কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রতিদান ও পদ্ধতি

কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রতিদান ও পদ্ধতি

কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রতিদান ও পদ্ধতি

মুমিন হিসেবে একে অপরের উপকার করা সবার দায়িত্ব। এটা ইসলামের শিক্ষা। এবং কেউ উপকার করলেও তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। এটি রাসুল (সা.)-এর শিক্ষা। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।’ অথবা ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ নয়, সে আল্লাহর প্রতিও অকৃতজ্ঞ।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮১১)

এ কারণে কেউ কোনো উপহার দিলে সামর্থ্য থাকলে তাকেও কিছু উপহার দেওয়া উচিত। কোনো কিছু না থাকলে কমপক্ষে তার প্রশংসা করা উচিত। তার সঙ্গে সদাচরণ করা উচিত। কিন্তু আমরা অনেক সময় কারো দ্বারা উপকৃত হলে সে যাতে এটাকে বড় করে না দেখে বা আমরা যেন তার কাছে ছোট না হয়ে যাই, এ জন্য তার সঙ্গে অদ্ভুত আচরণ শুরু করি। তার মন ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করি। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি, আমার উপকার করতে পারা তোমার ভাগ্য। আমার উপকার করার জন্য লাখ লাখ মানুষ আছে; কিন্তু তোমাকে উপকার করার সুযোগ দিয়ে তোমার ওপর দয়া করেছি। (নাউজুবিল্লাহ!) এটা ইসলামের শিক্ষা নয়।

প্রিয় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘কাউকে যখন উপহারস্বরূপ কিছু দেওয়া হয়, তখন সে যদি এর পরিবর্তে দেওয়ার মতো কিছু পায় তাহলে যেন তা দিয়ে দেয়। আর যে এমন কিছু না পাবে সে যেন তার প্রশংসা করে। কেননা যে প্রশংসা করল সেও কৃতজ্ঞতা আদায় করল। আর যে লুকিয়ে রাখল সে অস্বীকার করল। (তিরমিজি, হাদিস : ২০৩৪)

তাই আমরা কারো দ্বারা উপকৃত হলে কমপক্ষে তার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতে পারি। মহান আল্লাহর কাছে তার জন্য দোয়া করতে পারি। সে দোয়ার ভাষা কী হবে, তাও শিখিয়েছেন রাসুল (সা.)। উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কাউকে অনুগ্রহণ করা হলে সে যদি অনুগ্রহকারীকে বলে, ‘জাজাকাল্লাহু খাইরান’ অর্থ : মহান আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দিন, তবে সে উপযুক্ত ও পরিপূর্ণ প্রশংসা করল। (তিরমিজি, হাদিস : ২০৩৫)

আমাদের সমাজে অবশ্য আমরা কারো দ্বারা উপকৃত হলে তাকে থ্যাংক ইউ বলে থাকি। কিন্তু উপকারকারীর জন্য রাসুল (সা.)-এর ভাষায় দোয়া করাই বেশি ফজিলতপূর্ণ হবে। কারো উপকারের প্রতিদান উপযুক্ত প্রতিদান দেওয়ার সাধ্য আমাদের নেই। আমরা কারো জন্য কিছু করতে চাইলেও কি-ই বা করতে পারব?

কিন্তু মহান আল্লাহ যদি নিজ হাতে তাকে পুরস্কৃত করেন, তবে সেই পুরস্কার অবশ্যই তার শান অনুযায়ী হবে। তাই আমরা কারো দ্বারা উপকৃত হলে, বিপদ ও সংকটের সময় কাউকে কাছে পেলে তার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তার জন্য রাসুল (সা.)-এর ভাষায় ‘জাজাকাল্লাহ’ বলে দোয়া করতে পারি। এতে একদিকে যেমন তার কৃজ্ঞতা আদায় হবে, অন্যদিকে নিজেদের মধ্যে আন্তরিকতা বাড়বে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর হুকুম মেনে চলার তাওফিক দান করুক।