২১ সাল হউক শিক্ষার্থীবান্ধব সাল

২১ সাল হউক শিক্ষার্থীবান্ধব সাল

প্রাণের ক্যাম্পাসে আবারও আড্ডায় ফিরতে চায় শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

সানজিদা ইয়াসমিন লিজা-

বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে, ঠিক তেমনি শিক্ষার্থীরা সুন্দর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এর জন্য এই গতানুগতিক সৌন্দর্যে ব্যাঘাত ঘটেছে। আমরা সবাই আজ আমাদের প্রাণপ্রিয় ক্যাম্পাস থেকে অনেক দূরে যার যার বাসায় অবস্থান করছি। অনলাইনে ক্লাস হয়, ফোনে বন্ধুদের সাথে কথা হয় নিয়মিত কিন্তু তবুও কোথায় যেন একটা শূণ্যতা বিদ্যমান। সেটা হচ্ছে বাস্তবতার হাসি, আনন্দ, বেদনার আড়ালে আজ সব কিছু আমরা অনলাইনে করছি যার সব কিছুতে রয়েছে কৃত্তিমতার ছোয়া। তবে এই সময়ে বাসায় অবস্থানকালে ক্লাসের পরেও আমরা প্রচুর পরিমান সময় হাতে পেয়েছি। সেই সময় ও সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনলাইনে অনেকে কম্পিউটারের বেসিক কোর্স, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং ও ফ্রিল্যান্সিং শিখছে। সব থেকে বড় বিষয় হচ্ছে প্রচুর সময় হাতে পাওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার অভ্যাসটা ও গড়ছে অনেকে। অনেকেই আছে যারা বিভিন্ন ধরনের সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণ করে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করছে। অন্যদিকে, বিভিন্ন ধরণের শখের কাজ, চিত্রাঙ্কন, ঐতিহ্যবাহী ও দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করেও অবসর সময় উপভোগ করছে অনেকে। তবে দীর্ঘ এই অপ্রত্যাশিত ছুটিতে এই বিষয়টা স্পষ্ট যে, তরুন প্রজন্মের বাস্তমুখী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু! যদিও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের মেধার চেয়ে মুখস্থের প্রখরতা কে বেশি মূল্যায়ন করে। 

বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা হচ্ছে ১৬ কোটি ৫৭ লাখ। তারমধ্যে ২৬ লাখ বেকার এবং ১৪ লাখ ৬৫ হাজার মৌসুমি বেকার। বেকার বলতে শ্রমশক্তির সেই অংশকে বুঝানো হয়, যারা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সন্ধান করা সত্ত্বেও কোনো কাজ পায় না। বেকারত্ব মানেই হতাশা, লাঞ্চনা এবং তরুনদের বুকফাটা চাপাকান্নার অসহ্য মুহুর্ত। 

আমরা জানি, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। এই লকডাউনে চুরি,ডাকাতি,ধর্ষণ সহ আরও অনেক সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে যা কি না আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে মানুষ অলস বসে থাকলে কত খারাপ কাজ করতে না পারে! 

বর্তমানে বাংলাদেশে এমন অবস্থা হয়েছে অর্ধেক জীবন কেটে যায় সার্টিফিকেট অর্জন করতে করতে আর বাকি জীবন কেটে যায় সেগুলো ফটোকপি করতে করতে। তবুও হায়! চাকরি নামক সোনার হরিণটি আজও আমাদের হাত থেকে হাজার দূরে অবস্থান করছে।
 
দেশে যে হারে বেকারের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তাই সবাই চাকরির পিছনে না ছুটে আত্নকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।গতানুগতিক নিয়মে সবাই চিন্তা করে একটা চাকরি কোনো রকম হয়ে গেলেই জীবন স্বার্থক আর বাকি জীবনটা নিরাপদ থাকবে। কোনো বিষয়ে উদ্যোগ নিলে প্রথমদিকে একটু ঝামেলা পোহাতে হয় বলেই তরুণ প্রজন্মের ব্যবসা বা উদ্যোক্তা হওয়ার প্রতি আগ্রহ দেখা যায় না। তবে পরিশ্রম, ত্যাগী ও ধৈর্য্যশীল হয়ে সাহসের সাথে এই ধাপগুলো অতিক্রম করতে পারলেই দিনশেষে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে। চাকরির জন্য সিভি নিয়ে দিনের পর দিন ছুটতে থাকা তরুণ দিনশেষে যখন একরাশ হতাশা ও বিষাদগ্রস্ত মলিন মুখখানা নিয়ে পরিবারের কাছে অবনত মস্তকে ফিরে আসে, সেই ব্যক্তি যখন উদ্যোক্তা হয়ে নিজের পরিবারের পাশাপাশি সমাজের তার মতো হাজারো বেকারের পরিবারে ভূবন জুড়ানো হাসি ফোটায়, সে যে কি পরিমানের আত্নতৃপ্তি ও আনন্দের মুহুর্ত - তা কেবল তারাই বলতে ও বুঝতে পারবে যারা হাজারো কষ্ট ও ত্যাগ শিকার করে উদ্যোক্তা হয়েছেন।

তবে  একজন উদ্যোক্তা বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক জগতে টিকে থাকতে হলে অনেক ত্যাগ - তিতিক্ষা স্বীকার করতে হয়। একজন উদ্যোক্তা কেবল উদ্যোক্তা নয়, একজন রুচিশীল ও সৃজনশীল মনের ও অধিকারী। বেশিরভাগ সফল উদ্যোক্তার জীবনী পাঠ করলে দেখা যাবে তারা হলিউড সেলিব্রেটিদের মতো ছন্নছড়া জীবন তাদের নয়।

একজন উদ্যোক্তা কেবল একজন আত্নকর্মসংস্থানকারী ব্যক্তিই নয়, দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তিকে গতিশীল রাখার ধারক ও বাহক।

আজকে যদি আমরা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে কাজে লাগাতে না পারি তাহলে দিনশেষে যে ব্যর্থতা  সে তো আমাদেরই! তাই সুস্থ, সবল, শান্তিপুর্ণ ও গঠনমূলক জীবন অতিবাহিত করার জন্য চাকরির পিছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হয়ে উটুক দেশের প্রতিটি তরুন - সেটাই হুক আমাদের  "২০- এর শেখা আমাদের ২১ এর প্রত্যয়।"

লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ২য় বর্ষ 
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।