সুগন্ধা ট্রাজেডি যা শিখিয়ে গেল

সুগন্ধা ট্রাজেডি যা শিখিয়ে গেল

মাহফুজুর রহমান সা'দ

ইংরেজিতে একটি কথা প্রচলিত আছে Man is mortal অর্থাৎ মানুষ মরণশীল। আস্তিক-নাস্তিক, মুনাফিক, মুশরিক যেই হোক না কেন একথা অবিশ্বাস করতে পারবে না যে মৃত্যু তাকে স্পর্শ করতে পারবে না বরং জন্মিলে মরিতে হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন "প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে, অতঃপর তোমরা আমার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।" (সূরা আনকাবুত ৫৭) এই আয়াত থেকে আমরা দু'টি ম্যাসেজ পাই। 

প্রথমটি হলো আমাদেরকে মরতে হবে, পাড়ি জমাতে হবে অনন্তকালের পথে। আল্লাহ আমাদের একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন,যখনি সময় শেষ হবে তখনই আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে ক্ষণস্থায়ী এই জগতের মায়া-মমতা ত্যাগ করে আমাতের পাড়ি জমাতে হবে চিরস্থায়ী জগতের পথে। 

দ্বিতীয়টি হলো আমাদের মহান আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে। তিনি আমাদের যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন সেগুলো আমরা পালন করছি কিনা তিনি সেগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব নিবেন। 

আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজিদে ইরশাদ করেন, "আমি জিন ও মানব জাতিকে শুধুমাত্র আমার ইবাদত ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেনি অর্থাৎ ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।" (সূরা যারিয়াত ৫৬) এই আয়াতের দিকে তাকিয়ে আমাদের বিবেককে প্রশ্ন করা উচিত আমরা কি আল্লাহর বিধান যথাযথভাবে পালন করছি নাকি শিমুল ফুলের মতো উড়ে বেড়াচ্ছি দিক-দিগন্তে!

সম্প্রতি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটে যাওয়া লঞ্চ ট্রাজেডিতে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। যখন লঞ্চে আগুন লেগেছে চারিদিকে তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। লঞ্চের অধিকাংশ যাত্রীরাই তখন গভীর ঘুমে অচেতন। ওই ঘুমের মধ্যেই অনেকে আগুনে দগ্ধ হয়ে পাড়ি জমিয়েছেন অনন্তকালের পথে। যারা এ দূর্ঘটনয় প্রাণ হারিয়েছে তারা কি জানতো এটাই হবে তাদের শেষ ঘুম! তারা আর কোন দিন জেগে উঠবেনা!? প্রত্যেক যাত্রীরই ইচ্ছে ছিল তাদের প্রিয় মানুষগুলোর সাথে সাক্ষাৎ করা। কিন্তু তা আর হলো না। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। যারা সাঁতার জানে তারা কোনো রকম সাঁতরে কূলে উঠলেও যারা সাঁতার জানেনা তারা চারদিকে আগুনের বিভৎস রূপ দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তারা ওখানেই বেহুশ হয়ে গেছে। আর ঐ অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে পাড়ি জমিয়েছে পরপারে। কেউবা আবার বাঁচার আশায় পানিতে ঝাঁপ দিয়েছে কিন্তু তারা সাঁতার না জানার কারণে এবং তীব্র ঠান্ডায় পানিতেই তাদের জীবন প্রদীপ নিভে গিয়েছে। 

মানুষের মৃত্যু কোথায় কখন হবে এটা কেউ জানে না একমাত্র আল্লাহ ছাড়া। পাঁচটি বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহ কাউকে দেননি এমনকি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেও না। এসম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন "নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে কেয়ামতের জ্ঞান রয়েছে আর তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং জরায়ুতে যা আছে তা তিনি জানেন আর কেউ জানেন না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানেন না কোন স্থানে সে মারা যাবে নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সম্যক অবহিত।" (সূরা লুকমান ৩৪) আমরা সবাই জানি মৃত্যু অবধারিত কিন্তু আমাদের জীবন অবসান কখন কোথায় হবে এ বিষয়ে আমরা কেউ কিছু জানিনা। অতএব আমাদের উচিত ক্ষণস্থায়ী জীবনকে আখেরাতের উপার্জনের ক্ষেত্র বানানো। আর এটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আল্লাহ তাআলা বলেন "যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, অতিশয় ক্ষমাশীল।"

মাহফুজুর রহমান সা'দ

শিক্ষার্থী: দারুন্নাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদ্রাসা, ঢাকা।