আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলির সঙ্গে কোনো কিছু তুলনীয় নয়

আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলির সঙ্গে কোনো কিছু তুলনীয় নয়

সংগৃহীত

মাওলানা কাসেম শরীফ   

সুতরাং যিনি সৃষ্টি করেন, তিনি কি তার মতো, যে সৃষ্টি করে না? তবু কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না? (সুরা : নাহল, আয়াত : ১৭)

তাফসির : আগের কয়েকটি আয়াতে আসমান ও জমিনে অবস্থিত মহান আল্লাহর বিভিন্ন নিয়ামতের কথা বলা হয়েছিল। সেসব আয়াতে মানুষের সৃষ্টি, আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি, জীবজন্তুর সৃষ্টি, পাহাড়, বৃষ্টি, নদ-নদী, বৃক্ষ ও ফল-ফসলের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছিল।

একটু চিন্তা করলেই দেখা যায়, মানুষের প্রয়োজনীয় এসব কিছু সৃষ্টিতে সৃষ্টিজগতের কারো হাত নেই। এগুলো কোনো বিজ্ঞানীর আবিষ্কৃত বস্তু নয়। কোনো স্রষ্টা ছাড়া এমনি এমনি এগুলো ভেসে ওঠেনি। কোনো কর্তা ছাড়া এগুলো ক্রিয়াশীল হয়নি। সুতরাং এগুলোর পেছনে অবশ্যই কোনো না কোনো মহাশক্তি রয়েছে, যে শক্তির অসীম ক্ষমতাবলে এগুলো সৃজিত হয়েছে। এবং ওই শক্তিবলে হাজার বছর ধরে এসব বস্তু নিজ নিজ কাজে অবিচল। সেই মহাশক্তির নাম মহান আল্লাহ। তিনিই এসবের স্রষ্টা। মানুষের উচিত সেই পরাক্রমশালী সত্তার ইবাদত করা; কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ যথাযথ নিয়মে তাঁর ইবাদত করে না। অনেকে তাঁর অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না। যারা তাঁর অস্তিত্বে বিশ্বাসী, তাদের মধ্যে অনেকে সেই স্রষ্টার সঙ্গে শিরক করে। সৃষ্ট বস্তুকে তাঁর সমকক্ষ দাঁড় করায়। অথচ সৃষ্টি ও কর্মে তাঁর কোনো অংশীদার নেই। আলোচ্য আয়াতে সে বিষয়ে ইঙ্গিত করে প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে যিনি আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা, তিনি কি সেসব মূর্তি বা প্রতিমার সঙ্গে তুলনীয়, যেগুলো কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না? বরং সেগুলোকেও সৃষ্টি করা হয়েছে! আশ্চর্য, মানুষ নিজের সৃষ্ট প্রতিমাকেই তার ভাগ্যবিধাতা বলে জ্ঞান করে, যদিও এই প্রতিমাগুলো নিজেদের ভাগ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
আলোচ্য আয়াতে মহান আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলিতে শিরকের আশঙ্কা নাকচ করা হয়েছে। এখানে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা হয়েছে যে বিশ্বজাহানের একমাত্র স্রষ্টা মহান আল্লাহ। এ আয়াতের প্রায় কাছাকাছি বক্তব্য এসেছে অন্য আয়াতে। ইরশাদ হয়েছে, ‘এটা আল্লাহর সৃষ্টি, তিনি ছাড়া অন্যরা কী সৃষ্টি করেছে, তুমি আমাকে দেখাও! সীমা লঙ্ঘনকারীরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে আছে। ’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ১১)

পবিত্র কোরআনে শয়তানের নাম ও পরিচয়

আধুনিক যুগে বিজ্ঞানীরা বহু প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন। আক্ষরিকভাবে এগুলো মানুষের সৃষ্টি হলেও বাস্তবিকভাবে এগুলোর স্রষ্টাও মহান আল্লাহ তাআলা। কেননা যে মেধার ওপর ভর করে মানুষ এসব আবিষ্কার করছে, সে মেধা আল্লাহর দান। এটি কারো সৃষ্ট বস্তু নয়। অন্যদিকে বিজ্ঞানীরা যেসব উপকরণ ব্যবহার করে নানা প্রযুক্তি আবিষ্কার করছেন, সে উপকরণ তাঁদের বানানো নয়। এগুলো প্রাকৃতিক উপকরণ। এ উপকরণ মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। বিজ্ঞানীদের কাজ এতটুই যে তাঁরা জোড়াতালি দিয়ে কলকবজা তৈরি করেছেন। বিজ্ঞানীরা প্রকৃতি প্রদত্ত বায়ু, পানি, আগুন ইত্যাদি থেকে বৈদ্যুতিক প্রবাহ সৃষ্টি করেছেন। তাঁরা প্রকৃতি প্রদত্ত পেট্রল বের করে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করেছেন। প্রাচীন ও আধুনিক যুগের বিজ্ঞানীরা একজোট হয়েও কোনো লোহা, পিতল, অ্যালুমিনিয়াম তৈরি করতে পারেন না। বায়ু ও পানি সৃষ্টি করা তাঁদের সাধ্যের বাইরে। প্রকৃতিকে কাবু করে, প্রকৃতির সৃজিত শক্তি ব্যবহার করে মানুষের জীবনযাপনকে সহজ ও সাবলীল করাই বিজ্ঞানীদের কাজ। তাই বিজ্ঞানীদের গবেষণা শুধু বিস্ময়কর বিশ্বের রহস্য উদ্ঘাটনে আর প্রকৃতিকে জয় করার তীব্র আকাঙ্ক্ষায়। সুতরাং সামান্য চিন্তা করলে দেখা যায়, যাবতীয় নতুন আবিষ্কারও প্রকৃতপক্ষে পরম সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহরই সৃষ্টি।