বাফুফে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সন্দিহান ক্রীড়া উপদেষ্টা

বাফুফে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সন্দিহান ক্রীড়া উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

দিন চারেক পরেই বাফুফে নির্বাচন। এরই মধ্যে হঠাৎ বাফুফে ভবনে আকস্মিক আগমন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার। ফুটবলাঙ্গনের অনুমান ছিল, নির্বাচন সংক্রান্ত বিশেষ কোনো বার্তা ক্রীড়া উপদেষ্টার এই সফর। আধ ঘণ্টার একটু বেশি সময় বাফুফে ভবনের তার প্রথম সফর ছিল মূলত সৌজন্যমূলক। 

ক্রীড়া উপদষ্টো বাফুফে ভবনে আসবেন। এই খবর পেয়ে উৎসুক জনতা ও ফুটবলপ্রেমী অনেকেই বাফুফে ভবনে ভিড় জমান। এজন্য ভবনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। ক্রীড়া উপদেষ্টা বাফুফে ভবনে সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গেই কিছুক্ষণ আলাপ করে সংবাদ সম্মেলন কক্ষে এসেছেন। 

ক্রীড়া উপদেষ্টা বাফুফে সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষারকে পাশে রেখে বলেন,‘বিসিবিতে গিয়েছিলাম। বাফুফে নির্বাচন চলছে। এ নিয়ে অনেক কিছুই শুনছি, অভিযোগও আছে। এজন্য আজ বাফুফেতে আসা। এ নিয়ে কথা বললাম।’ বাফুফে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে অধিভুক্ত সংস্থাগুলোতে কাউন্সিলর ফরম প্রদান নিয়ে। সেখান থেকেই অভিযোগ শুরু হয়ে নানা পর্যায় পর্যন্ত অতিবাহিত হয়েছে। সেই অভিযোগের অনেক কিছুই বাফুফের একটি পক্ষ আমলে নেয়নি। সব কিছু পেরিয়ে এখন প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত এবং চার দিন পর নির্বাচন। 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্রীড়া ক্ষেত্রে বাফুফে নির্বাচনেই প্রথম। এই নির্বাচন নিয়ে গোটা ক্রীড়াঙ্গনেই তাকিয়ে রয়েছে। তবে এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে সন্দিহান খোদ যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা,‘বাফুফের নির্বাচন কতটুকু গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয় এ নিয়ে আমি সন্দিহান। আগের অনেক কাউন্সিলরই এখানে রয়েছেন। যাদের অনেকে পলাতক ও আসামী এ রকমটা শুনেছি। ফিফার বাধ্যবাধকতা, বাফুফের নিয়মের দিকে সম্মান রাখতে হচ্ছে।’

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর সকল জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কমিটি ভেঙেছেন। ২০০৮ সালে বাফুফে জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে বেরিয়ে জেলা-বিভাগীয় ফুটবল এসোসিয়েশন করেছে। ফলে এখানে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোনো এখতিয়ার নেই। এই জেলা-বিভাগের ভোটগুলোই বাফুফের এক পক্ষের ভোট ব্যাংক হিসেবে কাজ করে। এই সম্পর্কে উপদেষ্টার বক্তব্য,‘ভোট আসলেই ডিএফএগুলো সরব হয়। নিয়মিত জেলা পর্যায়ে লিগ হয় না। এরকমটাই শুনেছি। এর দায় যারা এত দিন ছিলেন বাফুফেতে তাদেরকেই দেব।’ 

বাফুফে কর্মকর্তারা সরকারের কাছে নানা আবদার করেন। অন্য দিকে মন্ত্রণালয়-এনএসসি যখন জবাবদিহিতা আদায় করতে চায়। তখন আবার ফিফা-এএফসি’র জুজুর ভয় দেখায়। চার দিন পরেই বাফুফে নির্বাচন। নতুন কমিটির সঙ্গে কিছু কাজ করতে চান উপদেষ্টা, ‘ফিফার সঙ্গে কিছু বিষয় আলোচনা প্রয়োজন। বাফুফের মাধ্যমে আমরা সেটি করব’। 

বাংলাদেশের ফুটবলে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা মাঠ। ১১ অক্টোবর থেকে ফুটবলে নতুন মৌসুম শুরু হওয়ার কথা ছিল। মাঠ না থাকায় সেটি দেড় মাস পিছিয়েছে। ফুটবলের মাঠ সংকট ও বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম সংস্কার নিয়ে উপদেষ্টা বলেন,‘স্টেডিয়ামের প্রাথমিক বাজেট ছিল ৯৮ কোটি। সেটা বেড়ে এখন ১৫৫। আমার কাছেও ফাইল এসেছিল। আমি ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলেছি। ফ্লাডলাইটে একটু সময় লাগতে পারে। এই স্টেডিয়ামে  এত ব্যয়ের আগে সম্ভাব্যতা যাচাই সেভাবে হয়নি। চট্রগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়াম ফুটবলের জন্য ডেডিকেট করব।’

বাফুফে পরিচালনা করেন মূলত নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তারা। তাদের পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন পেশাদার স্টাফরা। কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে স্টাফদের সঙ্গে বসার কারণ সম্পর্কে বলেন,‘কর্মকর্তাদের অনেককে নিয়ে দুদক কাজ করছে। এজন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় আসিনি।’ 

সারা বিশ্বে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। বাংলাদেশেও এক সময় খুব জনপ্রিয় ছিল। এখন ফুটবলের আগের সেই অবস্থা না থাকলেও ফুটবলের জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি,‘প্রান্তিক পর্যায়ে এখনো ফুটবল অত্যন্ত জনপ্রিয়। ২০১০ সালের পর থেকে জাতীয় পর্যায়ে সেই জনপ্রিয়তা নেই। এজন্য বাফুফে অনেকাংশে দায়ী যারা দায়িত্বে ছিলেন। এমনও শুনেছি, এখানে পৃষ্ঠপোষকতা আসলে ৭০% ব্যয় হয় বাকি ৩০% পকেটে যেত।’