ফ্লোরিডায় ঝড় চান ট্রাম্প-বাইডেন উভয়েই

ফ্লোরিডায় ঝড় চান ট্রাম্প-বাইডেন উভয়েই

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন

দুপুর গড়াচ্ছে। কমছে রোদের তেজও। অ্যাভিয়েটর সানগ্লাস পরে মঞ্চে উঠছেন জো বাইডেন। পরনে গাঢ় নীল রঙের স্যুট। আকাশি জামা। সিঁড়ি ভাঙছেন ঋজুভাবে, দৃঢ় পা ফেলে। সামনে পোডিয়াম। সিঁড়ি থেকে মঞ্চের দূরত্ব মেরেকেটে ১৮ ফুট। হালকা একটা দৌড়। মুহূর্তে সেই দূরত্ব টপকে মঞ্চে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী। যেন জবাব দিলেন ট্রাম্পের ‘ঘুমন্ত জো’র কটাক্ষের! খুলে ফেললেন স্যুট। মুখ থেকে সরালেন সার্জিক্যাল মাস্কও। জনতার উদ্দেশে হাত নাড়তে নাড়তে বাইডেন বক্তৃতা শুরু করলেন এই বলে—‘ফ্লোরিডায় একটা ঝড় চাই। দূরন্ত সেই ঝড়ের রং হোক নীল। তাহলেই খেলা শেষ। ক্ষমতা আপনাদের হাতে। আমি তারই অপেক্ষায়।’

পড়ন্ত রোদ মাথায় নিয়ে ফ্লোরিডার ব্রডওয়ে কাউন্টির ‘ড্রাইভ-ইন’ সমাবেশ তখন উত্তাল। বাইডেনের কথা শেষ হতেই গাড়ি থেকে হাত নেড়ে সমর্থনের আশ্বাস উপস্থিত জনতার। সংক্রমণের চোখরাঙানিতে বেশির ভাগ ডেমোক্র্যাট গাড়িতে বসেই ছিলেন। মুখে মাস্ক, দূরত্ববিধি মেনে চলার কঠোর নিয়ন্ত্রণ দেখে তাদের ধন্যবাদ জানান বাইডেন। বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে করমর্দনের উষ্ণতা বড্ড মিস করছি। কিন্তু আমরা দায়িত্বশীল আচরণ করব। এটা কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য নয়। একজন দেশপ্রেমিকের দায়িত্ব। সেটাই পালনের চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ পাশাপাশি, ট্রাম্পের সমাবেশকে ‘সুপারস্প্রেডার’ বলে কটাক্ষ করে বাইডেন বলেন, ‘ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী মহামারীর পরিস্থিতি সামলাতে চূড়ান্ত ব্যর্থ। এখন হাল ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ সংক্রামিত হচ্ছেন।’ জনমত সমীক্ষায় এখনও ফ্লোরিডায় ১.৪ পয়েন্টে এগিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী। সমীক্ষার হিসেব ধরে রাখতে মরিয়া বাইডেন। প্রতি মুহূর্তে বুঝিয়ে দিলেন, ফ্লোরিডা চাই-ই তার। স্রেফ একটা ঝড় উঠুক নীল রঙের।

মার্কিন ভোটে তুরুপের তাস ফ্লোরিডা চান ট্রাম্পও। হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয় ইনিংসের জন্য এই ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেটে জয় পেতেই হবে তাকে। এই সহজ সমীকরণ বিলক্ষণ জানেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট। ট্যাম্পায় নির্বাচনের শেষ ল্যাপের প্রচারে ‘নীল ঝড়’-এর পাল্টা ‘লাল ঝড়’ তোলার ডাক দেন তিনি।

অর্থনৈতিক সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরে ট্রাম্প বলেন, ‘নতুন পথে অগ্রসর হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। তৃতীয় ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৩৩.১ শতাংশে পৌঁছে রেকর্ড গড়েছে।’ একই সঙ্গে বিঁধতে ছাড়েননি প্রতিদ্বন্দ্বীকেও। তাঁর কথায়, ‘বিডেন ক্ষমতায় এলে মহা সর্বনাশ! তালা ঝুলবে গোটা দেশেই। এটাই তার পরিকল্পনা। মুখ থুবড়ে পড়বে অর্থনীতি। ইউরোপে ফের লকডাউন জারি হচ্ছে। কিন্তু আমরা আর লকডাউন করব না। ব্যবসা-বাণিজ্য চালু থাকবে।’ করোনা মোকাবিলায় আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ভ্যাকসিন আনার আশ্বাসও দিয়েছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট। বলেছেন, ‘প্রথম দফায় বয়স্ক নাগরিকরা টিকা দেয়া হবে।’ দ্বিতীয়বার কুর্সি দখলের অঙ্কে প্রবীণরাও যে তার বাজি!

শুধুই পপুলার কিংবা ইলেক্টোরাল ভোট নয়, আরো একটি কারণে দুই প্রার্থীর কাছে ফ্লোরিডা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৬৪ সাল থেকে প্রতিবার এই প্রদেশ যে প্রার্থীর পক্ষে রায় দিয়েছে, শেষ হাসি হেসেছেন তিনিই। ব্যতিক্রম ঘটেছিল মাত্র একবার—১৯৯২ সালে। গত নির্বাচনে এখানে হিলারির থেকে মাত্র ১.২ শতাংশ বেশি ভোট পেয়েছিলেন ট্রাম্প। আর তাতেই মিলেছিল হোয়াইট হাউসের ছাড়পত্র। সেকথা ভোলেননি ‘ডন’। ফলে এবার ‘লাল’ নাকি ‘নীল’ ঝড় তুলবে ফ্লোরিডা, সে দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।

সূত্র : বর্তমান