ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে পরিকল্পনা: সাতটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ
ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করে হোয়াইট হাউসে ফিরছেন। নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যার মধ্যে ছিল অর্থনীতি, অভিবাসন এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের বিষয়গুলো। জয়লাভের পর ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমার লক্ষ্য খুবই স্পষ্ট—আমি আমার প্রতিশ্রুতি পালন করব।’
রিপাবলিকান পার্টি এবার সিনেটেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে, যা ট্রাম্পের লক্ষ্য অর্জনকে সহজ করে তুলবে। তাহলে, চলুন দেখে নেওয়া যাক তিনি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোন সাতটি কাজ করতে চান:
১. অবৈধ অভিবাসীদের ফিরিয়ে দেওয়া
নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প একাধিকবার জানিয়েছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অবৈধ অভিবাসীকে বিতাড়িত করবেন। পাশাপাশি, মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। প্রথম মেয়াদে এই প্রাচীরের কাজ শুরু হলেও শেষ হয়নি। তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কাজ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আইনগত ও লজিস্টিক সমস্যা হতে পারে এবং এটি দেশের অর্থনীতিকে ব্যাহত করতে পারে।
২. অর্থনীতিতে মনোযোগ
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ছিল এই নির্বাচনে অন্যতম প্রধান বিষয়। ট্রাম্প নির্বাচনের পরপরই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, তিনি কর কমানোর মাধ্যমে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করবেন এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য বিদেশি পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করবেন। বিশেষ করে চীন থেকে আমদানির ওপর অতিরিক্ত ৬০% শুল্ক চাপানোর পরিকল্পনা তাঁর রয়েছে।
৩. জলবায়ু নীতিতে কাটছাঁট
ট্রাম্প ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর পরিবেশ সংরক্ষণ আইন বাতিল করেছিলেন এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রথমে প্রত্যাহার করেছিল। এবারও তিনি জলবায়ু নীতিতে পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি শিল্পকে সহায়তা করতে ইলেকট্রিক গাড়ির বিরোধিতা করার কথা বলেছেন। তিনি জীবাশ্ম জ্বালানির উত্তোলন বাড়ানোরও পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন।
৪. ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ
ট্রাম্প ইউক্রেনের যুদ্ধের ব্যাপারে বরাবরই সমালোচক ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, ক্ষমতায় আসলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সমঝোতা তৈরি করবেন এবং তা থামিয়ে দেবেন। তবে, তিনি ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এবং গাজার যুদ্ধ থামানোর আহ্বানও জানিয়েছেন।
৫. গর্ভপাতের অধিকার রদ
২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার বাতিল করেছিল। ট্রাম্প নির্বাচনী বিতর্কে বলেছিলেন, তিনি গর্ভপাতের অধিকার রদ সংক্রান্ত আইনে স্বাক্ষর করবেন না। যদিও তাঁর সমর্থকরা এই ইস্যুতে আরও রক্ষণশীল মনোভাব পোষণ করেন।
৬. ৬ জানুয়ারির দাঙ্গাকারীদের ক্ষমা
ট্রাম্পের সমর্থকরা ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালিয়েছিলেন, এবং ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই ঘটনায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। তিনি বলেছেন, ক্ষমতায় এলে এই দাঙ্গায় জড়িত সমর্থকদের মধ্যে অনেককে মুক্তি দেবেন, কারণ তিনি মনে করেন যে অনেককে রাজনৈতিক বন্দী করা হয়েছে অযথা।
৭. বিশেষ কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথকে চাকরিচ্যুত
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবনে হামলার উসকানি দেওয়ার এবং গোপন নথি সরানোর অভিযোগে বিশেষ কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথ তদন্ত করছেন। ট্রাম্প আগেই বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় ফিরলে "দুই সেকেন্ডের মধ্যে" জ্যাক স্মিথকে চাকরিচ্যুত করবেন। এখন দেখার বিষয়, ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার পর তিনি কী ব্যবস্থা নেন।