কথাও বিশ্লেষণ করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা!

কথাও বিশ্লেষণ করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা!

কথাও বিশ্লেষণ করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা!

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একদিকে মানুষের জীবনকে সহজ করে তুলতে পারে, অন্যদিকে পরিণত হতে পারে আপনার নিজের শত্রুতেই৷ ভাষা এবং স্বর বিশ্লেষণ করে আপনার মনের কথাও অনুমান করা শুরু করতে পারে এই বুদ্ধিমত্তা৷

 বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী এবং ব্যবস্থাপকদের ভাষার ধরন ও স্বরের ওঠানামা বিশ্লেষণ করছেন কিছু বিনিয়োগকারী৷ ল্যাংগুয়েজ প্যাটার্ন সফটওয়্যার বিশেষজ্ঞ এভান শ্নিডমানের মতে, ২০২০ সালের শেষের দিকে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের কিছু নির্বাহী সেমিকন্ডাক্টর চিপের স্বল্পতাকে তেমন পাত্তা না দিয়ে সরবরাহে ব্যাঘাত নিয়ে আলোচনা করছিলেন৷ তারা বলছিলেন সব ঠিকই আছে৷

কিন্তু কথা বিশ্লেষণের একটি এলগরিদমে তাদের স্বরে এক ধরনের অনিশ্চয়তার বার্তা পাওয়া যায়৷ শ্নিডমান বলেন, ‘‘নির্বাহীদের এই বক্তব্যের সুর তাদের সাধারণ ইতিবাচক মন্তব্যের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ছিল৷'' শ্নাইডমান দুটি ফিনটেক কোম্পানিকে এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷

নির্বাহীদের এমন মন্তব্যের কয়েক মাসের মধ্যে, ফক্সভাগেন এবং ফোর্ডসহ কোম্পানিগুলো চিপের মারাত্মক ঘাটতি সম্পর্কে হুঁশিয়ারি দেয়। অটো এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমে যায়। তথ্যপ্রযুক্তি নির্বাহীরা স্বীকার করেন যে সংকট ছিল।একটি উদাহরণ অবশ্য ভাষা বিশ্লেষণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সামর্থ্য বিচারে যথেষ্ট নয়৷ এমনও হতে পারে যে নির্বাহীরা আসলে অযৌক্তিকভাবেই বেশ ইতিবাচক ছিলেন এবং পরিস্হিতির বিশ্লেষণের পর অবস্হা পাল্টেছেন।

এই ন্যাচারাল ল্যাংগুয়েজ প্রসেসিং বা এনএলপি প্রযুক্তিকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অনেক বিনিয়োগকারীই প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে এগিয়ে থাকার একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করছেন৷ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এমন অন্তত ১১ জন ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলেছে, যারা এরই মধ্যে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন অথবা ট্রায়াল দিচ্ছেন৷

তাদের মতে সাধারণ অর্থনৈতিক তথ্য এবং করপোরেটদের বক্তব্য এত বেশি ব্যবহার হয় যে এখন তা আর কোনো বাড়তি মূল্য বহন করে না৷

এনএলপি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এমন এক শাখা যেখানে ভাষার নানা তথ্য সিগন্যালে রূপান্তরিত করে এর বিশ্লেষণ করা যায়৷ এই প্রযুক্তির সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী সফটওয়্যারের উদ্দেশ্য হচ্ছে কথা বলার সময় ব্যবহার করা শব্দগুচ্ছের পাশাপাশি কথ্য শব্দের শ্রুতিমাধুর্য, সুর, বিশেষ শব্দের ব্যবহার এমনকি কোন শব্দে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে, সেটিও বিশ্লেষণ করা৷

১৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা ফার্ম ম্যান গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ম্যান এএইচএল এর মেশিন লার্নিং বিভাগের প্রধান স্লাভি মারিনভ৷ রয়টার্সকে তিনি বলেছেন, কম্পিউটার পরিচালিত ফান্ডের ক্ষেত্রে এনএলপি একটি বড় গবেষণা খাতে পরিণত হয়েছে৷ মারিনভ বলেন, ‘‘ভাষা এমনিতে খুব আগোছালো একটি ব্যাপার৷ কিন্তু এটিকে এনএলপি প্রযুক্তির মা্ধ্যমে এই অগোছালো ব্যাপারটিকে বোধগম্য তথ্যে রূপান্তর করা যায়৷''

এই প্রযুক্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার, ফোন কল, বিভিন্ন জায়গায় দেয়া বক্তব্য ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে বিশাল এক তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা সম্ভব৷এ নিয়ে অবশ্য বিতর্ক চলছে৷

এই প্রযুক্তির উন্নয়ন ও পরিচালনায় হাজার হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন৷ এমন সামর্থ্য কেবল অতি ধনী প্রতিষ্ঠানেরই রয়েছে৷ এই প্রযুক্তির বেশিরভাগই এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে এবং এই প্রযুক্তির ফলে যে কাজ হচ্ছে এমন কোনো প্রকাশ্য তথ্যও নেই৷ এনএলপি ব্যবহারের ফলে আয় বেড়েছে এমন কোনো প্রমাণ দেখাতে রাজি হয়নি ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো৷অবশ্য কিছু গবেষণা বলছে, ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারলে এই প্রযুক্তি পারফরম্যান্স বাড়াতে সহায়ক হতে পারে৷

সূত্র : ডয়চে ভেলে