ব্যাংকের চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন জালিয়াতি চক্রের ৫ সদস্য গ্রেফতার

ব্যাংকের চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন জালিয়াতি চক্রের ৫ সদস্য গ্রেফতার

ব্যাংকের চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন জালিয়াতি চক্রের ৫ সদস্য গ্রেফতার

বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত পাঁচটি তফসিলী ব্যাংকের (অফিসার ক্যাশ) শূন্য পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন জালিয়াতির অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) তেজগাঁও বিভাগের ডিবির একটি দল তাদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন মো: মোক্তারুজ্জামান রয়েল, মো: শামসুল হক শ্যামল, জানে আলম মিলন, মোস্তাফিজুর রহামান মিলন ও রাইসুল ইসলাম স্বপন।৬ নভেম্বর হতে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে রাজধানীসহ আশেপাশের এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ১টি ল্যাপটপ, বিভিন্ন মডেলের ৫টি মোবাইল, ৪টি প্রশ্নপত্র, উত্তরপত্র ৪টি, হোয়টস অ্যাপে রক্ষিত উত্তরপত্রের ছবি, ১টি প্রবেশপত্রের ফটোকপি ও নগদ ৬ লাখ টাকা জব্দ করা হয়।বুধবার বিকেল ৩টার দিকে ডিএমপি’র মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব তথ্য জানান।

ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত ৫টি ব্যাংকের ১ হাজার ৫১১টি ‘অফিসার ক্যাশ’ শূন্য পদের নিয়োগ পরীক্ষা গত ৬ নভেম্বর বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। আহসানউল্লাহ ইউনির্ভাসিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার সিলেকশন কমিটি পরীক্ষাটি সম্পাদন করে।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যাবত পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কাজ করতে থাকা ডিবির তেজগাঁও বিভাগের একটি টিম ৫ নভেম্বর রাতে এই পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হতে পারে এমন তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির তেজগাঁও জোনাল টিমের একজন সদস্য ছদ্মবেশে পরীক্ষার্থী সেজে পরীক্ষার দিন ৬ নভেম্বর সকাল ৭টার দিকে প্রশ্নপত্রসহ উত্তর পাওয়ার জন্য চক্রের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে। প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র ফাঁস চক্রের হোতা রাইসুল ইসলাম স্বপনকে অগ্রিম টাকা পরিশোধ করা হলে পরীক্ষার্থীকে বুথে নিয়ে যায়। পরে এ পরীক্ষার উত্তরপত্রসহ তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়।

স্বপনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৬ নভেম্বর সাভারের শ্রীনগর থেকে রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার জানে আলম মিলনকে গ্রেফতার করা হয়। জানে আলম মিলনের তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর দক্ষিণ বাড্ডা থেকে মো: শামসুল হক শ্যামলকে গ্রেফতার করা হয়। শামসুল হক শ্যামলকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র ফাঁস করার কথা স্বীকার করে। এই চক্রের মূল হোতা মো: মোক্তারুজ্জামান রয়েলকে বাড্ডার আলিফনগর থেকে গ্রেফতার করা হয়।

মোক্তারুজ্জামান রয়েল আহসানউল্লাহ ইউনির্ভাসিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে আইসিটি টেকনিশিয়ান হিসেবে কর্মরত আছে। মোক্তারুজ্জামান আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্মরত অন্যান্য সহযোগীদের সহায়তা এ পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তরপত্র সংগ্রহ করেছে বলে স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য, মোবাইল ফোনে থাকা তথ্য এবং হোয়াটস অ্যাপ চ্যাটের তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর লালবাগ থেকে প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র ফাঁস চক্রের অন্যতম হোতা পূবালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান মিলনকে গ্রেফতার করা হয়।

রাজধানীর বাড্ডা, বসুন্ধরা, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, রূপনগর, মিরপুর, মাতুয়াইল, শেওড়াপাড়া, শেরেবাংলা নগর, পল্লবী এলাকায় বুথ (যেখানে পরীক্ষার ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা আগে নিজস্ব লোকের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের ফাঁস করা প্রশ্ন ও উত্তরপত্র মুখস্থ করানো হয়) তৈরি করে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র ফাঁস চক্রের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে প্রত্যেক বুথে ২০ থেকে ৩০ জন পরীক্ষার্থীর এ পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর মুখস্থ করিয়ে কেন্দ্রে প্রেরণ করে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা স্বীকার করে।

তিনি আরো বলেন, মোক্তারুজ্জামান ও শ্যামল সুকৌশলে তিন বার বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর ফাঁস করেছে। শ্যামল এই চক্র পরীক্ষার ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা আগেই বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে প্রায় ২ হাজার পরীক্ষার্থীদের মাঝে এ পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর সরবরাহ করেছে। প্রত্যেক পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিয়োগ পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়।গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।

সূত্র : বাসস