ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ ঘিরে যে পাঁচটি বিষয় আলোচনায়

ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ ঘিরে যে পাঁচটি বিষয় আলোচনায়

ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ ঘিরে যে পাঁচটি বিষয় আলোচনায়

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ভারত ও পাকিস্তান মুখোমুখি।সোমবার দুবাই স্পোর্টস সিটিতে বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় শুরু হবে ম্যাচটি।টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হয় ২০০৭ সালে তখন থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের ম্যাচ বাড়তি উন্মাদনা নিয়ে আসছে এই আসরে।২০০৭ সালের সেই বিশ্বকাপে দুইবার মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান।দুইবারই ভারত জয় পেয়েছে। ওয়ানডে হোক কিংবা টি-টোয়েন্টি যে কোনও ফরম্যাটের ক্রিকেট বিশ্বকাপে এখনো পর্যন্ত পাকিস্তান ভারতকে হারাতে পারেনি।

ক্রিকেটের বাইরের চাপ

গত মাসখানেক ধরেই ভারত ও পাকিস্তানের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। বিশেষত আফগানিস্তানে তালেবান সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পাকিস্তানের মাটিতে নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের সফর বাতিল হয়েছে।পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান রমিজ রাজা কোনও রাখঢাক না রেখেই ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের দিকে আঙ্গুল তুলেছেন।

তিনি বলেই দিয়েছেন পাকিস্তান জবাব দেবে খেলার মাঠে।তাই পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের এই ম্যাচটি নিয়ে আগ্রহ এবং উত্তেজনার কমতি নেই।কিন্তু এই দুটি দলের পাকিস্তান সফর বাতিল নিয়ে ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের আনুষ্ঠানিক কোনও বিবৃতি নেই।

কাঁদা ছোড়াছুড়ি ও শান্তির বার্তা

পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার আব্দুল রাজ্জাক কিছুদিন আগে গণমাধ্যমে বলেছেন ভারত, এখন পাকিস্তানের মুখোমুখি হতে ভয় পায়।২০১২-১৩ সালের পর আর দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেনি এই দুই প্রতিবেশী দেশ। ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই দুই দেশের রাজনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়, ক্রিকেটেও এর ছাপ পড়ে।

দুই দেশের ক্রিকেট সমর্থকরা তো বটেই, দুই দেশের বাইরের ক্রিকেট অনুসারীরাও ভারত পাকিস্তানের ক্রিকেট সিরিজগুলো মিস করেন।২০০৭ বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের হয়ে শেষ ওভারে বল করা জোগিন্দর শর্মা জোর গলায় বলেছেন, "পাকিস্তান কি ভারতের শক্তি সম্পর্কে জানে? ওরা কীভাবে বলে ভারতের বিপক্ষে জিতবে?"

ভারতের গণমাধ্যমকে তিনি এই সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।ভারতের সাবেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ কাইফ রবিবার সকালেই একটি টুইটে 'রাজনীতি, ঘৃণা ও দম্ভ' পাশে রেখে ক্রিকেট দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।তিনি লিখেছেন, "প্রতিপক্ষের পরাজয় না, নিজের জয় উদযাপন করুন। এটাকে যুদ্ধ না খেলা হিসেবেই নেবেন।"

ভিরাট কোহলি বনাম বাবর আজম

জাভেদ মিয়াঁদাদ থেকে শুরু করে শহীদ আফ্রিদি, মিসবাহ উল হকের পাকিস্তান যা পারেনি সেই সুযোগ বাবর আজমের পাকিস্তানের।ভিরাট কোহলির জন্যও নিজেকে প্রমাণের বড় মঞ্চ এটা।

অনেকের কাছেই সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান ভিরাট কোহলি, কিন্তু ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ কিংবা টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে সাফল্য নেই কোহলির।এবারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও ফাইনালে উঠতে পারেনি তার দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর, অধিনায়ক হিসেবে এটাই কোহলির শেষ আইপিএল আসর ছিল।বিশ্বকাপ শুরুর আগে তিনি ভারতের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণাও দিয়েছেন।

তাই এদিক থেকেও এটাই তার শেষ সুযোগ এই ফরম্যাটে দলকে কিছু জেতানোর।ব্যাটসম্যান কোহলির সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন খুব কম মানুষই তোলে কিন্তু অধিনায়ক কোহলিকে প্রায়ই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে।এদিকে বাবর আজমকেও মনে করা হয় আধুনিক ক্রিকেটের সবচেয়ে পরিশীলিত ব্যাটসম্যানদের একজন।

দৃষ্টিনন্দন কভার ড্রাইভ, স্থির মানসিকতা এবং পুরো ২০ ওভার উইকেটে থেকে খেলার গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আছে বাবর আজমের।আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানদের তালিকায় দুই নম্বরে আছেন বাবর, চার নম্বরে আছেন কোহলি।

দুই দেশের ক্রিকেট সমর্থকরা তর্ক-বিতর্ক জুড়ে দিয়েছেন কে সময়ের সেরা তা নিয়ে, আর তাতে আরো রসদ জুগিয়েছে কোহলির সাম্প্রতিক ফর্ম।ভিরাট কোহলি ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আইপিএলে প্রচুর টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা হয়েছে। অনেক পরিকল্পনা, অনেক কথা হয়েছে এখন সময় মাঠে বাস্তবায়ন করার।

শক্তিমত্তায় এগিয়ে কারা?

তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার মিশেলে ভারত ও পাকিস্তান এবারের বিশ্বকাপ স্কোয়াড তৈরি করেছে।দুই দলের গঠনও কাছাকাছি, পেস বোলারদের ওপর নির্ভরশীলতা আছে, দক্ষ স্পিনার আছে, একই সাথে আছেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার।

কোহলি-বাবর ব্যাটিংএ নেতৃত্ব দেবেন।

দুই দলের উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান আছেন দারুণ ফর্মে- যদিও লোকেশ রাহুল কিপিং করবেন না, আর পাকিস্তানের মোহাম্মদ রিজওয়ান গত দেড় দুই বছরের সফলতম টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার।অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার হিসেবে আছেন শোয়েব মালিক, রাভিন্দ্রা জাদেজারা।পেস আক্রমণে আছেন বুমরাহ, শাহিন শাহ আফ্রিদিরা।দুই দলের সমন্বয় একই রকম মোটামুটি। এখন মাঠের ক্রিকেটে চাপ সামলে যে দল ভালো ক্রিকেট খেলতে পারবেন সেই দলই এগিয়ে যাবে।

পাকিস্তান কি পারবে বিশ্বকাপে ভারতকে প্রথমবারের মতো হারাতে?

বিশ্বকাপে পাকিস্তান কখনো ভারতকে হারাতে পারেনি।ভারত ও পাকিস্তান উভয় দলের অধিনায়কই ঘোষণা দিয়েছেন তারা অতীত নিয়ে পড়ে থাকতে চান না।

ভিরাট কোহলি বলেছেন, "পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপে জয়ের রেকর্ড নিয়ে আমি মোটেই ভাবছি না। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোন আলোচনাই হয়নি। এসব নিয়ে ভাবলে মনের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। আপনার সামনে প্রতিপক্ষ কে, প্রস্তুতি কেমন, কীভাবে আপনি খেলবেন, সেটাই আসলে মূল বিষয়।"বাবর আজম বলেছেন, "আগে যা হয়েছে তা নিয়ে ভাবছি না। আমরা ভারতের বিপক্ষে জিতবো"এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে ছয়বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান- ছয়বারই জয়ী দলের নাম ভারত।

সূত্র : বিবিসি