পাবনায় ইউপি নির্বাচনে চাচা ভাতিজার লড়াই

পাবনায় ইউপি নির্বাচনে চাচা ভাতিজার লড়াই

পাবনায় ইউপি নির্বাচনে চাচা ভাতিজার লড়াই

আর মাত্র একদিন পর অর্থাৎ পরশু বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর ) পাবনার সুজানগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে নির্বাচন। শেষ মূহুর্তে নির্বাচনী প্রচারণা তুঙ্গে। তবে নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের নানা ধরণের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের কারণে ভোটারদের মধ্যে ভীতিভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।

সুজানগরের দুলাই ইউনিয়নে শেষ মূহুর্তের প্রচারণায় জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা। আওয়ামীলীগের দু’জন শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও সম্পর্কে আপন চাচা ভাতিজার জমজমাট প্রচারণায় এখন পুরো ইউনিয়ন জুড়ে নির্বাচনী আমেজ। ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি সিরাজুল ইসলাম শাজাহান। আসন্ন নির্বাচনেও তিনি আওয়ামীলীগের টিকিটে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আনারস প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন চেয়ারম্যানের আপন ভাতিজা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান সাইদ। চাচা ভাতিজার নিজ নিজ সমর্থকদের শক্ত অবস্থান নির্বাচনে জমজমাট লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছে।

আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইদুর রহমান বলেন,  চেয়ারম্যান থাকাকালে আমার চাচা দুর্নীতিতে জড়িয়ে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। প্রশাসনের তদন্তে এসব দুর্ণীতি প্রমাণ হওয়ায় আমরা পারিবারিকভাবেই লজ্জায় পড়েছি। দুলাই ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় আমার মরহুম পিতা আজীবন কাজ করেছেন। পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্য রক্ষায় আওয়ামীলীগ কর্মীদের দাবিতে প্রার্থী হতে বাধ্য হয়েছি।

সাইদুর রহমান আরো জানান, নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় ভেবে নৌকার প্রার্থী বহিরাগত সন্ত্রাসীদের এনে ভোটার ও আমার কর্মীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। নিজেরাই অপকর্ম করে আমার কর্মীদের হেনস্থা করার ষড়যন্ত্র করছেন। চরমপন্থীদের সশস্ত্র মহড়ায় এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। আমি প্রশাসনের নিকট ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছি।

আওয়ামীলীগ প্রার্থী ও বর্তমান সিরাজুল ইসলাম শাহজাহান বলেন, মনোনয়ন না পেয়ে সাইদুর রহমান দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নৌকার বিরোধিতা করে প্রার্থী হয়েছেন। দুলাই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ঘাঁটি, এখানে  নৌকা ছাড়া অন্য কোন প্রতীকের প্রতি ভোটারদের আগ্রহ নেই। নির্বাচনের আগে থেকেই সাইদ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আমাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছে। এখন মিথ্যা অভিযোগ করে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছে।

আপন চাচা ভাতিজা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আহমদপুর ইউনিয়নেও। আওয়ামীলীগ প্রার্থী ও বর্তমান  চেয়ারম্যান কামাল আহমেদের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন তারই আপন ভাতিজা হিরা মিয়া। দলীয় নেতা-কর্মীরা বিদ্রোহী এবং দলীয় প্রার্থীর পক্ষে বিভক্ত হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচনী মাঠে চাচা-ভাতিজার ভোট যুদ্ধ জমে উঠেছে।

বিদ্রোহী প্রার্থী হিরা মিয়া চাচার বিরুদ্ধে প্রচারণায় বাধা দেয়ার অভিযোগ করছেন। চাচা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কামাল আহমেদও ভাতিজার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ করেছেন।

এদিকে, বহিরাগত সন্ত্রাসীদের আনাগোনায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও আতঙ্কভাব বিরাজ করছে। আওয়ামীলীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে প্রায় সবকটি ইউনিয়নেই। নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর,  গোলাগুলি ও হামলা পাল্টা হামলায় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। শেষমূহুর্তে এ সহিংসতা আরো  বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সাগরকান্দি, মানিকহাট, সাতবাড়িয়া, হাটখালি, ভায়না ইউনিয়নে।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, ‘প্রতিটি সংঘর্ষের ঘটনাতেই পক্ষগুলো পরস্পরকে  দোষারোপ করছে। আমরা তদন্ত করে দেখছি। এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বহিরাগত সন্ত্রাসীদের বিষয়েও অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে।আগামী পরশু বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর ) সুজানগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।