লজ্জার সঙ্গে ঈমানের নিবিড় সম্পর্ক

লজ্জার সঙ্গে ঈমানের নিবিড় সম্পর্ক

ছবিঃ সংগৃহীত।

লজ্জা একটি মানবীয় গুণ। মানুষের জীবনে যত ধরনের বৈশিষ্ট্য আছে, সেসবের অন্যতম হলো লজ্জা। লজ্জাশীলতা ঈমানদার নারী ও পুরুষের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘লজ্জা ঈমানের অঙ্গ।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫১)

লজ্জার পরিচয়

আরবিতে হায়া অর্থ লজ্জা বা সংকোচ বোধ করা, ইতস্তত বোধ ইত্যাদি। সহজভাবে বলা যায়, লজ্জা হচ্ছে এক প্রকার মানবীয় অনুভূতি, যা মানুষকে মন্দ কাজে বাধা প্রদান করে এবং জনসমক্ষে সম্মানহানির ভয় সৃষ্টি করে।

লজ্জা দুই প্রকার। যথা—১. প্রকৃতিগত বা স্বভাবগত লজ্জা, ২. অর্জিত লজ্জা।

১. আল্লাহ প্রদত্তভাবে মানুষের মধ্যে যে লজ্জা আগে থেকেই বহাল থাকে, তাই প্রকৃতিগত বা স্বভাবগত লজ্জা। যেমন—উলঙ্গ হতে লজ্জা বোধ করা।

২. মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার পর দ্বিনের আদব, আখলাক, শিষ্টাচার সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের পর মানুষের মধ্যে যে লজ্জার সৃষ্টি হয়, তাকে অর্জিত লজ্জা বলে। এই লজ্জাই মূলত উত্তম লজ্জা, যা মানুষকে সব মন্দ কাজে বাধা প্রদান করে অন্যায় থেকে বিরত রাখে।

লজ্জার সঙ্গে ঈমানের সম্পর্ক

মানবজীবনে লজ্জার গুরুত্ব অনেক বেশি। লজ্জার সঙ্গে ঈমানের নিবিড় সম্পর্ক আছে। লজ্জা নামক মানবীয় গুণটির কারণেই মানুষ সত্যিকার অর্থে মানুষ হতে পারে, অন্যায় থেকে বিরত থাকতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি ধর্মের একটা চরিত্র আছে, আর ইসলামের মূল চরিত্র হলো লজ্জাশীলতা।’(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৮১)

যে ব্যক্তির লজ্জানুভূতি যত বেশি, তার ঈমানের জোর তত বেশি। সে ব্যক্তি তত বেশি পাপ থেকে বিরত থাকতে পারে। এই লজ্জাবোধ তাকে সব মন্দ ও অশ্লীল কাজে বাধা প্রদান করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘লাজুকতা শুধু কল্যাণই বয়ে আনে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬১১৭)

অন্যদিকে লজ্জাহীনতা হলো দুর্বল ঈমানের লক্ষণ। যার লজ্জানুভূতি যত কম, তার ঈমানের জোর তত কম। লজ্জাহীন ব্যক্তির কোনো কাজে বাছবিচার থাকে না। ফলে সে যেকোনো মন্দ কাজ সংকোচ ছাড়াই করে ফেলে। যে কারণে সে ধীরে ধীরে অন্যায়ের পথে ধাবিত হতে থাকে। এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বাণী—‘যখন তুমি নির্লজ্জ হয়ে পড়বে, তখন যা ইচ্ছা তা-ই করো।’ (বুখারি, হাদিস : ৬১২০)

যার লজ্জা আছে তার সব আছে, সে তত বেশি পরিশুদ্ধ। যার লজ্জা নেই তার কিছুই নেই। এই লজ্জাহীনতার কারণেই মানুষ নানা ধরনের অন্যায়মূলক কর্মকাণ্ড করে থাকে। ধাবিত হয় অশ্লীলতার পথে।

পবিত্র কোরআনের অন্য জায়গায় ইরশাদ হয়েছে, ‘...আর আল্লাহ অশ্লীলতা, মন্দ ও জুলুম করতে নিষেধ করেছেন...।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯০)

লাজুকতা প্রত্যেক ব্যক্তিকে পরিশুদ্ধ করে সব অন্যায় থেকে বিরত রেখে জান্নাতের পথে ধাবিত করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘লজ্জা ঈমানের অঙ্গ আর ঈমানদারদের স্থান জান্নাত। অন্যদিকে নির্লজ্জতা দুশ্চরিত্রের অঙ্গ, আর দুশ্চরিত্রের স্থান জাহান্নাম।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০০৯)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেছেন, ‘লজ্জা ও অল্প কথা বলা ঈমানের দুটি শাখা। আর অশ্লীলতা ও অতিরিক্ত কথা মুনাফিকির দুটি শাখা।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০২৭)

মহান আল্লাহ আমাদের লজ্জাশীলদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন।