দুই যুগ পর আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি চলাচল শুরু

দুই যুগ পর আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি চলাচল শুরু

ছবি : প্রতিনিধি

আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরি চলাচল শুরু হওয়ায় আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে পদ্মা-যমুনা নদীর দু’পাড়ে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে। দীর্ঘ প্রায় দু’যুগ পর স্থায়ী ও আনুষ্ঠানিকভাবে পাবনাসহ উত্তরা লবাসীর বহুল প্রত্যাশিত পাবনার আরিচা-আরিচা ফেরি চলাচল শুরু হলো। বেগম রোকেয়া, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, কেতকী নামের তিনটি ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে।

শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কজিরহাট ঘাটে উদ্বোধন করেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহামুদ চৌধুরী।

এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষামূলকভাবে আরিচা-কাজিরহাট ফেরি চলাচল শুরু হয়। সেদিন পরীক্ষামূলক ভাবে একটি ফেরী কাজিরহাট থেকে ছেড়ে যায় আরিচা ঘাটে। অপরদিকে আরিচাঘাট থেকে ছেড়ে একটি ফেরি কাজিরহাট ঘাটে পৌঁছায়।

এতোদিন ধরে পাবনা, নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবানগঞ্জসহ উত্তরা লের ১৬ জেলার লাখ লাখ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজিরহাট থেকে স্পিডবোট ও ইঞ্জিন চালিত শ্যালো নৌকায় আরিচা হয়ে ঢাকা যাতায়াত করছেন। বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে সড়কপথে ঢাকা পৌঁছাতে যেখানে ৭ থেকে ৮/৯ ঘন্টা পর্যন্ত সময় লাগছে। সেখানে নদীপথে মাত্র ৪/৫ ঘন্টায় গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

ফেরিতে এ পথ পাড়ি দেয়া যাবে এক থেকে দেড় ঘণ্টায় বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক গণমাধ্যমকে জানান, পাবনাসহ আশপাশের জেলাগুলোর বিভিন্ন পরিবহন খুব স্বল্প সময়ে যাতায়াতের জন্য ও বঙ্গবন্ধু নেতুর উপরে চাপ কমিয়ে আনার লক্ষে নৌ-পথকে গুরত্ব দিয়ে চালু করা হলো এই ফেরি চলাচল।

নদী পথে এ সকল যানবাহনে পারাপারে জীবনের ঝুঁকি থাকলেও সড়ক ও সেতুপথে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয় এ সাধারণ যাত্রীদেরকে। যে কারণেই নিম্ন আয়ের মানুষেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ট্রলারে নদী পার হচ্ছিলেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন শামসুল হক টুকু এমপি, গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি, আহম্মেদ ফিরোজ কবির এমপি ও মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য নাইমুর রহমান দুর্জয়, বিআইডব্লিউটিএ-চেয়ারম্যান কমোডোর গোলাম সাদেকসহ বিআইডব্লিউটিসি এবং বিআইডবিলউটিএ’র কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

উদ্বোধনের পরই যাত্রী পারাপার শুরু করে ফেরিগুলো। তাই ঘাটে ভীড় করতে শুরু করেছে যানবাহন। দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে উল্লাস ও আনন্দের কথা জানিয়েছেন যাত্রী ও ঘাট এলাকার ব্যবসায়ীরা।

আরিচা-কাজিরহাট নৌরুট চালুর জন্য গত তিন মাস আগে থেকে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেজিংসহ মার্কিং পয়েন্ট ও বিকন বাতি স্থাপন করাসহ সকল কাজ সম্পূন্ন করে বিআইডব্লিউটিএ।

শনিবার ফেরি বেগম রোকেয়া, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ও কেতকী দিয়ে যাত্রা শুরু হলো। আনন্দের ফুয়ারা বয়ে যাচ্ছে দু’পাড়ের মানুষের মধ্যে। পূর্বের ন্যায় আবার দু’পাড়ে দোকানদারসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রাণচা ল্য ফিরে এসেছে। দিবা-রাত সর্ব সময় মানুষের কোলাহল থাকবে নদীর দু’পাড়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা যমুনার নব্যতা সংকট দূরত্ব কমানোর জন্য ২০০১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আরিচা থেকে পাটুরিয়ায় স্থানান্তরিত করা হয়  ফেরি সার্ভিস। এরপর থেকে জৌলুস হারাতে শুরু করে ঐতিহ্যবাহী আরিচা-কাজিরহাট ফেরিঘাট। বন্ধ হয়ে যায় হাজারো মানুষের ছোট-বড় শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবে আবারো ফিরে পেয়েছে এ দু’টি ঘাট।

তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৬৩ সালের ৩১ মার্চ কর্ণফুলি নামের একটি ফেরি দিয়ে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়। এরপর ঐ নৌরুটে যুক্ত হয়েছিল ছোট-বড় ২৮টি ফেরি। ১৯৯৭ সালে যমুনা সেতু উদ্বোধনের পর গুরুত্ব কমতে থাকে আরিচ ঘাটের। পদ্মা-যমুনার নব্যতা সংকট ও দূরত্ব কমানোর জন্য ২০০১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আরিচা থেকে পাটুরিয়ায় স্থানান্তরিত করা হয় ফেরি সার্ভিস। সবশেষে ২০০২ সালে ১৫ নভেম্বর আরিচা ঘাট থেকে শেষ দু’টি প্লাটুন পাটুরিয়া ঘাটে নেয়ার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি চলাচল। ২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সেই নৌরুটে আবার ফেরি চলাচল শুরু হলো।