কাজাখস্তানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে বহু লোক হতাহত, রুশ সেনা মোতায়েন

কাজাখস্তানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে বহু লোক হতাহত, রুশ সেনা মোতায়েন

কাজাখস্তানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে বহু লোক হতাহত, রুশ সেনা মোতায়েন

কাজাখস্তানে কয়েকদিন ধরে চলতে থাকা বিক্ষোভের এক পর্যায়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা আলমাটি শহরের থানাগুলো দখল করার চেষ্টা করার পর নিরাপত্তা বাহিনী এক অভিযান চালালে বেশ কিছু লোক নিহত হয়েছে।

গত রোববার থেকে চলতে থাকা এ বিক্ষোভের সময় সহিংসতায় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ জন সদস্যও নিহত হয়, আহত হয় ৩৫৩ জন।নিরাপত্তা বাহিনী বলছে, দেশটির প্রধান শহর আলমাটিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য এক অভিযান চালিয়ে তারা কয়েক ডজন সরকারবিরোধী দাঙ্গাকারীকে হত্যা করেছে।

দেশটিতে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপিজির মূল্য দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে যাবার পর এ বিক্ষোভের সূচনা হয়। তবে এর সাথে এখন রাজনৈতিক অসন্তোষও যুক্ত হয়েছে, এবং তা কাজাখস্তানের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে।কাজাখ প্রেসিডেন্টের অনুরোধে রাশিয়া 'দেশটিকে স্থিতিশীল করার জন্য' সৈন্য পাঠাচ্ছে।

রাশিয়া, কাজাখস্তান, বেলারুস, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান ও আরমেনিয়াকে নিয়ে গঠিত সিটিএসও নামে যে যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি করা হয়েছে - তার অধীনেই রুশ সৈন্যদের পাঠানো হচ্ছে।রুশ সৈন্যদের একটি অগ্রবর্তী দল এর মধ্যেই মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

দেশটির প্রেসিডেন্ট কাসিম জোমার্ট তোকায়েভ বলেছেন যে তিনি সিটিএসও সহায়তা চেয়েছেন। সিটিএসও -র বর্তমান চেয়ারম্যান আরমেনিয়ান প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান নিশ্চিত করেছেন যে "সীমিত সময়ের জন্য" জোটের পক্ষ থেকে শান্তিরক্ষী পাঠানো হবে।

প্রেসিডেন্ট তোকায়েভ কাজাখস্তানে অসন্তোষের পেছনে "বিদেশের প্রশিক্ষণ পাওয়া সন্ত্রাসী গুণ্ডাদল" রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এর মধ্যে দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি এবং কারফিউ ও সভাসমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়েছে।আলমাটিতে পুলিশের মুখপাত্র বলেছেন, বৃহস্পতিবার শহরের তিনটি প্রশাসনিক ভবনে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চলছে।

তিনি বলেন, শহরের পুলিশ ভবনগুলোতে ঢোকার চেষ্টা চালানোর পর কয়েক ডজন আক্রমণকারীকে 'নির্মূল' করা হয়েছে। তিনি শহরের লোকদের ঘরে থাকতে বলেছেন।

এই সহিংসতায় প্রায় ১,০০০ লোক আহত হয়েছে। হাসপাতালে ৪০০ লোককে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে এবং ৬২ জন ইনটেনসিভ কেয়ারে আছেন।এর আগে গতকাল কাজাখস্তানের সহিংস বিক্ষোভ দেশটির বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ার মধ্যেই খবর পাওয়া যায় যে নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্য বিক্ষোভকারীদের সাথে যোগ দিচ্ছে।

মধ্য এশিয়ার এই দেশটিতে কি ঘটছে তার স্পষ্ট চিত্র পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে । মনিটরিং গ্রুপগুলো বলছে, সারা দেশ জুড়ে তাদের ভাষায় "ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট" কার্যকর করা হয়েছে ।প্রধান শহর আলমাটির বিমানবন্দরসহ বেশ কিছু সরকারি ভবনের নিয়ন্ত্রণ বিক্ষোভকারীরা দখল করে নেয় বলেও খবর পাওয়া যায়। বিমানবন্দরের কর্মীরা বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে রেহাই পেতে পালাতে বাধ্য হন।

আলমাটিতে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। পশ্চিমের আকতোবে শহরে জলকামান ব্যবহার করা হয়েছে।এর আগে কাজাখ প্রেসিডেন্ট কাসিম জোমার্ট তোকায়েভ বিক্ষোভের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবার হুমকি দেন।

তিনি এক টিভি ভাষণে বলেন, তিনি দেশটির সাবেক নেতা নূরসুলতান নাজারবায়েভের কাছ থেকে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধানের দায়িত্ব নিয়ে নেবেন।জ্বালানি তেলের দাম দ্বিগুণ বাড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ শুরু হয়। এর পর বড় শহরগুলোতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।সংবাদদাতারা বলছেন, কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রিত দেশটিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দুর্নীতি, অসাম্য এবং রাজনৈতিক স্থবিরতার বিরুদ্ধে গভীর অসন্তোষ রয়েছে।

উনিশশো একনব্বই সালে কাজাখস্তান স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর থেকে কাসিম জোমার্ট তোকায়েভ হচ্ছেন দেশটির দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট। তবে বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভের আসল লক্ষ্য হচ্ছেন তার পূর্বসুরী নূরসুলতান নাজারবায়েভ।

তিনি পদ ছেড়ে দেবার পরও একটি ক্ষমতাশালী জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত পদে আসীন ছিলেন। তবে অসন্তোষ প্রশমিত করার জন্য গত বুধবার মি. নাজারবায়েভকে বরখাস্ত করা হয় এবং পুরো সরকার পদত্যাগ করে।বিক্ষোভকারীদের নাজারবায়েভের নামে শ্লেগান দিতে শোনা গেছে, এবং তালদিকোরগান শহরে তার একটি ব্রোঞ্জের মূর্তি একদল লোক ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছে বলে একটি ভিডিওতে দেখা গেছে।

সূত্র : বিবিসি