হাদিসের দৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় কৃপণ কে
ছবি: সংগৃহীত
কৃপণ বলতে সাধারণত এমন লোককেই বোঝানো হয়, যিনি অর্থ ব্যয় করতে অনিচ্ছুক, এমনকি মৌলিক প্রয়োজনেও টাকা খরচ করতে চান না জমা করার জন্য। কৃপণ শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ব্যয়কুণ্ঠ বা অত্যন্ত সঞ্চয়প্রিয়। আসলে সম্পদ থাকা সত্ত্বেও চাহিদানুযায়ী ব্যয় না করাকে কৃপণতা বলে। কৃপণ ব্যক্তি দান-সদকা করতে পারে না। হজ-ওমরা করতে পারে না। জাকাত দিতে পারে না। যে কারণে আল্লাহ তাকে পছন্দ করেন না। কেয়ামতের দিন কৃপণতার কারণে জমানো সম্পদ দিয়ে গলায় বেড়ি বানিয়ে পরানো হবে। (সুরা আলে ইমরান: ১৮০)
আমরা কি জানি এ ধরনের কৃপণের চেয়েও বড় এক কৃপণ রয়েছে? আল্লাহর রাসুল (স.) সাহাবিদেরকে সেই বড় কৃপণের পরিচয় জানিয়ে দিয়েছেন। সেই বড় কৃপণটি হলো- যে নবীজির নাম শুনেও দরুদ পড়ে না।
হজরত আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেম, একদিন আমি রাসুল (স.)-এর কাছে এলাম। তখন তিনি বললেন, ‘তোমাদেরকে কি বলে দেব না, সবচেয়ে বড় কৃপণ কে?’ সবাই বললেন, ‘অবশ্যই হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘যার সামনে আমার নাম উল্লেখ করা হলো, অথচ সে (আমার নাম শুনেও) আমার প্রতি দরুদ পড়ল না, সে-ই হলো সবচেয়ে বড় কৃপণ।’ (আত তারগিব: ১৬৮৪)
নবীজির প্রতি দরুদ অনেক মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। এর ফজিলত অসীম। হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে আমার ওপর একবার দরুদ পড়বে আল্লাহ তার ওপর ১০টি রহমত নাজিল করবেন, তার ১০টি গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং ১০টি দরজা বুলন্দ হবে।’ (নাসায়ি: ১/১৪৫; মুসনাদে আহমদ: ৩/১০২; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ২/৪৩)
দরুদ পাঠকারীর জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন। হজরত আমের ইবনে রবিআহ (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (স.)-কে খুতবার মধ্যে বলতে শুনেছি- ‘আমার ওপর দরুদ পাঠকারী যতক্ষণ দরুদ পড়ে ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা, সে দরুদ বেশি পড়বে না কম।’ (মুসনাদে আহমদ: ৩/৪৪৫; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৬/৪০; সুনানে ইবনে মাজাহ: ৯০৭)
অন্য হাদিসে আবদুললাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যে আমার উপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পড়েছে।’ (জামে তিরমিজি: ১/১১০)
যারা নবীজির নাম শুনেও দরুদ পড়ে না, তারা অভিশপ্ত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার নবী (স.) মিম্বরে ওঠার সময় তিনবার আমিন বলেন। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি মিম্বরে উঠলেন আর বললেন, আমিন-আমিন-আমিন। তিনি বলেন, জিবরাইল আমার কাছে এসে বললেন, যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারেনি, সে জাহান্নামে যাবে। আল্লাহও তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন। আপনি বলুন আমিন। আমি বললাম, আমিন। যে ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় তার মা-বাবা কিংবা তাদের একজনকে পেল, আর তাদের সেবাযত্ন করল না; এ অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করল। সে জাহান্নামে যাবে। আল্লাহ তাআলাও তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন। আপনি বলুন, আমিন; আমি বললাম, আমিন। আর যার কাছে আপনার আলোচনা করা হলো, অথচ সে আপনার ওপর দরুদ পাঠ করল না; অতঃপর সে মৃত্যুবরণ করে, সে জাহান্নামে যাবে। আল্লাহও তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন। আপনি বলুন, আমিন। আমি আমিন বললাম। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৯০৭)
কোথাও নবীজির নাম উচ্চারিত হলে দরুদ পড়া ওয়াজিব। একই বৈঠকে বা লেখায় একাধিকবার আলোচিত হলে একাধিকবার দরুদ পড়া মুস্তাহাব; প্রথমবার পড়া ওয়াজিব। পবিত্র কোরআনেও নবীজির প্রতি দরুদ ও সালামের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর ওপর দরুদ পাঠান, হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, তোমরাও নবীর ওপর দরুদ পাঠাতে থাকো এবং উত্তম অভিবাদন (সালাম) পেশ করো।’ (সুরা আহজাব: ৫৬)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে নবীজির নাম শুনলেই দরুদ পড়ার তাওফিক দান করুন। সবসময় বেশি বেশি দরুদ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।