সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে হামলার শিকার সাংবাদিক; হাসপাতালে ভর্তি

সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে হামলার শিকার সাংবাদিক; হাসপাতালে ভর্তি

প্রতীকী ছবি

সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন বার্তা২৪.কম’র নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম। বুধবার ( ১৬ অক্টোবর) দুপুরের দিকে সদর উপজেলার কীর্তিপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নওমুসলিম অমিত হাসানের পরিবার স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে আছেন- এমন সংবাদের ভিত্তিতে সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম ও সাংবাদিক মিন্টু ক্যামেরায় ভুক্তভোগী পরিবারের বক্তব্য নিচ্ছিলেন।এ সময় এলাকার মাস্তান বাহিনীর প্রধান রকি হোসেনসহ অজ্ঞাত আরো ১০-১৫ জন অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে করতে হাত থেকে ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে আছাড় মেরে ভেঙে ফেলেন ও রকির নেতৃত্বে এলোপাতাড়ি মারধর করে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী। এরপর রকির বাড়ির সামনে নিয়ে গিয়ে প্রায় ৩ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন।

একপর্যায়ে সংবাদ পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিক সংগঠন জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন নওগাঁর নেতারা পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় সাংবাদিক শহিদুল ইসলামকে উদ্ধার করেন। এরপর শারীরিক অবস্থা গুরুতর হলে চিকিৎসার জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি জানতে পারি হিন্দুধর্ম থেকে নওমুসলিম হওয়া এক পরিবারকে স্থানীয় মেম্বার রেজাউল হকের ছেলে ওয়াহেদুর রহমান রকি, আতাউরের ছেলে আরিফ, কামাল দেওয়ানের ছেলে মুন্না দেওয়ান, গিয়াসের ছেলে শামীম হোসেন, রমজান আলীর ছেলে আল আমিন, আতাউরের ছেলে রাকিব, রেজাউলের ছেলে রাজনসহ আরো অনেকে মিলে অবরুদ্ধ করে তাদের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছে। এমন সংবাদে সরেজমিনে নওমুসলিম পরিবারের বাড়িতে ঘটনার সত্যতা জানতে যাই এবং আমার সঙ্গে একজন সিনিয়র সাংবাদিকও ছিলেন।

এরপর রকির নেতৃত্বে আরো অজ্ঞাতনামা কয়েকজন এসে হাত থেকে ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে মারতে শুরু করে। অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। বলে, ভুয়া সাংবাদিক, তোকে আজকে মেরে ফেলব। তোর এত সাহস হয় কী করে? তুই আমাদের মাঝে কেন এসেছিস? কী কাজ তোর? আমরা কী করব, না করব তোর সমস্যা কোথায়? আমাদের নামে ডিবি পুলিশে অভিযোগ হয়েছে। ডিবি পুলিশ সাহস পায় না আমাদের কাছে আসতে আর দুই পয়সার সাংবাদিক তুই এসেছিস আমাদের ছবি তুলতে। তোকে আজকে মেরে ফেলব বলে আমাকে বেধড়ক মারপিট করে। একপর্যায়ে রকি বলে, এই সাংবাদিককে নিয়ে চল। ওকে আজকে মেরে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখব।

এরপর মুন্না নামে একজন মোবাইলে নওমুসলিমের বিরুদ্ধে নিউজ করার জন্য মোটা অংকের টাকা দিতে চায়। সেটি আমি প্রত্যাখ্যান করলে তারা আবারো মারধর করে রকির বাড়ির সামনে আমাকে নিয়ে এসে আবার মারপিট শুরু করে। এ সময় রকির বাবা রেজাউল হক নিষেধ করলে আমাকে আটক করে রাখে। পড়ে কোনোমতে জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন নওগাঁর ফেসবুক গ্রুপে জানালে সাংবাদিক ও পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়।

ভুক্তভোগী নওমুসলিম মোছা. নূরে  জান্নাত বলেন, আমি আল্লাহর ভয়ে হিন্দুধর্ম থেকে মুসলিম হয়েছি। মুসলিম হওয়ার পর থেকে স্থানীয় মেম্বার রেজাউল করিমের ছেলে ওয়াহেদুর রহমান রকি আমাদের কাছে থেকে ৪ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে বাড়ি থেকে বের হতে দেবে না। আমি টাকা না দিতে চাওয়ায় আমাকে ও আমার পরিবারের সবাইকে বাড়িতে এসে রকিসহ সবাই এলোপাতাড়ি মারপিট করে। এ সংবাদ সাংবাদিককে জানালে শহিদুল ইসলাম ও তার সহকর্মী মিন্টু হোসেন এসে আমাদের বক্তব্য নেয়ার সময় তারা ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ভেঙে শহিদুলকে মারপিট করে আটকে রাখে।

নওগাঁ সদর মডেল থানার এসআই মো. মেজবাহ বলেন, ঘটনাটি জানার পর পুলিশ পাঠিয়ে সাংবাদিক শহিদুল ইসলামকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই বিষয়ে এখনো থানায় লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।