শরীরচর্চা ও ইসলাম

শরীরচর্চা ও ইসলাম

প্রতীকী ছবি

শারীরিক শক্তি বর্ধনের জন্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ জরুরি। এর পাশাপাশি ব্যায়াম ও শরীরচর্চারও বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ জন্য শারীরিক পরিশ্রম, সাঁতার কিংবা কুস্তিগিরি কৌশল রপ্ত করা প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। একই ধারাবাহিকতা ছিল নবী-সাহাবির যুগেও। পবিত্র কোরআনে মুমিনদের দৈহিক ও সামরিক শক্তির অনুশীলন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৬০)

রাসুল (সা.) বলেন, ‘দুর্বল মুমিনের চেয়ে শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬৬৪)

এ ছাড়া হাঁটাহাঁটি করা শরীরচর্চার একটি মাধ্যম। আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) দ্রুত হাঁটতেন। আবার কখনো কখনো দৌড় প্রতিযোগিতাও করতেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমি নবীজির চেয়ে দ্রুতগতিতে কাউকে হাঁটতে দেখিনি।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬৪৮)

দৌড় দেওয়া শরীরচর্চার একটি মাধ্যম। মহানবী (সা.) আয়েশা (রা)-এর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন। আয়েশা (রা.) নিজেই বলেছেন, ‘নবী করিম (সা.) দৌড়ে আমার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করলেন। তখন আমি আগে বেরিয়ে গেলাম। পরে যখন আমার শরীর ভারী হয়ে গেল, তখন রাসুল (রা.) আমার সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করে আমাকে হারিয়ে দিলেন এবং তিনি বলেন, এবার আগেরবারের বদলা নিলাম।’ (মুসনাদ আহমদ ও আবু দাউদ)

কুস্তি ও শারীরিক কসরত করাও ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ। নবী করিম (সা.) রুকানা নামক এক নামকরা কুস্তিগিরের সঙ্গে লড়েছিলেন। সে ছিল খুবই বলিষ্ঠ। মহানবী (সা.) একাধিকবার তাকে পরাজিত করেছিলেন। (আবু দাউদ)

সুস্থ দেহের জন্য শারীরিক পরিচর্যার পাশাপাশি হাসিখুশি থাকা ও মানসিক প্রফুল্লতার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। নবীজি (সা.) নিজেও অত্যন্ত সদালাপী ও হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রীর অধিকারী ছিলেন। সাহাবিরা বলতেন, আমরা রাসুল (সা.)-এর চেয়ে হাসিখুশি আর কাউকে দেখিনি। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬৪১)

ঘরে-বাইরে সবার সঙ্গে তিনি এতটাই মিশুক ছিলেন যে সবাই ভাবত নবীজি আমাকে সবচেয়ে ভালোবাসেন। শিশুদের আদর করতেন, চুমু খেতেন। সাহাবিদের সঙ্গে তাঁর আচরণ ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। আর পরিবারের লোকদের কাছে ছিলেন সবার মধ্যমণি। তিনি বলেছেন, মুমিন বান্দা সদালাপী হয়। ওই ব্যক্তির মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই, যে মানুষের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হয় না, আর অন্যরাও তার সঙ্গে অন্তরঙ্গতা প্রদর্শন করে না। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২৮৪০)

পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি থাকুন। কেননা পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। আর পরিপাটি থাকা আল্লাহ পছন্দ করেন। সুস্থ দেহ ও মনের জন্য উভয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। অপরিচ্ছন্ন ও এলোমেলো পরিবেশ রোগব্যাধি ছড়ায়। আর ধীরে ধীরে এর প্রভাব মন ও মস্তিষ্ক আচ্ছন্ন করে ফেলে। তাই নবীজির হাদিসে এ বিষয়ে বিশেষ সতর্ক করা হয়েছে।  আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, পাঁচটি বিষয় মানুষের স্বভাবজাত প্রকৃতি—১. খতনা করা, ২. নাভির নিম্নের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করা, ৩. গোঁফ কাটা, ৪. নখ কাটা, ৫. বগলের লোম উপড়ে ফেলা। (বুখারি, হাদিস : ৫৮৮৯)

আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখার প্রতি ইসলামে বিশেষভাবে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নিজেদের আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখো।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৭৯৯)

তেমনি মিসওয়াক ও সুগন্ধি ব্যবহার প্রিয় নবীজির জন্য বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল। এগুলো স্বাস্থ্যকর পরিবেশ গঠনের মৌলিক বিষয়।