করোনায় আক্রান্তদের পায়ে রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধের উপায়

করোনায় আক্রান্তদের পায়ে রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধের উপায়

মেহেরুন-নেসা

মানুষের মৃত্যুর বিভিন্ন কারণের মধ্যে শরীরের রক্ত জমাট বাঁধা একটি অন্যতম কারণ। গবেষকদের মতে প্রতি ৪ জনে ১ জন রক্ত জমাট বাঁধার কারণে মৃত্যুবরণ করে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। যদি মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধে তাকে স্ট্রোক, হৃদপিণ্ডে হলে হার্ট অ্যাটাক, ফুসফুসে হলে পালমোনারি এম্বোলিসম, পায়ে হলে ডিপ ভেইন ফ্রোম্বোসিস বলে। 

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া হলেও সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধাও মৃত্যুর বড় একটি কারণ। করোনা আক্রান্ত রোগীদের পালমোনারি এম্বোলিসমে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এই পালমোনারি এম্বোলিসমের বড় একটি কারণ ডিপ ভেইন থ্রোম্বসিস বা পায়ে রক্ত জমাট বাঁধা। পায়ের পেছনে যে বড় শিরা রয়েছে ( কাফ ) সেটাতে রক্ত জমাট বাঁধাকে ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস বলে। এই জমাট বাঁধা রক্ত যদি প্রবাহিত হয়ে সরাসরি ফুসফুসে প্রবেশ করে, তবে ফুসফুসের যে বড় দুটি নালি রয়েছে তা বন্ধ হয়ে যায়। একে বলা হয় পালমোনারি এম্বোলিসম। এর ফলে রোগীর তাতক্ষণিক তীব্র শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা হয়ে মৃত্যুবরণ করে। তাই পায়ের রক্ত জমাট বাঁধা যদি প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করা যায় তবে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
পায়ে রক্ত জমাট বাঁধার কারণঃ

  • দীর্ঘ সময় শরীর অচল অবস্থায় থাকা ( বসে থাকা; শুয়ে থাকা )
  • অপারেসনের পরবর্তী সময়
  • শরীরে অতিরিক্ত ওজন
  • প্র্যাগনেন্সি বা গর্ভকাল।
  • দীর্ঘ সময় ভ্রমণ।
  • শরীরে রক্ত জমাট বাধতে দেয় না এমন উপাদানের ঘাটতি।
  • বংশগত কারণ।

লক্ষণঃ

  • পা ফুলে যাওয়া।
  • পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হওয়া।
  • পা লালচে হয়ে যাওয়া।
  • পায়ের পেছনের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া।
  • পা অবশ বা ভারভার লাগা।

প্রতিরোধঃ  প্রতিরোধ আমাদের নিজেদের হাতেই। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সামান্য সচেতনতাই পারে ডিভিটি ( পায়ে রক্ত জমাট বাঁধা ) প্রতিরোধ করতে।

  • শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।
  • প্রতিদিন ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করতে হবে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
  • দীর্ঘসময় বসে কাজ করা যাবেনা। গবেষণা বলছে, যারা টানা  ৯০ মিনিটের অধিক সময় বসে কাজ করে তাদের ডিভিটি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই প্রতি ১ ঘন্টা পরপর কিছু সময়ের জন্য হাটাহাটি করতে হবে।
  • নিয়মিত শারীরিক ব্যয়াম করতে হবে।
  • ঢিলেঢালা কাপড় পরিধান করতে হবে। কারণ টাইট কাপড়ে রক্তচলাচলের প্রবাহ ব্যাহত হয়।
  • দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হলে পায়ের পেছনে থোরের মতো মাংসপেশিটাকে ২ঘন্টা পরপর ২ মিনিট ম্যাসাজ করতে হবে।

কিছু ব্যয়ামঃ  যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য বসে থাকতে হয়, তাহলে কিছু ব্যয়াম ১.৫ - ২ ঘণ্টা পরপর করতে পারেন। এতে আপনি ডিভিটি তৈরি হওয়া থেকে মুক্তি পাবেন। যেমন-  

এ্যাঙ্কেল সার্কেল বা পায়ের গোড়ালি ঘুরানোঃ

পা সোজা করে বসে গোড়ালি সহ পায়ের পাতা সামান্য উপরে তুলে পায়ের পাতা সামনে পিছনে এবং বৃত্তকারে ঘুরান এটি প্রতি ঘন্টায় ৩০ সেকেন্ড করুন।

ফুট পাম্পসঃ

সোজা হয়ে বসে একবার গোড়ালি মেঝেতে রেখে পায়ের পাতা সহ আঙ্গুল উপরে উঠান এবং নামান। এবার গোড়ালি উপরে উঠান নামান এটি ছন্দাকারে প্রতি ১.৫ থেকে ২ ঘন্টা পরপর ৩০-৪০ সেকেন্ড করুন।

হাটু উঠানামা বা নী লিফ্টঃ

হাত রানের উপর রেখে হাটু ভাঁজ করে বুক  বরাবর এক পা করে উঠান এবং নামান। এটিও প্রতি ১.৫-২ ঘন্টা পরপর ৩০-৪০ সেকেন্ড পরপর করুন।

পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর করে দাড়ানোঃ

সোজা হয়ে পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ান। ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন, এবার ছাড়ুন। এভাবে ২ ঘন্টা পরপর ২০-৩০ বার করুন। এতে আপনার পেছনের মাংসপেশিতে টান লাগবে এবং রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে।


নিয়মিত ব্যায়াম করুন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করুন, সুস্থ থাকুন ।

মেহেরুন-নেসা
ফিজিওথেরাপি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ