মানুষের কাছে দোয়া চাওয়ার সুফল

মানুষের কাছে দোয়া চাওয়ার সুফল

প্রতীকী ছবি

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ: মানুষের দোয়ায় নিজেকে শামিল করার আরেকটি উপায় হলো সৎকর্মশীল বান্দাদের কাছে দোয়া চাওয়া। আবুদ্দারদা (রা.)-এর জামাই সাফওয়ান ইবনু আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘আমি সিরিয়াতে আবুদ্দারদা (রা.)-এর বাড়িতে গেলাম। আমি তাকে বাড়িতে পেলাম না; বরং সেখানে উম্মুদ্দারদা (রা.)-কে পেলাম। তিনি আমাকে বললেন, ‘তুমি কি এই বছর হজে যেতে চাও?’ আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য কল্যাণের দোয়া করো। কেননা নবী (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম ব্যক্তি তার ভাইয়ের অনুপস্থিতে দোয়া করলে তা কবুল হয়। তার মাথার কাছে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকেন। যখন সে তার ভাইয়ের কল্যাণের দোয়া করে, তখন নিয়োজিত ফেরেশতা বলে, আমিন! তোমার জন্যও অনুরূপ কল্যাণ বর্ষিত হোক।’

সাফওয়ান (রহ.) বলেন, আমি বাজারে গিয়ে আবুদ্দারদা (রা.)-এর দেখা পেলাম, তিনিও আমাকে এই হাদিস শোনালেন। (মুসলিম, হাদিস : ৭৩৩)

অন্যের কাছে দোয়া চাওয়া অবৈধ নয়; বরং এটা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। সাহাবায়ে কেরাম, সালাফে সালেহিন নেককার বান্দাদের কাছে নিজেদের জন্য দোয়া চাইতেন। বিশেষ করে পিতা-মাতার প্রতি আনুগত্যশীল সদাচরণকারী ব্যক্তিদের কাছে তারা দোয়া চাইতেন। হাদিসের পাতায় সোনালি হরফে লেখা উওয়াইস ইবনু আমের আল-কারনি (রহ.)-এর কাহিনিতে এর প্রকৃষ্ট নমুনা খুঁজে পাওয়া যায়।

উসাইর বিন জাবির (রা.) বলেন, ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর অভ্যাস ছিল, যখন ইয়েমেনের কোনো সাহায্যকারী দল তার কাছে আসত, তখন তিনি তাদের জিজ্ঞেস করতেন, তোমাদের মধ্যে কি উওয়াইস ইবনু আমের আছে? অবশেষে তিনি উওয়াইসকে পেয়ে যান। তখন ওমর (রা.) বললেন, তুমি কি উওয়াইস ইবনু আমের? তিনি বলেন, হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি মুরাদ গোত্রের কারান বংশের? বললেন, হ্যাঁ। জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি শ্বেত রোগ ছিল এবং তা নিরাময় হয়েছে, শুধু এক দিরহাম স্থান ছাড়া? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি মা আছেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ। তখন ওমর (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের কাছে মুরাদ গোত্রের কারান বংশের উয়াইস ইবনু আমের নামে এক ব্যক্তি ইয়েমেনের সাহায্যকারী দলের সঙ্গে আসবে। তার ছিল শ্বেত রোগ। পরে তা নিরাময় হয়ে গেছে। শুধু এক দিরহাম ব্যতিরেকে। তার মা আছেন। সে তাঁর প্রতি অতি সেবাপরায়ণ। সে (উওয়াইস) আল্লাহর ওপর কসম করে নিলে আল্লাহ তা পূর্ণ করে দেবেন। কাজেই যদি তুমি তোমার জন্য তার কাছে মাগফিরাতের দোয়া কামনার সুযোগ পাও, তাহলে তা করবে।’ এরপর ওমর (রা.) বলেন, সুতরাং আপনি আমার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করুন। অতঃপর উওয়াইস তাঁর মাগফিরাতের জন্য দোয়া করলেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৪২)

ওমর (রা.) দোয়া চেয়েছেন একজন সাধারণ মানুষের কাছে। যিনি সাহাবি ছিলেন না, কোনো প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি ছিলেন না। তার সবচেয়ে বড় পরিচয় ছিল তিনি মাতা-পিতার প্রতি সদাচরণকারী ছিলেন।

সুতরাং হাদিসের পাতায় যাদের দোয়া কবুলের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে, তাদের কাছে বেশি বেশি দোয়া চাওয়া উচিত। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া অবশ্যই কবুল করা হয়, এতে কোনো সন্দেহ নেই। মজলুমের দোয়া, মুসাফিরের দোয়া এবং সন্তানের জন্য পিতার দোয়া।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯০৫)

নবী করিম (সা.) আরো কয়েক শ্রেণির লোকের কথা উল্লেখ করেছেন, যাদের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। অর্থাৎ কবুল করা হয়। যেমন—ন্যায়পরায়ণ শাসক, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী বান্দা, রোজাদার, নেক সন্তান।’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১০৬১০)

হজ সম্পাদনকারী, ওমরাহ পালনকারী, আল্লাহর পথে জিহাদকারী প্রমুখের দোয়া আল্লাহ কখনো ফিরিয়ে দেন না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৮৯৩)