পাবনায় করোনা পরীক্ষার নামে অভিনব প্রতারণা, ক্লিনিক মালিক আটক

পাবনায় করোনা পরীক্ষার নামে অভিনব প্রতারণা, ক্লিনিক মালিক আটক

পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশ্য দিবালোকে স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন ছাড়াই করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ ও ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগে ঈশ্বরদীর রূপপুর মেডিকেয়ার ক্লিনিকের মালিক আব্দুল ওহাব রানাকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার (৮ জুলাই) রাতে তাকে আটক করা হয়। আটক রানা রূপপুর এলাকার জামাত আলীর ছেলে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও করোনার থাবায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন। মারা যাচ্ছেন বহু মানুষ। বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে কীটের অভাবও দেখা যায়। ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তার বড় উদাহরণ। আর এর মধ্যে এই ক্লিনিক মালিক কোন সাহসে অনুমোদন ছাড়াই মানুষের জীবন-মরণ নিয়ে খেলায় মেতেছেন? নিশ্চয় এর পিছনে কোন হাতি-বোয়াল জড়িত কীনা তা ক্ষতিয়ে দেখা উচিৎ বলে বিভিন্ন মহল থেকে দাবী উঠেছে।  

আরএনপিপিতে কর্মরত শ্রমিক ও থানা সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিন ধরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত রাশিয়ান কোম্পানি টেস্ট রোসেমসহ বিভিন্ন কোম্পানির শ্রমিকদের করোনা পরীক্ষার জন্য প্রকল্প সংলগ্ন ফটু মার্কেট এলাকার একটি পরিত্যক্ত ইটভাটার মাঠে তাবু টানিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এই নমুনা ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রূপপুর মেডিকেয়ার ক্লিনিকের মালিক আব্দুল ওহাব রানা এবং নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নটাবাড়িয়া গ্রামের আরশেদ আলী সরকারের ছেলে সুজন আহমেদ পরস্পর যোগসাজশ করে এসব কর্মকান্ড করেন।

প্রতিটি রিপোর্টের জন্য ৫/৬ হাজার টাকা নেয়া হয়। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতি রিপোর্টেও জন্য পাঠানো হয় সাড়ে তিন হাজার টাকা। এরপর অনলাইনে রূপপুর মেডিকেয়ার ক্লিনিকের ঠিকানায় রিপোর্ট আসে। সেখান থেকে রিপোর্ট রোগীদের নিকট পাঠানো হয়। ক্লিনিক মালিক অবৈধভাবে করোনার নমুনা সংগ্রহ করে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন।

 তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, করোনা টেস্টের রিপোর্টগুলোতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পক্ষে চেয়ারম্যান ডাঃ আবু সাইদের স্বাক্ষর রয়েছে। প্রকল্পের শ্রমিকদের হাতে করোনা টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্ট। তারপরও প্রতিনিয়তই প্রকল্পের শ্রমিকদের মধ্যে আক্রান্তের হার বাড়ছেই। ফলে রূপপুর মেডিকেয়ার ক্লিনিক থেকে প্রাপ্ত টেস্টের রিপোর্ট নিয়েও সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। গত ৪ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পে কর্মরত টেস্ট রোসেমসহ বিভিন্ন কোম্পানির প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক ও কর্মচারীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আর প্রত্যেকের নিকট থেকে নেয়া হয়েছে ৫/৬ হাজার টাকা।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডাঃ আবু সাইদ বলেন, রূপপুর মেডিকেয়ার ক্লিনিকের মালিক আব্দুল ওহাব রানাকে আমি চিনি না। ওই নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে আসা ৫০ জনের নমুনা টেস্টের রিপোর্ট আমরা গত ৬ তারিখে পাঠিয়েছি। তিনি আরও জানান, রূপপুর প্রকল্পের শ্রমিকদের করোনা টেস্টের জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। আমাদের ধারণা ছিল রূপপুর মেডিকেয়ার সরকারি অনুমোদন নিয়ে এই কাজ করছে। কিন্তু তাদের কোনো অনুমোদন নেই জানতে পেরে তাদের কোনো নমুনা আমরা আর গ্রহণ করছি না। এ জন্য তারা হয়তো অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টেস্ট করাচ্ছেন। তবে রূপপুর মেডিকেয়ার ক্লিনিক সম্পর্কে আমাদের পূর্বেই খোঁজ খবর না নিয়ে কাজ করাটা ভুল হয়েছে। পুলিশ ক্লিনিক মালিক আব্দুল ওহাব রানাকে আটক করেছে। এখন তার অপরাধের সঙ্গে আমাদের প্রতিষ্ঠানকে জড়ানো হচ্ছে

ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এফ এ আসমা খান জানান,  জেলা ও উপজেলা হাসপাতালেই করোনার নমুনা সংগ্রহের কিট সংকট। এই জন্য আমরাই নিরুপায়। সেখানে অনুমোদনহীন রূপপুর মেডিকেয়ার ক্লিনিক কীভাবে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ ও রিপোর্ট প্রদান করছে তা আমার জানা নেই। তবে ক্লিনিকের মালিক অভিনব প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিতেই করোনার নমুনা সংগ্রহ ও রিপোর্ট দিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ঈশ্বরদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ নাসির উদ্দিন জানান, “রূপপুর মেডিকেয়ার ক্লিনিকের মালিক অবৈধভাবে করোনা পরীক্ষার জন্য আরএনপিপিতে কর্মরত শ্রমিকদের নমুনা সংগ্রহ ও রিপোর্ট প্রদান করার অপরাধে ক্লিনিক মালিক আবদুল ওহাব রানাকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি পাবনা সিভিল সার্জন অফিসকে অবহিত করা হয়েছে।  নির্দেশনা পেলেই আটক আব্দুল ওহাব রানাসহ দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।”

আজ বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই ) সকাল নয়টার সময় এব্যাপারে পাবনা সিভিল সার্জন ডাঃ মেহেদী ইকবালের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান,“ বিষয়টি ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। এমনকি কী ঘটেছে তা জানি না। তবে এসপি সাহেব আমার কাছে জানতে চেয়েছেন, আমি তাকে এটিই বলে দিয়েছি।”