেভাবে

মাত্রই ক্রিকেটে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে সাকিবের। ৬ নভেম্বর ঢাকায় ফেরার পরদিনই ঢাকার একটি সুপারশপ উদ্বোধন করতে গিয়ে বিতর্কের জন্ম দেন বাংলাদেশের এই ক্রিকেট সুপারস্টার। অভিযোগ দেশে ফিরে কোয়ারেন্টাইনে না থেকে বরং সুপারশপ উদ্বোধনের সময়ও স্বাস্থ্যবিধির বিষয়গুলো বিবেচনায় নেননি তিনি এবং ওই অনুষ্ঠানে ছিলো অনেক মানুষের ভিড়।

এরপর বৃহস্পতিবার বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার সময় নতুন করে আলোচনায় আসেন এক ভক্তের সেলফি তোলার চেষ্টার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের জন্য। তবে সাকিব বলেছেন যে, ওই ভক্ত তার অনুমতি ছাড়াই স্বাস্থ্যবিধি না মেনে প্রায় গায়ের ওপর ওঠে ছবি তোলার চেষ্টা করেছেন এবং এ সময় তাকে সরিয়ে দিতে গেলে ওই ব্যক্তির ফোন হাত থেকে পড়ে যায়।

ওদিকে সাকিব ভারতে একটি পূজার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন এখন খবর ও ছবি প্রকাশ করে কিছু গণমাধ্যম। তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ ও উষ্মা প্রকাশ করা শুরু হয় মূলত শনিবার থেকেই। এর মধ্যে মহসিন তালুকদার নামে এক ব্যক্তি রোববার রাতে তার ফেসবুক আইডি থেকে লাইভ ভিডিওতে সাকিবকে অশ্লীল গালিগালাজ ও হত্যার হুমকি দেন। পাশাপাশি তিনি সাকিবকে পাকিস্তানী ক্রিকেটারদের অনুসরণেরও পরামর্শ দেন ওই ভিডিওতে। পরে অবশ্য এই ব্যক্তিকে সুনামগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। সূত্র : বিবিসি