কোয়ারেন্টাইনের সময়সীমা ৪০ দিন! ইতিহাস কি বলে

কোয়ারেন্টাইনের সময়সীমা ৪০ দিন! ইতিহাস কি বলে

প্লেগ আক্রান্ত এলাকা থেকে ইতালির ভেনিসে জাহাজ এলেই তাদেরকে ৪০ দিন অপেক্ষা করানো হতো- সংগৃহীত ছবি

মহামারি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। এরপর থেকেই ‘কোয়ারেন্টাইন’, (quarantine) ‘আইসোলেশন’ (isolation) শব্দগুলি মানুষের খুবই পরিচিত হয়ে উঠেছে। কিন্তু ইতিহাস বলছে ইংরেজি ডিকশনারিতে এগুলো নতুন শব্দ নতুন কোনও পদ্ধতি নয়। খ্রীষ্টের জন্মের অনেক আগেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো বলে জানা গেছে। পরে বিভিন্ন সময় কোনও রোগের প্রকোপ দেখা গেলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

এর সবথেকে পুরনো প্রমাণ মেলে ‘বুক অব লেভিটিকাস’ বইয়ে। বইটি লেখা হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৮ থেকে ৩৩২ সালের মধ্যে । বইয়ের লিখিত তথ্য বলছে, লেপ্রসি বা কুষ্ঠরোগ হলে তাদের সমাজ ও পরিবার থেকে আলাদা করে রাখা হতো। আলাদা জায়গায় এসে খাবার দিয়ে যাওয়া হতো।

করোনাকালে ‘কোয়ারেন্টাইন’ মানে এখন বলা হচ্ছে ১৪ দিন। সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে তাই প্রচার করা হচ্ছে। আসলে ‘কোয়ারেন্টাইন’-এর অর্থ হল ৪০ দিন। ভাবুন একবারে ৪০ দিন। এটাই ‘কোয়ারেন্টাইন’ শব্দের আসল অর্থ। শব্দটি আসলে ইতালীয়। নেপোলিয়ান বোনাপার্ট যখন মিশরের ব্যর্থ সফর সেরে ১৮০১ সালে ফেরেন তখন তার জাহাজ ভরতি লোকজনকে সমুদ্র তীরেই কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছিল। এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইটালিরন মার্সেই হেলথ বোর্ড। মনে করা হয়েছিল মিশর ফেরত ওই জাহাজ প্লেগ ছড়াতে পারে ইতালিতে। কারণ মিশরে তখন প্লেগ ছড়িয়ে পড়েছিল। তাই ওই ‘কোয়ারেন্টাইন’ ব্যবস্থা। তাহলে কতদিন তাদের সমুদ্র তীরে কাটাতে হয়েছিল? চল্লিশ দিন।

আসলে কোয়ারান্টা জিওরনি এটি ইতালীয় শব্দ। এর থেকেই এসেছে কোয়ারেন্টাইন শব্দ। অর্থ ৪০ দিন। কিন্তু চল্লিশ দিনই কেন? ইতিহাস বলছে এর প্রচলন শুরু হয় ১৫০০ সাল নাগাদ। প্লেগ আক্রান্ত এলাকা থেকে ইতালির ভেনিসে জাহাজ এলেই তাদেরকে ৪০ দিন অপেক্ষা করানো হতো। এই নিয়ম ৩০০ বছর বহাল ছিল। তাই নেপলিয়ানের জাহাজকে ৪০ দিন সমুদ্র তীরে থাকতে হয়েছিল। ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারি বিউবোনিক প্লেগ। ১৩৪৬ সালে এই প্লেগের প্রার্দুভাব দেখা গিয়েছিল। একে ব্ল্যাক ডেথ ঠেকাতে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে সেই সময়ে দিন সংখ্যা কত ছিল জানা যায় না।

১৯১৮ সালে যখন বিশ্বজুড়ে স্প্যানিশ ফ্লু মহামারির আকার নিলে আমেরিকা ও ইউরোপের স্বাস্থ্যকর্মীরা কোয়ারেন্টাইনের কথা বলেন। তা করা হয়। গুরুতর কিছু হলে হাসপাতাল আর তেমন কিছু না হলে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রেখে চিকিৎসা। পরে বিভিন্ন দেশকে কোয়ারেন্টাইনকে আইনের জানানো হয়। আইন ভাঙলে শাস্তি। এই সময় থেকে সম্ভবত দিন সংখ্যা বদল হয়। এর উদাহরণ শরৎচন্দ্রের ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসে।১৯১৮ সালে প্রকাশিত উপন্যাসে কথা সাহিত্যিক লিখেছেন , ‘‘পরদিন বেলা এগার-বারটার মধ্যে জাহাজ রেঙ্গুনে পৌঁছিবে; কিন্তু ভোর না হইতেই সমস্ত লোকের মুখচোখে একটা ভয় ও চাঞ্চল্যের চিহ্ন দেখা দিল। চারিদিক হইতে একটা অস্ফুট শব্দ কানে আসিতে লাগিল, কেরেন্টিন। খবর লইয়া জানিলাম, কথাটা কোয়ারেন্টাইন। তখন প্লেগের ভয়ে বর্মা গভর্নমেন্ট অত্যন্ত সাবধান। শহর হইতে আট-দশ মাইল দূরে একটা চড়ায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়া খানিকটা স্থান ঘিরিয়া লইয়া অনেকগুলি কুঁড়েঘর তৈয়ারি করা হইয়াছে; ইহারই মধ্যে সমস্ত ডেকের যাত্রীদের নির্বিচারে নামাইয়া দেওয়া হয়। দশদিন বাস করার পর, তবে ইহারা শহরে প্রবেশ করিতে পায়।’

হলুদ রঙের পতাকাও এই কোয়ারেন্টিনের চিহ্ন ছিল। তখন কোনও জাহাজে এই পতাকা থাকা মানে সেই জাহাজ থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। হলুদ-কালো পতাকা এটি বোঝাতে সবই ব্যবহার করা হত। এর উদাহরণ মেলে টিনটিনের ‘Prisoners of the sun’। -কোলকাতা২৪