ঢাকায় করোনা ভাইরাসে আরেকটি ঢেউ আসতে পারে : বিশেষজ্ঞ

ঢাকায় করোনা ভাইরাসে আরেকটি ঢেউ আসতে পারে : বিশেষজ্ঞ

ঢাকায় করোনা ভাইরাসে আরেকটি ঢেউ আসতে পারে : বিশেষজ্ঞ

 রাজধানী ঢাকায় করোনা ভাইরাসের আরেকটি ঢেউ আঘাত হানার আশংকা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে গেলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সেটি কতটা সামাল দিতে পারবে সেটি নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট উদ্বেগ।এক মাস আগে শনাক্তের হার সাত শতাংশে নেমে আসলেও এখন সেটি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে প্রায় ১৪ শতাংশ হয়েছে।সীমান্তের জেলাগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য জেলাতেও সংক্রমণের হার বাড়ছে।ফলে জনবহুল ঢাকা শহরে করোনা ভাইরাসের আরেকটি বড় ধরণের ঢেউয়ের আশংকা থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশের উত্তর এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী জেলায় করোনা ভাইরাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এখনও ৪০ শতাংশের উপরে। মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে সেসব জেলায়।গত ১৫ দিনে শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রায় দেড়শ রোগী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার রাজশাহী অঞ্চলের সহকারী পরিচালক নাজমা আক্তার বিবিসি বাংলাকে বলেন, সেখানে করোনা সংক্রমণের এখন পিক টাইম বা সর্বোচ্চ অবস্থা চলছে বলে তারা মনে করছেন।"আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, এটাকে আর বাড়তে না দেয়া। পরিস্থিতি আগে যা ছিল সেটাই আছে, " বলেন নাজমা আক্তার।শুধু সীমান্তবর্তী জেলাই নয়, ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। ঢাকার বেশ কাছেই টাঙ্গাইল জেলায় এখন করোনা ভাইরাসে শনাক্ত রোগীর হার প্রায় ৪০ শতাংশ।

এক সপ্তাহের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, ঢাকা জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের হার কিছুটা বাড়তির দিকে।এক সপ্তাহ আগে পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ঢাকা জেলায় চার শতাংশ থাকলেও এখন এটি প্রায় ছয় শতাংশ।বিশেষজ্ঞদের অনেকেই আশংকা করছেন, শনাক্তে হার এখন দৃশ্যত কম মনে হলেও ধীরে-ধীরে এটি বাড়তে পারে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বেনজির আহমদ বলছেন, ঢাকায় করোনা ভাইরাসে প্রথম ঢেউ আঘাত করলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সেটি কতটা সামাল দিতে পারবে তা নিয়ে সংশয় আছে।

মি. আহমেদ বলেন, "আমার আশংকা হচ্ছে, সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে সেটা মার্চ-এপ্রিল মাসের মতো হবে কি না। নাকি পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।"চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসে করোনা ভাইরাসে দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।

গত একমাস যাবত হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেশ কমেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ঢাকায় কোভিড চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতাল শয্যার ৭৭ শতাংশ খালি।কিন্তু করোনা ভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ আঘাত করলে জনবহুল ঢাকা শহরে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সেটি সামাল দিতে পারবে কিনা?

অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জিজ্ঞেস করেছিলাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অন্যতম মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলামের কাছে।"এই মুহূর্তে কোভিড ডেডিকেটেড সাত হাজার শয্যা আছে হাসপাতালে। রোগীর সংখ্যা যদি আট হাজার হয়ে যায় তাহলে সেটা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হবে," বলেন অধ্যাপক ইসলাম।

"ঢাকা শহরে শনাক্তের হার এখনো ছয় শতাংশের নিচে আছে। কিন্তু সারা বাংলাদেশে চারপাশ থেকে যদি রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে, তখন ঢাকায় রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাবার আশংকা থেকেই যায়।"

গাণিতিক মডেল বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই এরই মধ্যে ধারণা দিয়েছেন, জুলাই মাসে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পিক বা সর্বোচ্চ চূড়ায় যেতে পারে, যখন দিনে হয়তো ১০ হাজারের মতো শনাক্ত হতে পারে।বাংলাদেশ কমো মডেলিং গ্রুপের আওতায় যেসব বিশ্লেষক এ সম্ভাব্য চিত্র এঁকেছেন, তারা সেটি গত ৩০শে মার্চ সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। পরিস্থিতি সেদিকে গেলে ঢাকার অবস্থা আবারো নাজুক হবে বলে বলে বিশ্লেষকরা আশংকা করছেন।

সূত্র : বিবিসি