পাপ নিজের মঙ্গলের কথা ভুলিয়ে দেয়

পাপ নিজের মঙ্গলের কথা ভুলিয়ে দেয়

প্রতীকী ছবি

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ: পাপ নিজের মঙ্গলের কথা ভুলিয়ে দেয়। পাপী নিজেকেই ভুলে যায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে। যার ফলে আল্লাহ তাদের আত্মবিস্মৃত (আত্মভোলা) করে দিয়েছেন। এরাই তো সত্যিকার পাপাচারী।’ (সুরা হাশর, আয়াত : ১৯)

অন্য আয়াতে এসেছে, ‘তারা আল্লাহকে ভুলে গেছে। সুতরাং তিনিও তাদের ভুলে গেছেন।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৬৭)

কেউ নিজেকে ভুলে গেলে তার সুখ, শান্তি ও কল্যাণ সম্পর্কে আর ভাবে না। নিজের দোষ-ত্রুটি তার চোখে পড়ে না। যার দরুন সে তা সংশোধনও করতে চায় না। এমনকি তার রোগের কথাও সে ভুলে যায়। তাই সে রোগগুলোর চিকিৎসাও করতে চায় না। সুতরাং এর চেয়ে দুর্ভাগা আর কে হতে পারে? তবু এ জাতীয় মানুষের সংখ্যা আজ অনেক বেশি। তারা অনন্ত আখিরাতকে ক্ষণিকের দুনিয়ার পরিবর্তে বিক্রি করে দিয়েছে। সুতরাং তারা সদাসর্বদা ক্ষতির মধ্যে থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এরাই পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবনকে ক্রয় করে নিয়েছে। সুতরাং তাদের আজাব আর কম করা হবে না এবং তাদের কোনো ধরনের সাহায্যও করা হবে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৮৬)

এর বিপরীতে বুদ্ধিমানরা আখিরাতকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তারা নিজের জীবন ও সম্পদের বিনিময়ে জান্নাত ক্রয় করে। তারা এ দুনিয়ার জীবনটাকে ক্ষণস্থায়ী মনে করে। তবে কিয়ামতের দিন সবার কাছে এ কথার সত্যতা সুস্পষ্টরূপে উদ্ভাসিত হবে। দুনিয়ার জীবনটাকে সবার কাছে তখন খুব সামান্য মনে হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তুমি তাদের ওই দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দাও, যে দিন আল্লাহ তাদের একত্র করবেন, তখন তাদের এমন মনে হবে যে তারা দুনিয়াতে একটি দিনের কিছু অংশ অবস্থান করেছে এবং তা ছিল পরস্পর পরিচিত হওয়ার জন্য।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৪৫)

পাপ পাপীর অন্তরে এক ধরনের একাকিত্ব, ভয় ও ভয়ংকর বিক্ষিপ্তভাব সৃষ্টি করে। তখন তার মধ্যে ও আল্লাহ তাআলার মধ্যে ধীরে ধীরে এক ধরনের দূরত্ব জন্ম নেয়। তখন সে কারো সান্নিধ্যে আগ্রহী হয় না; বরং তাদের সান্নিধ্যে সে সমূহ অকল্যাণের আশঙ্কা করে। গুনাহ যতই বাড়বে—এ দূরত্ব তত বৃদ্ধি পাবে।

পাপের কারণে পাপী যেন উঁচু স্থান থেকে নিচু স্থানে নেমে আসে। এমনকি পরিশেষে সে জাহান্নামিদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। তবে তাওবা করার পর সে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসতেও পারে, নাও আসতে পারে। আবার কখনো সে আরো উঁচু পর্যায়েও যেতে পারে। আর তা নির্ণীত হবে একমাত্র তার তাওবার ধরনের ওপর।

গুনাহের কারণে গুনাহগারের অন্তর অন্ধ হয়ে যায়। পুরো অন্ধ না হলেও তার অন্তর্দৃষ্টি দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন সে আর হিদায়াতের দিশা পায় না। আর পেলেও তা বাস্তবায়নের ক্ষমতা রাখে না। মহান আল্লাহ নবীদের প্রশংসা করে বলেন, ‘স্মরণ করো আমার বান্দা ইবরাহিম, ইসহাক ও ইয়াকুবের কথা। তারা ছিল শক্তিশালী ও সূক্ষ্মদর্শী।’ (সুরা সোয়াদ, আয়াত : ৪৫)।