বাংলাদেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন স্থগিতের পরিকল্পনা নেই : স্বাস্থ্য সচিব

বাংলাদেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন স্থগিতের পরিকল্পনা নেই : স্বাস্থ্য সচিব

বাংলাদেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন স্থগিতের পরিকল্পনা নেই : স্বাস্থ্য সচিব - ছবি : সংগৃহীত

ভ্যাকসিন নেয়ার পর ব্লাড ক্লট বা রক্ত জমাট বাঁধার অভিযোগ তুলে ইউরোপের কয়েকটি দেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকার ব্যবহার স্থগিত করলেও বাংলাদেশে ভ্যাকসিন কার্যক্রম স্থগিত করার কোনো পরিকল্পনা নেই।

কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন প্রয়োগ স্থগিত করেছে। বাংলাদেশে স্থগিত করার কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা প্রশ্ন করলে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আব্দুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশে টিকা নেয়ার পর এর সাইড এফেক্টের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

`কি কারণে কয়েকটি দেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ব্যবহার স্থগিত করেছে সে বিষয়ে আমার সঠিক কারণ জানা নেই' উল্লেখ করে তিনি বলেন, `এখন পর্যন্ত যারা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন তারা সবাই ভালো আছেন। তাই বাংলাদেশে এই টিকার ব্যবহার স্থগিত করার কোনো পরিকল্পনা নেই।'

জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, লাটভিয়া, সুইডেন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ব্যবহার স্থগিত করেছে। পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া ও কঙ্গোও এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ স্থগিত করেছে। থাইল্যান্ড স্থগিত করলেও মঙ্গলবার থেকে তারা আবারো অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রয়োগ শুরু করেছে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের প্রায় এক কোটি সত্তর লাখ মানুষ ইতোমধ্যেই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহণ করেছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার দাবি, এর মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ৩৭টি। ওষুধ নির্মাতা জানিয়েছে, ভ্যাকসিনের কারণে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার কোনো প্রমাণ নেই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) বলছে, এ টিকার সাথে ব্লাড ক্লট বা রক্ত জমাট বাঁধার কোনো প্রমাণ তারা পায়নি। ব্লাড ক্লট শরীরের মাধ্যমে চলাচল করতে পারে এবং হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও ফুসফুসে মারাত্মক ব্লক হতে পারে।

ডব্লিউএইচও এর নির্দেশনা অনুসারে বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রম চলছে। ডব্লিউএইচও থেকে এই টিকা ব্যবহার স্থগিত করার মতো কোনো নির্দেশনা আসেনি। অতএব এই টিকা ব্যবহার বাংলাদেশে চলবে, বলেন মান্নান।

তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে বাকি ২ কোটি টিকার ডোজ যথা সময়েই পাবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে কঠোর অবস্থান

কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধি ঠেকাতে সরকার আরও কঠোর অবস্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করলে জরিমানা ও অন্যান্য শাস্তির নির্দেশনাসহ জেলাগুলোতে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

সচিব বলেন, যেহেতু আবারও কোভিড আক্রান্ত সংখ্যা বাড়ছে তাই মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সারাদেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। ‘এবিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকবে।’

‘দেশের সমস্ত হাসপাতালকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হাসপাতালগুলো যেন সঠিকভাবে প্রস্তুত থাকে সেটি আমরা মনিটরিং করছি যাতে কোভিড আক্রান্ত রোগীকে সঠিক সেবা দেয়া যায়। সকল হাসপাতাল কতৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে,’ বলেন মান্নান।

লকডাউনের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে সচিব বলেন, করোনা আবার বাড়লেও লকডাউনের কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় দুই মাস পর করোনাভাইরাস সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে এবং এটি টানা চারদিন ধরে এক হাজারেরও বেশি রয়েছে।

রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়লেও কোনো সংকট দেখা দেবে না আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।

আগের মাসগুলোতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার ও মৃত্যু উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছিল কিন্তু হঠাৎ করে নতুন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি তাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে জানিয়ে সচিব এজন্য স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে মানুষের অসচেতনতাকে দায়ী করেন।

‘অনেকেই কোভিড-১৯ পরীক্ষা করতে চায় না, তারা কীভাবে জানবে যে তারা ভাইরাস বহন করছে কিনা?’ তিনি প্রশ্ন করেন।

গতবছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম কোভিড-১৯ ধরা পড়ে। একই বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করে সরকার।

মান্নান বলেন, ‘৩০ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু হওয়ার কথা ছিল, তবে সংক্রমণ বর্তমান হারে বাড়তে থাকলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি পর্যালোচনা করবে এবং প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’

এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশিদ আলম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যে, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্দেশিকা মানার ক্ষেত্রে মানুষের অজ্ঞতা এবং অবহেলা ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

তিনি বলেন, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই তরুণ প্রজন্ম এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) ভর্তির প্রয়োজন হচ্ছে। খুরশিদ আরো বলেন, সতর্কতা ও সাবধানতার কোনো বিকল্প নেই।

সূত্র : ইউএনবি