অন্যের দোষ প্রকাশ করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়

অন্যের দোষ প্রকাশ করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়

অন্যের দোষ প্রকাশ করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়

মানবচরিত্রের একটি দুর্বল দিক হলো অন্যের দোষ চর্চা করা। মানুষ নিজের ব্যাপারে সুধারণা রাখে, নিজেকে নির্দোষ ভাবে। আর অপরের দোষ চর্চা করে বেড়ানো লাভজনক কারবার মনে করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘আল্লাহ কোনো মন্দ বিষয় প্রকাশ করা পছন্দ করেন না। তবে কারো প্রতি জুলুম হয়ে থাকলে সে কথা আলাদা। আল্লাহ শ্রবণকারী এবং বিজ্ঞ।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৪৮)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, আল্লাহ পছন্দ করেন না যে আমরা একে অন্যের বিরুদ্ধে বদ দোয়া করি বা মন্দ বিষয় প্রকাশ করি, যদি না আমাদের ওপর অন্যায় করা হয়। তবে যদি কারো ওপর জুলুম করা হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে আল্লাহর অনুমতি রয়েছে। তার পরও ধৈর্য ধারণ করাই উত্তম। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

ভুলত্রুটি, গুনাহ করা মানুষের স্বভাবজাত অভ্যাস। মানুষ হিসেবে ভুলত্রুটি হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে তা কারো ধারে প্রকাশ না করা। যে অন্যের দোষ গোপন করে, বিশ্বনবী (সা.) তার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে অন্যের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬৯৯)

বিপরীতে যারা অন্যের দোষ প্রচার করে, তাদের ব্যাপারে বলেছেন, ‘তোমরা মুসলমানদের দোষত্রুটি, ভুলভ্রান্তি খুঁজে বের কোরো না। যে ব্যক্তি অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ায় ও প্রকাশ করে দেয়, স্বয়ং আল্লাহ তার দোষ প্রকাশ করে দেন। আর আল্লাহ যার দোষত্রুটি প্রকাশ করেন, তাকে নিজের বাড়িতেই লাঞ্ছিত করেন।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৮৮০)

সাহাবিরা পরের দোষ চর্চা করা অপছন্দ করতেন। একবার উকবা ইবনে আমির (রা.)-এর কাছে তাঁর কাজের কেরানি বলল, আমার প্রতিবেশী লোকটা মদপান করে। আমি তাকে বারণ করেছি; কিন্তু সে বিরত হয়নি। তাই এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাকে পুলিশে দেব।  উকবা (রা.) বলেন, অপেক্ষা করো। কেরানি পুনরায় এ কথা বলল। তিনি আবার বলেন, উপেক্ষা করে যাও। আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি অন্যের দোষ ঢেকে রাখে, সে ব্যক্তির মর্যাদা এমন ব্যক্তির মর্যাদার মতো, যিনি জীবন্ত দাফনকৃত কোনো শিশুকে উদ্ধার করে বাঁচিয়ে দেন। (সুনানে আবি দাউদ)

আবু বকর (রা.)-এর কাছে এক ব্যক্তি হাজির হয়ে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার স্বীকারোক্তি দেয়। আবু বকর (রা.) বলেন, কথাটি আর কারো কাছে বলেছ কি? লোকটি বলল, না। তিনি বলেন, আল্লাহর দরবারে তাওবা করো এবং তোমার স্বীকারোক্তি আল্লাহর পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখো। আবু বকরের পরামর্শে লোকটির প্রশান্তি এলো না। সে ওমর (রা.)-এর কাছে ছুটে গেল। তখন ওমর (রা.) তাকে একই পরামর্শ দেন। (মুয়াত্তা মুহাম্মদ)

লেখক :  উপপরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ