পশ্চিমবঙ্গে করোনা : প্রশ্নের মুখে বাড়ল অ্যাক্টিভ কেস

পশ্চিমবঙ্গে করোনা :  প্রশ্নের মুখে বাড়ল অ্যাক্টিভ কেস

পশ্চিমবঙ্গে করোনা : প্রশ্নের মুখে বাড়ল অ্যাক্টিভ কেস

এতদিন অ্যাকটিভ কেস সংখ্যা কমছিল। এবার হঠাৎ তা বাড়তে শুরু করল। অথচ অন্যদিকে কমছে দৈনিক সংক্রমণ। রহস্যজনক কাণ্ড, সন্দেহ নেই। কী করে এখন অ্যাকটিভ কেস বাড়ছে? স্বাস্থ্য দপ্তরের বুলেটিনে ৭ দিন আগে অর্থাৎ ৫ জুন অ্যাকটিভ কেসের সংখ্যা ছিল ৪৪ হাজারের ওপরে। ১০ জুনের মধ্যে এই সংখ্যা কমতে কমতে নেমে আসে ১৪ হাজারের ঘরে। ঐ দিনই চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যুক্তিসঙ্গত দাবি করে বলেন, অ্যাকটিভ কোভিড কেস সংখ্যা কোনোভাবেই ৬০- ৭০ হাজারের নিচে নয়। কারণ কেউ কোভিড আক্রান্ত হলে ১০ দিন পর্যন্ত তিনি সংক্রমিত থাকেন।

সুতরাং ১০ দিনের আক্রান্তের সমষ্টিকে হিসাবে ধরে হবে। নাহলে হিসেবে গরমিল আছে বলে মানতে হবে। গত ২ দিনেও এই যুক্তিকে খণ্ডন করতে পারেনি স্বাস্থ্য দপ্তর। তার বদলে পরের দিন অর্থাৎ ১১ জুন প্রায় ১ হাজার বাড়ানো হলো অ্যাকটিভ কোভিড কেস সংখ্যা। ১২ জুন শনিবার দেখা যাচ্ছে এই সংখ্যা আরও বেড়ে চলে গেছে ১৬ হাজারের ঘরে। দৈনিক সংক্রমণ কমলে অ্যাকটিভ কোভিড কেস যেখানে কমে আসার কথা, সেখানে তা বাড়ছে। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিভ্রান্তি ও ধোঁয়াশা।       

জনস্বাস্থ্য বিধি অনুযায়ী প্রকাশিত হচ্ছে না স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে ক্রমশ আরো বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে রাজ্যে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই মুহূর্তে অন্ততপক্ষে ৬০ হাজার মানুষ করোনা আক্রান্ত। কিন্তু স্বাস্থ্য দপ্তরের বক্তব্য এই সংখ্যা  ১৬ হাজার ছাড়িয়েছে মাত্র। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের যুক্তির কাছে হার মানছে স্বাস্থ্য দপ্তর। তাঁরা বলছেন যেদিন কেউ কোভিড আক্রান্ত হচ্ছেন বলে ধরা হবে, তারপর থেকে অন্তত ৯-১০ দিন তাঁর শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি থাকবে। অর্থাৎ এই সময়টায় তাঁর সংস্পর্শে এলে অন্য কেউ কোভিড আক্রান্ত হতেই পারেন।

তাহলে তাঁকে সংক্রমিত বলেই ধরা হবে। এর অর্থ তিনি অ্যাকটিভ কোভিড কেস সংখ্যার মধ্যেই পড়ছেন। এইভাবে গত ১০ দিনে দৈনিক আক্রান্তের হিসাব করলে যে সংখ্যা দাঁড়ায় সেই হিসাবে অ্যাকটিভ কোভিড কেস ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজারের মধ্যে থাকার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যদপ্তর এতদিন সেই পথে হাঁটেনি। চিকিৎসকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে বৃহস্পতিবার চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানান। তাঁরা আরো বলেন, এই সংখ্যার সঙ্গে হোম আইসেলেশন ও সেফ হোমে থাকা মানুষকেও ধরতে হবে। সেই চিঠির কোনো জবাব এখনো পর্যন্ত স্বাস্থ্য দপ্তর দেয়নি বলে জানা গেছে। 

বৃহস্পতিবার এএইচএসডি তাদের চিঠিতে পরিস্কার বলে, ওই তারিখের আগের দিন পর্যন্ত হোম আইসোলেশনে প্রায় ১ লক্ষ মানুষ ছিলেন বলে বুলেটিনে দেখিয়েছে স্বাস্থ্যদপ্তর। সুতরাং অ্যাকটিভ কোভিড কেস আরও অনেকটাই বাড়বে। তাঁদের মধ্যে বহু মানুষ করোনা সংক্রমিত হয়ে চিকিৎসাধীন। সুতরাং অ্যকটিভ কোভিড কেস কোনও যুক্তিতেই ১৪ হাজার হতে পারে না।

আশ্চর্যজনকভাবে এই চিঠি পাওয়ার পরেই সেই রাতের বুলেটিনে হোম আইসোলেশনের সংখ্যা কমিয়ে ৬ হাজারে নিয়ে গেল স্বাস্থ্য দপ্তর। কি করে একদিনের মধ্যে প্রায় ৯২ হাজার মানুষ হোম আইসোলেশন থেকে মুক্ত হয়ে গেলেন তা নিয়ে ছড়িয়েছে তীব্র চাঞ্চল্য। এর কোনও ব্যাখ্যা এখনো পর্যন্ত নেই স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে। শুক্রবারে আবার দেখা গেল এক হাজারের ওপর বেড়েছে হোম আইসোলেশনে তাকা মানুষের সংখ্যা।

শনিবারের বুলেটিনে সেই সংখ্যা আরও এক হাজার বাড়ানো হয়েছে, এই সংখ্যা হয়েছে ৮ হাজারের ওপর। অত্যন্ত রহস্যজনকভাবে দৈনিক সংক্রমণ কমছে কিন্তু অ্যাকটিভ কোভিড কেস বাড়ছে কি করে তা নিয়ে এবার শোরগোল পড়েছে।  জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের এক বড় অংশের বক্তব্য, করোনার যাবতীয় তথ্য চাপা দিতে গিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর এখন  নিজেরাই পরিসংখ্যান গুলিয়ে ফেলছে।  

ওদিকে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা কমিয়ে লকডাউনও শিথিল করতে চাইছে রাজ্য সরকার। আর  লকডাউনের বিধি নিষেধ শিথিল হলেই করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের সম্ভাবনা বাড়বে— বলেই অভিমত চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। এখনো পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে শুধু লোকাল ট্রেন ও বাস চলাচল। বাকি সবই শিথিল। লকডাউনের বিধিনিষেধে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ফলে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা  আবার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথাই বলছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

করোনা ভাইরাস ক্ষণে ক্ষণে তার চরিত্র বদলাচ্ছে। এরসঙ্গে পাল্লা দিয়ে যুঝে উঠতে পারছে না মানুষের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এখনো পর্যন্ত যে টিকা বা ওষুধ বের হয়েছে তারও বদলে যাওয়া নতুন প্রজাতির ভাইরাসের সঙ্গে এঁটে ওঠার সম্ভাবনা কমে আসছে। শনিবার স্বাস্থ্য দপ্তরের দেওয়া বুলেটিন বলছে রাজ্যে নতুন করে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৪,২৮৬। কিন্তু রাজ্যের কোভিড হাসপাতালগুলিতে আইসিইউ বা এইচডিইউ বেড সংখ্যা মাত্র ৩৫৬৬।

চিকিৎসকরা বলছেন তার মধ্যে অনেকগুলি বেডই তো ভর্তি। তাহলে একসঙ্গে অনেকে যদি সঙ্কটজনক অবস্থায় চলে যান তাহলে সংক্রমণ কমলেও সবার জন্যে বেডের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে মৃত্যুর আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে কিছু মানুষের। সুতরাং করোনা পরস্থিতি এখনো ভয়াবহই আছে।

সূত্র : গণশক্তি